ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শাহীন রেজা নূর

বিএনপির সম্মেলন বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৩ এপ্রিল ২০১৬

বিএনপির সম্মেলন বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া

বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলকে ঘিরে বিএনপি মহলে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা, আশা-আকাক্সক্ষার জন্ম হয়েছিল বোধ করি কাউন্সিলের পরপরই তা উবে গেছে। সারাদেশ থেকেই কর্মীদের জড়ো করে এবং অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে কাউন্সিলটি আয়োজন করা হয়। কিন্তু বেগম জিয়া ঘণ্টাধিককাল যাবত দলের ভবিষ্যত যে রূপরেখা ঘোষণা করেন তাতে দেশের মানুষ আদৌ সন্তুষ্ট হতে পেরেছে কিনা তা এখন দেখার বিষয় বৈকি! তবে বেগম সাহেবা অনেক কথার ফুলঝুরিতে জনমন ভোলাবার চেষ্টা যে করেছেন এতে আর সন্দেহ কী! মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়টি বেশ ইনিয়ে-বিনিয়ে ও কায়দা করে তিনি বার কয়েক উচ্চারণ করেছেন তার বক্তব্যে। আর সেই সঙ্গে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস বিষয়েও জোরালো বক্তব্য রাখতে ভোলেননি তিনি। তার দল এবার ক্ষমতায় গেলে কি কি করবে তার কিছু বিবরণী তুলে ধরেছেন তিনি কথার মালা সাজিয়ে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেছেন এই ‘আপোসহীন’ নেত্রী। তিনি আরও বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে বিএনপি এবার দুর্নীতি করবে না ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয়ও দেবে না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কোন প্রকার দমননীতি চালানো হবে না ইত্যাদি। দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ন ইত্যাদিও করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে সন্ত্রাস বিষয়ে তার মুখ-নিঃসৃত বাণীগুলো বেশ ঠেকেছে আমার কাছে। ‘সন্ত্রাসের রানী’ হিসেবে খ্যাত বেগম জিয়া আজ রাজনৈতিকভাবে মহাবেকায়দায় পড়ে গিয়ে এখন সন্ত্রাস দমনের বুলি কপচাচ্ছেন। দেশে হিংসা-হানাহানি আর সন্ত্রাসের জন্ম দিয়েছে যারা তারাই যখন সন্ত্রাস দমনের প্রতিশ্রুতি দেয় তখন কারুর কি আর বুঝতে বাকি থাকে যে, ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়!’ নচেৎ একাত্তরে বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গী সংগঠন ‘জামায়াতে ইসলামী’ যেভাবে সাধারণ নিরীহ বাঙালীর রক্তে হোলি খেলেছে এবং স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বিএনপি সুবিধাবাদী রাজনীতির পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে ঐ জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ক্ষমতায় যাবার অন্ধ মোহে যেমন করে পেট্রোলবোমা আর এসিড সন্ত্রাসের মাধ্যমে মাসের পর মাস ধরে নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরিয়েছে সেই জামায়াতের সঙ্গে বেগম জিয়ার বর্তমান সম্পর্ক কি তা তিনি তার ঐ সুদীর্ঘ ভাষণে পরিষ্কার করতেন নিশ্চয়ই! ভাষণে সন্ত্রাসের বিপক্ষে হরেক কথা বললেও তিনি নিজদলীয় ও জামায়াতী সন্ত্রাসের কোন নিন্দা করেননি। বরং তা বেমালুম চেপে গিয়েছেন। ঐ হত্যার রাজনীতি যে কত বড় সন্ত্রাস তা বেগম জিয়ারা বোঝেন না তাতো নয়; কিন্তু সে কথা বললে যে তার মনের কোণে লুক্কায়িত দুরভিসন্ধি চরিতার্থ করা কঠিন হয়ে পড়বে, তাই তিনি সন্ত্রাস দমন বিষয়ে এক ধরনের ছেলে ভুলানো ছড়ার অবতারণা করেছেন মাত্র! বেগম জিয়া ও তার পুত্র তারেক জিয়ার নেতৃত্বাধীন দল বিএনপি বিগত বছরগুলোতে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজত এবং অন্যান্য প্রচ- ডানপন্থী, সুবিধাবাদী তথা পাকিস্তানপন্থী দলগুলোর সঙ্গে একাট্টা হয়ে বেপরোয়া আগুন-সন্ত্রাস চালিয়ে মানুষ নিধনের যে রাজনীতি করেছে সেজন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করা এবং ঐ সব পাকিস্তানবাদী ও তথাকথিত ইসলাম-পছন্দ দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক এখন থেকে কি দাঁড়াবে সে বিষয়ে পরিষ্কার বক্তব্য