ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শাওন রহমান

আল্পনার সাজে বাংলার বৈশাখ

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ১ এপ্রিল ২০১৬

আল্পনার সাজে বাংলার বৈশাখ

পুরাতনকে বিদায় দিয়ে নতুনের স্বপ্ন রচনা করতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বৈশাখী গান গেয়ে নতুন বাংলা বছরকে স্বাগত জানাই আমরা। মিষ্টি মুখ, পান্তা ইলিশ আর নতুন দেশী পোশাকে আমরা এই দিনটিতে একদিনের জন্য হলেও পুরো বাঙালী হয়ে যাই। পহেলা বৈশাখ আর পান্তা ইলিশ যেন সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈশাখী মেলার প্রধান আকর্ষণ এখন পান্তা ইলিশ। তাও আবার মাটির সানকিতে। এখন তো অনেকে নিজের বাড়িতেই এই বিশেষ খাবারের আয়োজন করছে। আর এ কারণেই বৈশাখ আসার আগেই ইলিশের দাম চলে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। পহেলা বৈশাখ বাঙালীর সর্বসেরা উৎবের দিন। পুরাতনকে ভুলে নতুনকে আলিঙ্গন করার দিন। এদিন গোটা বাঙালী আলোড়িত হয়, আন্দোলিত হয়। সবচেয়ে রঙচঙে ও আনন্দঘন নববর্ষ উদ্যাপিত হয় ঢাকায়। হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয় রমনার বটমূলে। ছায়ানটের শিল্পীরা বৈশাখের আগমনী গান গেয়ে স্বাগত জানায় নববর্ষকে। নতুন স্বপ্ন, উদ্যম ও প্রত্যাশার আলোয় রাঙানো নতুন বাংলা বছর আসতে যাচ্ছে আবারও নতুন করে নতুন সাঝে। সকল না পাওয়ার বেদনাকে ধুয়ে-মুছে, আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতিকে অগ্নিস্নানে শুচি করে তুলতেই আবার এসেছে পহেলা বৈশাখ। বর্ষবরণের উৎসবের আমেজে মুখরিত থাকবে বাংলার চারদিক। গ্রীষ্মের তেজও কাল হয়ত বাতাসে লকলক করে নেচে উঠবে। তারপরও বাঙালী এই খরতাপ উপেক্ষা করে মিলিত হবে তার সর্বজনীন এ উৎসবে। দেশের প্রতিটি পথে-ঘাটে, মাঠে-মেলায়, অনুষ্ঠানে থাকবে কোটি মানুষের প্রাণের চাঞ্চল্য, আর উৎসব মুখরতার। কারণ আসছে বাঙালীর আনন্দের দিন পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের পহেলা বৈশাখ সত্যিকার অর্থেই বাঙালীদের প্রাণের উৎসব। কারণ এই উৎসবে কোন বিদেশীপনা নেই। শুধু আছে বাঙালীর নিজস্ব ঐতিহ্য, আত্ম-পরিচয় ও আপন উপাদান। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে আমরা কি করি? আমরা বর্ষার দিনে যেমন খিচুরি-ইলিশ খাই, তেমনি পহেলা বৈশাখে পান্তাভাত খাই ইলিশ, আলুভর্তা, কাঁচা পেঁয়াজ আর শুকনা মরিচ ভাজা দিয়ে। আরও খাই কদমা, বাতাশা, খোরমা, তিলের নাড়ু, নারিকেলের নাড়ু, মুড়ির মোয়া, খৈয়ের মোয়া নাড়ু, চিড়ার মোয়া, পাপর ভাজা, ঘুঘনি ও নানান ধরনের পিঠা-পুলি, দই, মাঠা ইত্যাদি। এ ছাড়া বর্তমান সময়ে আইসক্রিম, কোমল পানীয় এই দিনের খাদ্য তালিকায় যুক্ত হয়েছে বিশেষ করে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের এগুলো পছন্দ। এ ছাড়া প্রায় সকল ঘরে বিশেষ ধরনের খাবার তৈরি করে খেতে দেখা যায়। এই সময়ে দেখা যাচ্ছে, ছেলেমেয়েসহ বাবা-মায়েরা বিশেষ করে ঢাকায় ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত পহেলা বৈশাখের নানান সঙ্গীতানুষ্ঠান দেখে ও শোনে। তাদের কেউ বড় বড় হোটেলে বা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বিশেষ ধরনের খাবার খেয়ে আনন্দ করে। পোশাকের ক্ষেত্রে পহেলা বৈশাখে বাঙালীদের মধ্যে দেখা যায় এক নতুন আমেজ। গ্রামে পুরুষেরা নতুন লুঙ্গি ও গামছা এবং মেয়েরা নতুন শাড়ি পরার চেষ্টা করে। শহরে ছেলেরা নতুন ফতুয়া, পাঞ্জাবি, পায়জামা, স্যান্ডেল আর মেয়েরা নতুন শাড়ি, নতুন সেলোয়ার-কামিজ পরে। ইদানীং ঢাকায় নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে উভয় শ্রেণীর মানুষের জন্য নানান রঙের ও বর্ণের পোশাক তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনকারী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষেরা পোশাক কেনা ও তা পরে পুরো পরিবার রমনার বটমূল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এসে সারাদিন গান-বাজনা শোনা, ঘোরাফেরা করা, টমটমে চড়া, নানা ধরনের খাবার কিনে খাওয়া প্রভৃতি করে থাকেন। যে কারণে এসব বিষয়গুলো মাথায় রেখে ফ্যাশন হাউসগুলো সাজে অনন্য মহিমায়। প্রায় প্রতিটি হাউসেই এখন দেখা মিলবে বৈশাখী শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ, টপস ও টি-শার্ট। দামও হাতের নাগালে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাজুড়ে নানান ধরনের পসরা সাজিয়ে বসে বিভিন্ন পেশার চারু ও কারুশিল্পীরা। বাংলা একাডেমি সাত অথবা পনেরো দিনব্যাপী আয়োজন করে কারু শিল্পমেলা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিল্পীরা তাদের নান্দনিক পসরা নিয়ে মেলায় আসে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বাউল গানের পাশাপাশি পিঠা উৎসবের আয়োজন করে। পৃথিবীর যেখানেই বাঙালী ও বাংলা ভাষাভাষী মানুষ রয়েছে, সেখানেই বর্ণাঢ্য উৎসবের পালিত হবে পহেলা বৈশাখ। ছবি : সাগর আহমেদ মডেল : ইমি ও আমির পোশাক : কে ক্র্যাফট মেকআপ : পারসোনা
×