ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্যামির হুঙ্কারের জবাবে ধেয়ে এল শাস্ত্রীয় গর্জন

প্রকাশিত: ১৮:১৮, ৩১ মার্চ ২০১৬

স্যামির হুঙ্কারের জবাবে ধেয়ে এল শাস্ত্রীয় গর্জন

অনলাইন ডেস্ক ॥ ওয়াংখেড়ে সন্ধের আজ ম্যাচটা ঠিক কী? ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজই তো? দু’টো শিবিরের গনগনে মেজাজ, তাপ-উত্তাপ দেখে তো মনে হচ্ছে মুম্বইয়ে ভারত বনাম পাকিস্তান হচ্ছে! তা-ও শাহিদ আফ্রিদির ‘সম্প্রীতির’ পাকিস্তান নয়, এ যেন একেবারে জাভেদ মিয়াঁদাদ, সেলিম মালিকদের আমলের! দুপুর একটার ক্যারিবিয়ান অধিনায়ককে দেখুন। পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য ক্রিকেট-পৃথিবীতে ডারেন স্যামির একটু নামডাক আছে ঠিকই, কিন্তু কস্মিনকালেও তিনি ক্রিস গেইল নন। অথচ কথাবার্তায় আক্রোশের ছাপ এতটাই যে, সময়-সময় মনে হবে ইনি বোধহয় গেইলকেও ‘বাপি বাড়ি যা’ করে ফেলে দেবেন! চিবিয়ে-চিবিয়ে যিনি অক্লেশে শুনিয়ে গেলেন, “সবাইকে বলতে শুনছি সম্ভাবনা নাকি আশি-কুড়ি। লড়াইটা নাকি ডেভিড বনাম গোলিয়াথ। তা, সে লড়াইয়ের শেষে কী হয়েছিল লোকে ভুলে গিয়েছে। গোলিয়াথ কিন্তু জেতেনি। জিতেছিল ডেভিড!” ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক লোককথার উদাহরণ টেনে কাকে ডেভিড আর কাকে গোলিয়াথ বোঝাতে চাইলেন, মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। আর ব্যাপারটা এখানে শেষ হয়ে গেল ভাবলে ভুল হবে। আড়াই ঘণ্টা এগিয়ে যান, দুপুর সাড়ে তিনটে এখন, ওয়াংখেড়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে স্যামির জায়গায় রবি শাস্ত্রী। ভারতীয় টিম ডিরেক্টরকে জিজ্ঞেস করা হল স্যামি কথিত ‘ডেভিড’-দের ‘গোলিয়াথ’ নিয়ে। ক্যারিবিয়ান দৈত্যের ভারতীয় বোলারদের ওড়ানোর আগাম গর্জন নিয়ে। শোনামাত্র শাস্ত্রী যে ব্যারিটোনে ‘‘ব্রিং ইট অন। আমার সব বোলাররাও ওকে টার্গেট করবে” বলে পাল্টা হুঙ্কার তুললেন, তাতে আসন্ন মহাযুদ্ধের উত্তেজনা নিয়ে যতটুকু যা সংশয় মনে থাকবে, কেটে যাওয়া উচিত। সোজাসুজি বললে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বৃহস্পতিবারের ওয়াংখেড়েকেই চাঁদমারি বানিয়ে এগোতে চাইছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে আসার আগে কম নাটক সহ্য করতে হয়নি টিমটাকে। দেশজ বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে প্লেয়ারদের তুলকালাম। কায়রন পোলার্ডদের শেষ পর্যন্ত বিশ্বযুদ্ধের মঞ্চ থেকে নাম তুলে নেওয়া। টিমের এক নম্বর স্পিনার সুনীল নারিনের অ্যাকশনজনিত সমস্যার কারণে টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়ানো। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো রাজসূয় যজ্ঞের আগে একটাও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ না পাওয়া। ভোগান্তি, ঝড়-ঝাপটা কম যায়নি টিমটার উপর দিয়ে। আর যত গিয়েছে, স্যামিদের তত যেন মনে হয়েছে পুঞ্জীভূত ক্ষোভটা প্রতিপক্ষের উপর বার করার কথা। প্রতিশোধ নিয়ে, বিপক্ষকে পিষে ফেলে। বিশ্বযুদ্ধের বাইরে আর এক আলাদা যুদ্ধ যেন। ধোনির ভারত যে যুদ্ধের সেরা ও অদ্বিতীয় প্রতিপক্ষ। ভাবা যায়, যে বিরাট কোহালি লন্ডন থেকে