ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রং তুলির মাঝেই জীবন বাচাঁর স্বপ্ন চিত্রশিল্পী সোলায়মানের মানবেতর জীবন

প্রকাশিত: ০০:৪৪, ১ এপ্রিল ২০১৬

রং তুলির মাঝেই জীবন বাচাঁর স্বপ্ন চিত্রশিল্পী সোলায়মানের মানবেতর জীবন

সংবাদদাতা, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর ॥ মোহাম্মদ সোলায়মান । বয়স ৫০। ছোট বেলায় স্বপ্ন ছিল তিনিও একদিন দেশের বড় চিত্র শিল্পী হবেন। কিন্তু অল্প শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বেশী দুর যেতে পারেননি তিনি। সে কারনে গত ৪৩ বছর ধরে দুঃখ-কষ্ট নিয়ে রং তুলির মাঝেই জীবন বাচাঁর স্বপ্ন দেখে চলেছেন তিনি। অভাব তাকে পিছু না ছাড়লেও রং তুলিকে ছেড়ে দিতে পারেননি। তিনি এখন নিজ এলাকা লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার স্কুলে স্কুলে ছবি একে সময় পাড় করছেন। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে শিশু নিকেতন নামে একটি স্কুলে গেলে কথা হয় এ গুনী শিল্পির সাথে। সোলায়মান জানান, উপজেলার বামনী ইউনিয়নের কলাকোপা গ্রামের নজির আহম্মদের ছেলে তিনি । বাবা-মা উভয়েই বেঁচে আছেন। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে এবং তিন ভাই ও দু’বোন । ছেলেটি অনার্স পাশ করে একটি মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। মেয়েটি বিবাহিত। ছোট বেলায় রং তুলির কাজ শিখতে কক্সবাজার চলে যান। সেখানে ঝাউতলা নামক স্থানে ছোট ভাইকে নিয়ে একটি ছবি আকার দোকান দেন। ২৫ বছর সেখানেই কাটিয়ে দেন। যেখানেই অনুষ্ঠান সেখানেই রং তুলি নিয়ে ছুটে যেতেন সোলায়মান। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা উৎসাহ নিয়ে নিজের ছবি আঁকতে আসতেন তাঁর দোকানে। এভাবেই ছবি আকার প্রতি নেশা জেকে বসে তার। নিজের সংসার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া সব কিছু চলত দোকানের আয় দিয়ে। কিন্তু এত অল্প আয়ে সংসার না চলায় বাধ্য হয়ে দোকান গুটিয়ে চলে আসেন নিজ গ্রামে। বৃহস্পতিবার উপজেলা শিশু নিকেতন স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালে ছবি আকায় মগ্ন তিনি। কোন প্রশিক্ষিত শিক্ষকের সানিধ্য না পেলেও নিজ চেষ্টায় ৪৩ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন। এখানে উপজেলার স্কুলে স্কুলে গিয়ে ছবি বিদ্যালয়ের শোভা বর্ধন করাসহ দেয়ালে ছবি আকেন। প্রতিটি স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীরা আনন্দে উদ্বেলিত তার এসব ছবি দেখে। কয়েকদিন আগে এ শিল্পীর আকাঁ চিত্র কর্ম দেখে মুগ্ধ হয়ে জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান মাস্টার আলতাফ হোসেন হাওলাদার, ইউএনও শারমিন আলম, এসিল্যান্ড শঅমিম হোসেনসহ গন্যমান্য ব্যাক্তিগন তার ভূয়ষী প্রসংসা করেন। সুন্দর আর নিখুত কাজের এ কারিগর প্রশংসা পেলেও মাত্র তিন থেকে চার হাজার টাকায় সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। সরকার অথবা বিত্তবানদের সহযোগীতা পেলে একটি দোকান দিতে পরতো বলে তার আশাবাদ। রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আলম বলেন, আদর্শ শিশু নিকেতনের দেয়ালে শিল্পি সোলায়মানের আকাঁ ছয়টি ঋতুর ছবি দেখে জেলা প্রশাসকসহ আমরা সবাই মুগ্ধ। এগুণী শিল্পিকে বাঁচিয়ে রাখ‍া প্রয়োজন। তাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সর্বাত্বক সহযোগীতা করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
×