ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সহপাঠী হত্যা

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ১ এপ্রিল ২০১৬

সহপাঠী হত্যা

শিক্ষার্থীর মূল কাজই হলো অধ্যয়ন। প্রাচীনকাল থেকেই বলা হয়ে আসছে, ‘ছাত্রং অধ্যয়নং তপঃ।’ শিক্ষিত ও সম্পন্ন মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলাই তার ব্রত। শিক্ষাকে সাধনা হিসেবে অন্তরে ধারণ করে শিক্ষিত হয়ে ওঠার মধ্যেই তার বিকাশ। যে শিক্ষা জ্ঞানের আলো ছড়ায়, মানুষকে দেখায় সঠিক পথ, সমাজকে করে অগ্রসর সেই শিক্ষার বিস্তার একজন শিক্ষার্থীকে করে তোলে মানবিকবোধসম্পন্ন, সৎ, কর্মনিষ্ঠ, সত্যনিষ্ঠ, বিশ্বস্ত এবং মানুষের প্রতি সহমর্মী। বিদ্যা মানুষকে উন্নত জীবনের পথ দেখায়। সহনশীল হবার জোগায় প্রেরণা। জ্ঞানের মশাল হাতে শিক্ষার্থীরা অন্ধকারকে ভেদ করে এগিয়ে যাবার শপথে বলীয়ান হবেÑ এমন প্রত্যাশাই সর্বাধিক। মানুষ হয়ে ওঠার জন্য জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর বিকল্প নেই। কিন্তু শিক্ষা যদি হয় বাণিজ্যের উপকরণ, বৈষয়িক সুবিধা অর্জনের পন্থা, মানুষকে হেয় করা, অমানবিক আচরণে লিপ্ত হওয়া, অসহিষ্ণুতার বিষবাষ্প উদ্গীরণের ক্ষেত্র, তবে ভয়াবহ অন্ধকারই সামনে এসে দাঁড়ায়। শিক্ষা আর অধিকার নয়, শিক্ষা কেবলই বিনিয়োগ, তখন অর্থের মাপকাঠিতে সবকিছুকেই যেন বিবেচনা করা হয়। আর এতে বৈষম্য যেমন বাড়ে, তেমনি ভেদাভেদও তৈরি হয়। শিক্ষার উৎকর্ষের জন্য যা প্রতিকূল, তা দূরীভূত করার প্রচেষ্টা অত্যন্ত ক্ষীণ। যদিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক পরিবেশ শিক্ষায় যথার্থ উৎকর্ষের আবশ্যিক শর্ত হিসেবে প্রতীয়মান হয়ে থাকে। স্বাধীন চিন্তা এবং অবাধ বিতর্কের পরিবেশ না থাকলে ছাত্রছাত্রী, গবেষক ও শিক্ষকরা কোন দেশে কখনই মৌলিক চিন্তার পথে অগ্রসর হতে পারে না। উচ্চশিক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা পশ্চিম ইউরোপের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের একটি প্রাথমিক কারণ এই স্বাধীনতা। বিপরীত দিক হতেও তার প্রমাণ রয়েছে। উচ্চশিক্ষায় বিপুল বিনিযোগ ও নানাবিধ রাষ্ট্রীয় প্রেরণা ও উৎসাহ সত্ত্বেও উদ্ভাবনী গবেষণার সাফল্যে চীন আজও রীতিমতো পশ্চাৎপদ। সে দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও শিক্ষাবিদরা অধুনা টের পাচ্ছেন, কঠোর বিধিনিষেধের নিগড়ে নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থায় দক্ষ কারিগর তৈরি করা যায়, সমৃদ্ধ চিন্তা সৃষ্টি করা যায় না। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাস ক্ষমতাবানদের আধিপত্যের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হলে, তা উচ্চশিক্ষার বিকাশের সম্ভাবনাকে অনায়াসে বিনাশের পথে নিয়ে যেতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্ত স্বাভাবিক স্বাধিকার খর্ব হতে পারে। যা শিক্ষার উৎকর্ষেরও প্রতিকূল। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত বেসরকারী প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিপক্ষ শিক্ষার্থীর ছুরিকাঘাতে একজন ছাত্রের নিহত হবার ঘটনা এবং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভাংচুরসহ জনজীবনে ভোগান্তি সৃষ্টি কোন সুস্থ ধারার পরিচায়ক নয়। বরং অন্ধকারের গহ্বরে পতিত হবার এক অধ্যায় যেন। শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এই হত্যার ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কে হবেন, তা নির্ধারণের দায়িত্ব শিক্ষক, সিন্ডিকেটের হলেও এ ক্ষেত্রে ছাত্ররা তা মান্য না করে নিজেরাই নিজেদের পছন্দের অতিথি নির্ধারণ করতে গিয়ে হানাহানিতে লিপ্ত হয়। সাবেক মেয়র ও বর্তমান মেয়রের ‘অনুসারী’ ছাত্ররা বিবাদে লিপ্ত হওয়ার এক পর্যায়ে খুনের দৃশ্যপটও রচনা করে। রাজনীতির অন্ধকারাচ্ছন্ন এই একটি দিক বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অকারণেই কলুষিত করেছে। অনুষ্ঠান আয়োজক গ্রুপের শিক্ষার্থীরা এমনভাবে অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে খুনোখুনিতে নামবেÑ ভাবা যায় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি খুনী তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করে, তবে সেই প্রতিষ্ঠান সুস্থ ধারার বিকাশ ঘটাতে পারে না। সহপাঠী হত্যার ঘটনাগুলো অচিরেই বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ বাঞ্ছনীয়।
×