ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়েবেলার সুপ্ত বাসনা চল্লিশে দেখছে আলোর মুখ

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২ এপ্রিল ২০১৬

মেয়েবেলার সুপ্ত বাসনা চল্লিশে দেখছে আলোর মুখ

চল্লিশের কোটায় এখন বৃন্দারানী। কাজের পাশাপশি এখনও শিক্ষিত হওয়ার লড়াই করে যাচ্ছেন। তিন সন্তানের সঙ্গে তিনিও শিক্ষার্থী। ২০১৫ সালে খেপুপাড়া মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে কারিগরী শাখায় জিপিএ ৪.৫০ পেয়ে এসএসসি পাশ করেছেন। এখন কলাপাড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। পড়ছেন বাংলা-ইংরেজীর পাশাপাশি পৌরনীতি ও সুশাসন, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, কৃষি শিক্ষা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয় নিয়ে। বয়সের অনেক ব্যবধান থাকলেও নিয়মিত কলেজে আসেন। সবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিবিড়। সংকোচহীন বোঝাপড়া সবার সঙ্গে। কোনদিন কলেজে অনুপস্থিত তো পরদিন এসে সহপাঠীদের খাতা দেখে সব বুঝে নেন। বৃন্দারাণী জানান, তাঁর তিন সন্তান। বড় ছেলে কিশোর চন্দ্র শীল খেপুপাড়া মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রী কলেজের বিএ শিক্ষার্থী। মেজ মুক্তারানী এ বছর কলাপাড়া মহিলা ডিগ্রী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাস করেছে। সবার ছোট তমা দেবী। সেও খেপুপাড়া মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। এ বয়সে লেখাপড়ার বিষয়ে জানান, বাবা অল্প বয়সে বিয়ে দেয়ায় তাঁর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন মনের কষ্ট লুকিয়ে রেখেছেন। সংসার জীবনে এসে ফের শিক্ষার জন্য মনটা চনমন করে ওঠে। ভেবেছিলেন, সুযোগ পেলে ফের লেখাপড়ায় মন দেবেন। জীবন যুদ্ধেও হার না মেনে লড়েছেন- কিছুদিন এনজিওতে চাকরি করেছেন। তখনই শিক্ষার জন্য মনের সুপ্ত বাসনা জেগে ওঠে। পীড়া দেয় নিজেকে। ছেড়ে দেন এনজিওর চাকরি। ইস্পাত কঠিন দৃঢ় মনোবল নিয়ে মঠবাড়িয়ার স্কুলে ভর্তি হন। যেন যুদ্ধে নেমে পড়েন। ছেলে-মেয়েরা পড়ছে, সঙ্গে নিজেও। প্রথমে একটু সংকোচ লেগেছে। এখন আর নেই। মিশন বিএ পাস তিনিই করবেনই। সহপাঠীদের নিজের মেয়ের মতো ভাবেন। তারাও তাঁকে এ কারণে খালা বলে সম্বোধন করে। সবাই সহযোগিতাও করে। শিক্ষকদের উৎসাহ তাঁর জন্য পাথেয়। কলাপাড়া পৌর শহরের নাচনাপাড়া মহল্লায় বেড়িবাঁধের বাইরের ঢালে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস বৃন্দার। বসত ঘরটির বেহাল দশা। স্বামী-সন্তানদের নিয়ে অভাব-অনটনে একরকম মানবেতর জীবনযাপন। স্বামী নির্মল চন্দ্র শীল মাস্টাররোলে খেপুপাড়া পোস্ট অফিসের অধীন শারিকখালী ইউনিয়নের চাউলাপাড়া শাখা পোস্ট অফিসের রানার। তাঁরও হাঁটার পথে প্রতিদিনের কষ্ট। মাস শেষে বেতন বলতে- এক হাজার টাকার সম্মানী। এতে পরিবারের পাঁচ সদস্যের দৈনন্দিন চাহিদা মেটে না। বাড়তি আয়ের জন্য ঘরে বসে বৃন্দা ‘কাগজের ঠোঙা’ বানান। তা দোকানে বিক্রি করে যা আয় হয়। সংসারে আয়ের খাতে তা যোগ হয়। তবে জীবনযুদ্ধে এ লড়াইয়ের পাশে শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়েননি। Ñমেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া থেকে
×