বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষায় দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে রূখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হলে শেখ হাসিনা সরকার ঘরে বসে থাকবে, এটা ভাবার কোন কারণ নেই। সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা মানেই পুরো জাতির স্বার্থ রক্ষা করা। তাদের স্বার্থ বিপন্ন করে আমি নিরাপদ থাকব, এটা হতে পারে না। তাই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে, না হলে আমরাও নিরাপদ থাকব না। তাই আসুন- আমরা সবাই মিলে ধর্মীয়, বর্ণীয়, ভাষা, জাতিভেদসহ সকল সংখ্যালঘুর স্বার্থ রক্ষায় আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে রূখে দাঁড়াই।
শুক্রবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন-২০১৬ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা যতই আশা করি, কিছু মানুষ আছে তারা কিন্তু সব সময় কারও কারও প্রতি অবিচার করে। তাই বলে এই না, বাংলাদেশের হিন্দুদের তাদের এই আচরণ সহ্য করতে হবে। একজন হিন্দুকে হিন্দু বলে, একজন খ্রীস্টানকে খ্রীস্টান বলে, একজন গারোকে গারো বলে তার ওপর নির্যাতন করি, আঘাত করি, বাড়ি-ঘরে আগুন লাগাই- এটা কিন্তু কোন সভ্য লোকের কাজ হতে পারে না। আমি এটাকে মানবতা বলব না। এটাকে আমাদের প্রতিরোধ করতেই হবে। শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই শুধু তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করবে, তা নয়। তাহলে আমরা কেন আছি? বাকিরা কেন আছে? মনুষ্যত্ব যদি থাকে, আক্রমণ হোতা যেই হোক না কেন, তার অস্তিত্ব আমাদের অস্বীকার করতে হবে।
‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষায় রুখে দাঁড়াও’- মূল সেøাগানকে সামনে রেখে আয়োজিত দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কাজল দেবনাথ। শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র দে, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির সদস্য সচিব তাপস কুমার পাল। সভা পরিচালনা করেন আয়োজক সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি। সম্মেলনে সারাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যেক পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা যোগ দেন।
সংখ্যালঘুরা সব সময় একটা অস্তিত্বের সঙ্কটে থাকে মন্তব্য করে সৈয়দ আশরাফ আরও বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি এক শ’ ভাগ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন; এটা বলব না। কিন্তু আপনাদের কথা দিতে পারি, এ দেশে কোন রকম ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর কেউ হাত তুলবে আর শেখ হাসিনা ঘরে বসে থাকবেন সেটা হবে না, হবেও না। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কেন আমাদের অস্তিত্ব রুখতে পারব না? এটা শুধু ধর্মীয় সংখ্যাঘুর অস্তিত্বের ব্যাপার, এটা আমি মনে করি না। আমি মনে করি ও বিশ্বাসও করি এটা সমগ্র জাতি এবং আমার নিজের অস্তিত্বের। কারণ তা না হলে দেশের অস্তিত্বই থাকবে না।
সম্মেলনের উদ্বোধন করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর আমাদের নির্বাচন কমিশন। কমিশন ইচ্ছা করলে নির্বাচন বাতিল করতে পারে আবার গ্রহণও করতে পারে। যে কাউকে চাকরিচ্যুত করতে পারে। কিন্তু ইউপি নির্বাচনে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদেরও আত্মাহুতি দিতে হচ্ছে। এদের রক্ষা করতে পারে না আমাদের নির্বাচন কমিশন। এই রকম নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা দিতে তো আমরা আসি নাই।
খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, উনি প্রশ্ন করেছেন বল এখন শেখ হাসিনার কোর্টে। তাই আমাদের নাকি উত্তর দিতে হবে। উত্তর দেয়ার আপনি আগে বলেন কোন বল আমাদের কোর্টে? আপনি তো বড় খেলোয়াড়। কত জায়গায় খেলেন। নওয়াজ শরীফের সঙ্গে খেলেন। কখনও হকি, কখনও ক্রিকেট, কখনও ভলিবল, কখনও ফুটবল। কোনটা খেলতে চান? আর বল বলতে যদি আপনি জাতীয় নির্বাচন চান তাহলে তো নির্বাচন হবেই। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে যথারীতিভাবে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে আপনিও অংশগ্রহণ করবেন। আপনাকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হবে না। শুধু একটা কথা বলি, নওয়াজ শরীফ বা আইএসের কথায় আপনি যে ভুল একবার করেছেন, তা আর কইরেন না।
আদালত অবমাননার দায়ে দুই মন্ত্রীর সাজার প্রসঙ্গ তুলে ধরে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘দুই মন্ত্রী মন্তব্য করেছেন আর উনি (প্রধান বিচারপতি) বলেছেন দেখাইবেন। উনি দেখাইও দিছেন। দুই মন্ত্রী বলছে মাফ চাই, মাফ করে দাও। আপনি প্রধান বিচারপতি, আপনার তাদের মাফ করে দেয়া উচিত ছিল। তা না করে আপনি দেখাইয়া দিছেন। এতে ক্ষতিটা কার হলো?’
জয়ন্ত সেন ও তাপস পাল সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ॥ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে বসে দ্বিতীয় অধিবেশন। সেখানে আলোচনা শেষে জয়ন্ত সেন দীপুকে সভাপতি ও এ্যাডভোকেট তাপস কুমার পালকে সাধারণ সম্পাদক করে আগামী দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।
দ্বিতীয় অধিবেশনে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে সাম্প্রতিক সময়ে সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী ভক্তিনিলয় মহারাজকে (যজ্ঞেশ্বর রায়) গলা কেটে হত্যা, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার গোসাই-গোবিন্দপুরের গোসাইবাড়ির ঐতিহ্যবাহী বিগ্রহ চুরির ঘটনা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় সনাতন সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে আক্রমণ এবং ভাংচুরের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে দোষী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির দাবি জানানো হয়।