ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দাবি ফাউন্ডেশন প্রধানের

রিজার্ভের দু’কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায় শালিকার এ্যাকাউন্টে জমা হয়েছিল

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২ এপ্রিল ২০১৬

রিজার্ভের দু’কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায় শালিকার এ্যাকাউন্টে জমা হয়েছিল

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হয়ে যে দুই কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিল, তা এক বন্ধুর মাধ্যমে শালিকা ফাউন্ডেশনের এ্যাকাউন্টে জমা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন কথিত ওই বেসরকারী সংস্থার প্রধান হ্যাগোডা গ্যামেজ শালিকা পেরেরা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে তিনি দাবি করেছেন, শ্রীলঙ্কায় একটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণসহ কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) কাছ থেকে ওই অর্থ তাকে এনে দেয়ার কথা বলেছিলেন এক বন্ধু। বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া টাকা থেকে ওই অর্থ আনা হয়েছিল কিনা, সে বিষয়ে তার কোন ধারণা নেই। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ইতিহাসের অন্যতম বড় এই রিজার্ভ চুরির ঘটনা গত ৪ ফেব্রুয়ারি ঘটলেও বিষয়টি আলোচনায় আসে ফিলিপিন্সে ওই টাকার একটি অংশ নিয়ে তদন্ত শুরুর পর। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে গচ্ছিত বাংলাদেশের রিজার্ভের ১০০ কোটি ডলার চুরির চেষ্টায় ৩৫ ভুয়া অনুরোধ পাঠায় হ্যাকাররা। এর মধ্যে ত্রিশটি আটকে গেলেও একটিতে ওই দুই কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কার প্যান এশিয়া ব্যাংকে, পেরেরার শালিকা ফাউন্ডেশনের এ্যাকাউন্টে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে ওই অর্থ শ্রীলঙ্কায় পৌঁছায় ডয়েচ ব্যাংকের হাত ঘুরে। তাদেরই সন্দেহে শেষ পর্যন্ত শালিকার এ্যাকাউন্টের ওই অর্থ আটকে যায়। অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধে প্রাপকের জায়গায় ‘ফাউন্ডেশন’ বানান ভুল থাকায় ডয়েচ ব্যাংক বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল। এর মাধ্যমেই বেরিয়ে আসে অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধটি ছিল ভুয়া। অবশ্য আরও চারটি অনুরোধে ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ততক্ষণে ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের চারটি এ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যায়। অল্প সময়ের মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তরিত হয়ে ক্যাসিনোর মাধ্যমে পাচার হয়ে যায় এর একটি বড় অংশ। ফিলিপিন্সের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই অর্থ জালিয়াতির ঘটনায় দেশটির সিনেট কমিটিতে শুনানি হচ্ছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় অর্থ পাচারের চেষ্টা নিয়ে তথ্য পাওয়া গেছে সামান্যই। শ্রীলঙ্কার আদালত শালিকা ফাউন্ডেশনের ছয় পরিচালকের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ ঘটনায় মামলাও হয়েছে। দেশটির পুলিশ আদালতকে বলেছে, নিম্ন আয়ের পরিবারকে সহায়তার নামে ২০১৪ সালে শালিকা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে ব্যাংকে জমা দেয়া নথিপত্রে। কিন্তু কলম্বোর যে বাড়ির ঠিকানা সেখানে দেয়া হয়েছে, তা বন্ধ পাওয়া গেছে। ওই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগের অন্য কোন মাধ্যমও পাওয়া যায়নি। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার ব্যবসায়ী পেরেরা তাদের সঙ্গেই প্রথম এ বিষয়ে কথা বলেছে। তিনি দাবি করেছেন, তাকে বলা হয়েছিল, জাইকা তার প্রকল্পে ওই দুই কোটি ডলার দিচ্ছে। ওই টাকা যে এ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে, তাও তিনি জানতেন। তবে জাইকার সঙ্গে তার ‘সরাসরি’ যোগাযোগ হয়নি। পুরো বিষয়টি ঠিকঠাক করে দিয়েছেন তার এক ব্যবসায়ী বন্ধু, যার সঙ্গে জাপানের ‘ভাল যোগাযোগ’ আছে। রয়টার্স জানিয়েছে, পেরেরার বক্তব্য যাচাই করে দেখা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। যে বন্ধুর কথা তিনি বলছেন, তার ফোন নম্বর ও ই-মেল ঠিকানা তিনি দিলেও সেই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। জাপান সরকারের উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা জাইকা বলছে, শালিকা ফাউন্ডেশন নামে কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন ধরনেই সম্পর্কই নেই। জাইকার মুখপাত্র নাওইয়োকি নেমোতো রয়টার্সকে বলেছেন, তাদের সঙ্গে আমাদের কোন লেনদেন নেই। ঋণ বা সহায়তার কোন বিষয়ও নেই। ৩৬ বছর বয়সী পেরেরার স্বামী রামায়ঙ্কা আর্চাইজি ডন প্রদীপ রোহিতা ধামকিন নিজেও শালিকা ফাউন্ডেশনের এক পরিচালক। কলম্বোতে পেরেরা যখন রয়টার্সকে ইংরেজী ও সিংহলিজ মিশ্রিত সাক্ষাতকার দেন, তার স্বামীও তখন পাশে ছিলেন। পেরেরা দাবি করেন, তারা খুবই সৎ মানুষ। কোন ধরনের অবৈধ কাজের মধ্যে তারা নেই। তিনি বলেন, তার সেই বন্ধু হয় নিজে হ্যাকারদের শিকার হয়েছেন নয়ত সে নিজেও চোরের দলে যুক্ত বলে এখন তার মনে হচ্ছে। পেরেরা সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের একটি নোট রয়টার্সকে দেখিয়েছেন যাতে লেখা রয়েছে, বাংলাদেশের পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড জাইকার কাছ থেকে ২০১০ সালে ঋণ হিসাবে নেয়া ওই দুই কোটি ডলার পরিশোধ করার পর তা শ্রীলঙ্কায় শালিকার এ্যাকাউন্টে জমা করতে পাঠানো হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন রয়টার্সকে বলেছেন, তাদের কাছ থেকে ওই অর্থ গেছে, এমন চিন্তাই হাস্যকর। তারা হয়ত বিষয়টা বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য সরকারী নাম ব্যবহার করেছে। কলম্বো পুলিশ বৃহস্পতিবার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেয়া একটি প্রতিবেদনে বলেছে, তারা পেরেরার সেই বন্ধুকে এরইমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সেই ব্যক্তি আবার এক জাপানী মধ্যস্থতাকারীর কথা বলেছেন, যিনি সেই তহবিলের যোগাড়যন্ত্র করে দিয়েছেন। রয়টার্স জানিয়েছে, পেরেরার সেই বন্ধুর মতো তার সেই জাপানী মধ্যস্থতাকারীর বক্তব্যও তারা জানতে পারেনি। সেই মধ্যস্থতাকারীকে ফোন করা হলে তিনি বলেছেন, তিনি সফরে আছেন, সুতরাং ওই মুহূর্তে কথা বলতে পারছেন না।
×