ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে, কতটা ভোটসর্বস্ব হলে একটা উড়ালপুলকে ভেঙে পড়তে দেওয়া যায়

প্রকাশিত: ১৮:৪৩, ১ এপ্রিল ২০১৬

কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে, কতটা ভোটসর্বস্ব হলে একটা উড়ালপুলকে ভেঙে পড়তে দেওয়া যায়

অনলাইন ডেস্ক ॥ আর্তনাদক্লিষ্ট এই দিনের শেষে অন্য ভাবে কথাটা শুরু করা যাক। নির্বাক থাকা উচিত ছিল। অনৌচিত্যই যেখানে নিয়ম, সেখানে কথাটা বলাও দরকার। মনে করে দেখুন, ‘রং দে বসন্তী’র সেই গল্পটা। মিগ বিমানের দুর্ঘটনা ঘটেছিল সেখানে। নিতান্তই দুর্ঘটনা হিসেবে প্রতিভাত হতে পারত যা, অন্তত কয়েক জনের অনন্ত জিজ্ঞাসা তাকে ভুল প্রমাণ করেছিল। জানিয়েছিল, ওই ম়ৃত্যুর জন্য দায়ী কোনও দুর্ঘটনা নয়, দায়ী সর্বতোবিস্তারি অবাধ দুর্নীতি। কলকাতার রৌদ্রকরোজ্জ্বল এক দুপুরে পরম নিশ্চিন্তে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন যাঁরা, আচমকা ভেঙে পড়া এক উড়ালপুল যে জীবনগুলোতে আচমকাই দাড়ি টেনে দিল, যে পরিবারগুলোর জীবনের গতি হঠাত্ই অনিশ্চিত এক বাঁকের মুখে পড়ে গেল, সব কিছু শূন্য হয়ে গেল যাঁদের, চলুন আজ তাঁদের প্রশ্নের মুখে দাঁড়াই। চলুন, স্বজনহারা ওই মহিলার দিগন্তভেদী আর্তনাদের মুখোমুখি হই। কার দোষে অথবা কার স্পর্ধায়, কার দায়িত্বজ্ঞানহীনতায়, কার কুছ পরোয়া নেই ভঙ্গিতে, তিনটে ট্যাক্সি চাপা পড়ে গেল কংক্রিটের নীচে? একটা মিনিবাসসুদ্ধ অসংখ্য মানুষ চাঙড়ের তলায় চলে গেল? সুস্থ শান্ত একটা দুপুরের উপর আচমকাই হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেল একটা আস্ত উড়ালপুল! কে দায়ী? ভোটের মুখে অজস্র চাপানউতোর। অজস্র বাগ্‌যুদ্ধ, অসংখ্য লড়াই প্রতি লড়াই এখন। কুরুক্ষেত্রীয় এই প্রান্তরে অনেক শব এবং আরও অনেক আহতকে ঘিরে এখন প্রেতনৃত্য। ভোট এসে গিয়েছে, অতএব চাপানউতোর, অতএব টানাপড়েন, অতএব ক্ষতিপূরণের ঘোষণা, অতএব দোষারোপের পালা! ভোট এসেছে, অতএব মুহুর্মুহু নেতাদের সমবেদনামূলক রাজনৈতিক আনাগোনা। অতএব মুখ্যমন্ত্রী, অতএব মন্ত্রী, এতএব মেয়র এবং অতএব অনায়াস নিরাবেগ মুখের দিনভর সঞ্চালন। সে মুখে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা, তদন্তের প্রতিশ্রুতি, দোষীদের শাস্তির আশ্বাস। হৃদয় নেই! সেই রাজাকেই নির্বাচন কোরো, যাঁর শাসনে নিশ্চিন্তে নিদ্রা যাওয়া যায়— প্রাচীন এই লোককথা আরও এক বার প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে। সরকার দায়িত্বে ছিল, নাকি বেসরকারি সংস্থা, এটা বোঝার দায় প্রান্তিক ওই মানুষের নয়। ওই দেখুন, যাঁর বুকের মধ্যে এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গেল কংক্রিট, তাঁর নিকট জনের ভাবনায় ভাবুন এক বার। নিশ্চিন্তে ছিলেন তিনি। যেখানে যা কিছু ঘটুক, তাঁর সরকার আছে। সরকারকেই বোঝাতে হবে তার অস্তিত্বের মাহাত্ম্য। কতটা অপদার্থ হলে, কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে, কতটা ভোটসর্বস্ব হলে, কতটা আত্মকেন্দ্রিক হলে একটা উড়ালপুলকে ভেঙে পড়তে দেওয়া যায়! প্রতিটি কার্যের যদি কারণ থেকে থাকে, তবে সেই কারণের পিছনেও অন্যতর কোনও কারণ থাকে। আজ, এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে অনেক মৃতদেহের মাঝখানে বসে সরকারের উদ্দেশে এই প্রশ্নটা সরাসরিই ছুড়ছি। এই উড়ালপুলকে ভেঙে পড়তে দেওয়া হল ঠিক কী কারণে, সরকার বাহাদুর? সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×