ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্বিসহ নাগরিক জীবন

গলাচিপা পৌর শহরের পানি ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২ এপ্রিল ২০১৬

গলাচিপা পৌর শহরের পানি ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ প্রাকৃতিক জলাধারগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত সংযোগ ও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে পটুয়াখালীর গলাচিপা পৌর শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে অবস্থা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। যখন তখন পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানির সঙ্কটে মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়ছে। সরবরাহ লাইনের পানির জন্য মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় বসে থাকছে। বহু বাসাবাড়ির রান্না-গোসল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অথচ এরপরও পৌর কর্তৃপক্ষ নতুন সংযোগ দিয়েই চলছে। যাতে ভোগান্তি আরও বাড়ছে। গলাচিপা পৌর শহরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়েছে ২০০৫ সালে। ডানিডার সহায়তায় ৫ লাখ লিটার পানি ধারণক্ষমতার ওভারহেড ট্যাঙ্কির সহায়তায় এ ব্যবস্থা চালু হয়। কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মাত্র এক হাজার দুই শ’ সংযোগ ক্ষমতার এ ওভারহেড ট্যাঙ্কির পানির জন্য এরই মধ্যে প্রায় তিন হাজার সংযোগ দেয়া হয়েছে। ফলে শুরুতে যেখানে দিনরাতে মাত্র দু’বার পানি তুললেই চলত, সেখানে এখন দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা পাম্প মেশিন চালু রাখতে হচ্ছে। এতে করে পাম্প মেশিনের ওপর অত্যাধিক চাপ পড়ছে। যখন তখন পাম্প মেশিন অচল হয়ে পড়ছে। পাম্প মেশিন সচল করার জন্য কখনও কখনও ২-৩ দিন পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ থাকছে। এর ওপর গত কয়েক মাস ধরে শুরু হয়েছে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং। দিনে কমপক্ষে চার-পাঁচবার লোডশেডিং হচ্ছে। একেকবারে ২-৩ ঘণ্টা থেকে শুরু করে ৮-১০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুত বন্ধ থাকছে। আর বিদ্যুত চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পানির সরবরাহ। বিদ্যুত ফিরে এলেও পানি সরবরাহ পেতে আরও কমপক্ষে ৩-৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। পানির গতি আসতে সময় লাগছে আরও বেশি। উঁচু ভবনের বাসিন্দাদের এ সময়টাতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ সূত্রে আরও জানা গেছে, শুরুতে গলাচিপা শহরে দৈনিক ১০ লাখ লিটার পানির চাহিদা ছিল। বর্তমানে তা ৩০ লাখ লিটার ছাড়িয়ে গেছে। গলাচিপা পৌর শহরের ১৫ হাজারের বেশি মানুষ পানি সরবরাহের ওপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আগে গলাচিপা পৌর শহরে প্রচুর প্রাকৃতিক জলাধার অর্থাৎ পুকুর ডোবা ছিল। শহরের বহু মানুষ জলাধারের পানি ব্যবহার করে চাহিদার অনেকটা মেটাতো। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে অধিকাংশ পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। বর্তমানে পৌর শহরে প্রাকৃতিক জলাধারের সংখ্যা হাতে গোনায় নেমে এসেছে। এ অবস্থায় সরবরাহ ব্যবস্থার পানির ওপর নির্ভরশীল মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার নিয়েছে। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ এরপরও একের পর এক পানির সংযোগ দিয়েই চলছে। এতে যেমন বাড়ছে পানির চাহিদা, তেমনি বাড়ছে পানির সঙ্কট। যা নাগরিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। মাত্রাতিরিক্ত সংযোগের বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে পৌরসভার পানি শাখার সহকারী প্রকৌশলী আবদুল আউয়াল জানান, গলাচিপা ডিগ্রী কলেজ ক্যাম্পাসে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ১২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একই ধারণ ক্ষমতার আরও একটি ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণের কাজ চলছে। যা দিয়ে ৩০ কিলোমিটার লাইন টানা হবে। আগামী বছর দেড়েকের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। তখন আর পানির কোন সঙ্কট হবে না।
×