লাহৌর, গুজরাত থেকে গুয়াতিমালার শংসাপত্র মিনিটে-মিনিটে পেয়ে চলেছেন, তাঁর জন্য কি না দু’একটার বেশি প্রশংসাবাক্য বরাদ্দ রাখলেন না ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক! বরং কোহালির ফর্ম নিয়ে প্রশ্নে ব্যাঙ্গাত্মক ধ্বনিই প্রতিধ্বনিত হল যখন স্যামি বললেন, “বিরাটের ফর্ম নিয়ে খুব বেশি চিন্তায় নেই। ক্রিস গেইলের নামটা শোনা আছে তো?” সহাস্যে কথাটা উপবিষ্ট সাংবাদিকদের দিকে ছুড়ে দিলে কী হবে, এটা যে আদতে তা নয়, নির্বোধেও বুঝবে। “বিরাটের থেকে কিছু কেড়ে নিচ্ছি না। ও খুব ভাল প্লেয়ার। কিন্তু আমরা আমাদের নিজেদের কাজ, নিজেদের ড্রেসিংরুমের উপরই ফোকাস করছি।” ক্যারিবিয়ান ক্যাপ্টেনের মুখ থেকে পরবর্তী কয়েক মিনিটে যেগুলো এল, তার কোনওটা হাজার বিরোধিতার বিরুদ্ধে চাপা প্রতিরোধের গোঙানি। কোনওটা শাসানি। স্যামি বললেন, “আমাদের টি-টোয়েন্টি টিমটাকে নিয়ে কম কথা হয়নি। কেউ ভাবেনি আমরা এই জায়গায় আসব। এ ব্যাপারগুলো আমাদের পনেরো জনকে এককাট্টা করে দিয়েছে। আপনারা যে খেলাটা আমাদের দেখছেন, জানবেন সেই ম্যাচগুলোকে আমরা দেখেছি বিশ্বের বিরুদ্ধে আমরা। আমাদের পনেরো জনের টিমটার মধ্যেই আমরা সীমাবদ্ধ। আমরা সেটা ভেবেই নেমেছি, খেলেছি। আর এটা ভাল করে বোঝানোর জন্য ভারত ম্যাচের চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে?” স্যামি বলে দেন, “আমরা পিচ নিয়ে ভাবছি না। ওয়াংখেড়েতে ভারতের পক্ষে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ভাবছি না। আমি শুধু বলতে চাই, আমরা নিজেদের সেরা খেলাটা এখনও খেলিনি। বলতে চাই, কাল একটা দারুণ ম্যাচ হোক, যেখানে জিতুক ক্রিকেট। মানে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ!” ভারতও বা কম কী বলল? শাস্ত্রীও শুনিয়ে গেলেন, তাঁর টিমও এখনও নিজেদের সেরাটা খেলেনি। উদাত্ত ডাক দিলেন রোহিত-ধবনদের সেমিফাইনাল মঞ্চে জ্বলে ওঠার। বললেন, “ওয়াংখেড়েতে ওদের আমার চাই। শুধুমাত্র একজন প্লেয়ারের উপর নির্ভর করে চললে এ ম্যাচে হবে না। ছ’সাত জনকে একসঙ্গে দায়িত্বটা নিতে হবে।” বুঝিয়ে দিলেন, ডারেন স্যামির টিমকে তিনি সম্মান করবেন। টুর্নামেন্টের ভয়ঙ্করতম টিম হিসেবে ভাববেন। কিন্তু তাই বলে নিজেরা গুটিয়ে থাকবেন না। সর্বোপরি, বিপক্ষের এক নম্বর মারণাস্ত্রকে খোলাখুলি যুদ্ধের আহ্বান। যেন বলে দেওয়া— এসো গেইল, তোমার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। দেখি তুমি কী করতে পারো! শুনলে মনে হবে, ভারত বনাম বাংলাদেশ যদি দেখে থাকে এমএস কিপার ধোনির চাতুর্যের জয়, ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া যদি দেখে থাকে বিরাট-ঐশ্বর্যের একক ঝলকানি, তা হলে বৃহস্পতিবারের ওয়াংখেড়ে দেখবে চরম হানাহানি। এক দিকে বিশ্বের থেকে প্রাপ্য পাওনাগণ্ডা বুঝে নিতে চাওয়া মরিয়া এক টিম। অন্য দিকে, অমিত শক্তিধর এগারো, যারা অবতীর্ণ হবে কাপ-স্বপ্নের শেষ সিঁড়িটায় পা দেওয়ার লক্ষ্যে। ফেভারিট হিসেবে যাদের ছাড়া ভারতবাসীর আর কাউকে মাথায় আসছে না, ইডেনের ভিকট্রি ল্যাপে যাদের বাদে আমজনতা আর কাউকে দেখছে না। আরব সাগর তীরে সত্যিই আজ ডেভিড বনাম গোলিয়াথ। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×