প্রদানের পরিবর্তে তিনি যেন এক প্রকার ‘গাজীর গীত’ই শুনিয়েছেন আমাদেরকে। যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারেও বেগম সাহেবা তার অবস্থান পরিষ্কার করেননি। জামায়াতের মতো ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে তার বা নিজ দলের সম্পর্ক কি হবে সে বিষয়েও কোন উচ্চবাচ্য নেই তার ভাষণে। তাহলে জনগণ বেগম জিয়ার এইসব সন্ত্রাস বিষয়ক বক্তব্য কেন বিশ্বাস করবে? দেশবাসীর স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে বিএনপি-জামায়াতের সাম্প্রতিককালের সন্ত্রাসের বিভীষিকাময় সব ছবি! দেশের কোন শ্রেণীর মানুষই বাদ পড়েনি তাদের সেই নারকীয় পৈশাচিকতা থেকে। রাজনীতি মানুষের জন্য, দেশের কল্যাণের জন্য। খালেদা-তারেকের বিএনপি দেশ ও দেশের মানুষের বিরুদ্ধে তাদের জঘন্য সব শ্বেত-সন্ত্রাস চালিয়ে রাজনীতির এ কোন্ সংজ্ঞা দাঁড় করালেন? আমরা বরাবরই বলে এসেছি যে, বিএনপি তার পাকিস্তানবাদী প্রতিক্রিয়াশীল ধারার রাজনীতি পরিত্যাগ করে যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারায় নিজেদের সম্পৃক্ত করে তাহলে দলটির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। অর্থাৎ, গণতান্ত্রিক উপায়ে ও নিয়মতান্ত্রিকভাবেই ক্ষমতারোহণ তাদের জন্য সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে সব কথার শেষ কথাটি এই যে, তাদেরকে জামায়াতের সংশ্রব ছাড়তে হবে আর আন্তরিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবগাহন করতে হবে। মুশকিল এই যে, বিএনপি জন্মাবধি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে ঐ চেতনাবিনাশী রাজনীতির চর্চাই করেছে কেবল! আর এর কারণ বোঝাটা আদৌ দুষ্কর নয়। বিএনপির সৃষ্টি আর সৃষ্টির পর থেকে এর চলন-বলনের ওপর যারা দৃষ্টি রাখছেন তারা তো জানেনই, এমনকি রাজনীতিমনস্ক ব্যক্তি মাত্রই জানেন বা বোঝেন যে, এই দলটি একটি বিশেষ কায়েমী স্বার্থবাদী মহলের দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নকল্পে জন্মলাভ করেছিল। জন্মাবধি তাই দলটি প্রচ- রকমের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। আমরা জিয়াউর রহমানের চাতুর্যপূর্ণ ক্ষমতারোহণের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বুঝতে পারব যে, দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীদের পৃষ্ঠপোষকতায় ’৭৫-এর আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হন তিনি। অতঃপর তারই মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কুচক্রীরা রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। আসলে জিয়া ছিলেন ঐ পাকিস্তানবাদী চক্রান্তকারীদের ক্রীড়নক। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া যে উপায়ে রাষ্ট্রপতি এবং সিএমএলএ (প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক) বিচারপতি আবু সাদাত মহাম্মদ সায়েমকে ঐ দুই পদ থেকে অপসারণ করেন ও নিজেই প্রথমে সিএমএলএ এবং এর পরপরই গণভোটের প্রহসনের আয়োজন করে রাষ্ট্রপতি বনে যান তা আমাদের ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের সামরিক অভ্যুত্থান কৌশলকেই স্মরণ করিয়ে দেয় বৈকি! সেদিন আইয়ুব মঞ্চের আর এক খলনায়ক ইস্কান্দার মির্জাকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজেই দেশের সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিলেন। জিয়াউর রহমান পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের একজন করিৎকর্মা অফিসার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, ভূমিকা এবং স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের ঘটনাবলী পর্যায়ক্রমে পর্যালোচনা করলে তার আসল চেহারা ও মতলব অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যায়। চট্টগ্রামে সোয়াত জাহাজ থেকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর জন্য আনা অস্ত্রপাতি খালাস করতে গিয়ে মেজর রফিক ও অন্যান্যের বাধার সম্মুখীন হওয়ার সুবাদে তিনি স্বেচ্ছায় নয় চান্সে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ বনে গিয়েছিলেন! আর সেই সুবাদেই বেলাল মহাম্মদ, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ প্রমুখের বদান্যতায় তথাকথিত ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ হয়ে গেলেন! গোটা মুক্তিযুদ্ধকালে তার ভূমিকা প্রকৃত প্রস্তাবে কি ছিল তাও ব্যাপকভাবে খতিয়ে দেখা অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে আজ। মুক্তিযুদ্ধে তার জেড ফোর্সের কোন তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকার সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় না কেন? বরং জানা দরকার যে, তখন জেনারেল ওসমানীর সঙ্গে তার মতদ্বৈধতাইবা ঘটেছিল কি কারণে? স্বাধীনতার পর তিনি নিজ স্ত্রীকে ঘরে ফেরত নিতে চাননি কেন? বেগম জিয়াইবা কেন তার স্বামী কর্তৃক ভারতে যাবার অনুরোধ-উপরোধ উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পাকিস্তানী সেনা শিবিরে পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে থাকাকেই শ্রেয় জ্ঞান করেছিলেন? কেনইবা বেগম জিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্বকালে বাংলাদেশ সংসদে পাকিস্তানী জেনারেল জানজুয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়েছিল? জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় এসে কি অভিনব কায়দায় গণভোটের নামে এক তামাশা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজের পক্ষে প্রায় শতভাগ সমর্থন দেখিয়ে রাষ্ট্রপতি বনে গিয়েছিলেন তা কিন্তু দেশবাসী ভুলে যায়নি। প্রথমে ‘জাগ’ দল খাড়া করে অতঃপর স্বাধীনতাবিরোধী পক্ষের লোকদের একাট্টা করে ফ্রন্ট গঠন এবং অত্যল্পকালের মধ্যেই সেই ফ্রন্টকে বিএনপিতে রূপান্তর এসবই ছিল সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক এবং সেনানিবাসের ক্ষমতা ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্নে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারীরা সকলেই ছিল পাকিস্তানবাদী, ভারতবিদ্বেষী, সুযোগসন্ধানী ও সুবিধাবাদী চরিত্রের লোক। চতুর জিয়া অবশ্য দেশের কিছু স্বনামখ্যাত বুদ্ধিজীবীকে তার উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন আর সেটি ছিল জনমনকে বিভ্রান্ত করার এক বিশেষ কৌশল। এদের মধ্যে মুক্তবুদ্ধির লোক ছিলেন যারা তারা পরে সরে এসেছেন নিজেদের মানমর্যাদা রক্ষার জন্য। জেনারেল জিয়ার রাজনৈতিক বদ মতলব ও অসাধুতা ধরা পড়ে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ সংযোজন, বাংলাদেশ বেতারকে ‘রেডিও বাংলাদেশ’ নামকরণ, একুশে পদক প্রবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু ব্যক্তির পাশাপাশি ঘোরতর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী লোকজনকে ঐ পদকে ভূষিত করার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি নিষ্ঠুর পরিহাসের মধ্যে। শর্ষিণার রাজাকার পীরকেও তার সময় স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়েছিল। আর তা ছিল এই পরিহাসের সবচাইতে জঘন্য দিক। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিদেশে দূতাবাসসমূহে চাকরি-বাকরির ব্যবস্থা করা, রাজনীতিকে তার নিজের ভাষায় ‘রাজনীতিকদের জন্য ডিফিকাল্ট’ করে তোলা, তরুণ প্রজন্মকে সম্পূর্ণভাবে বিভ্রান্ত ও লোভ-লালসার মোহে বন্দী করা, দেশে লাকী খানদের অশ্লীল-উদ্দাম নৃত্য-গীতের সংস্কৃতি চালুকরণ, বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট প্রবর্তন, সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে সংঘটিত ২৭টি অভ্যুত্থান দমনের নামে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসি প্রদান, রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী, যাদু মিয়াকে সিনিয়র মন্ত্রী, যুদ্ধাপরাধীদের শিরোমণি গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে আনা আর রাজনীতিতে অসাধু আমলা, ফড়িয়া, ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য প্রতিষ্ঠার অশুভ আয়োজন চলে তার উদ্যোগে-ইচ্ছায় ও পৃষ্ঠপোষকতায়। মোদ্দাকথা, দেশকে সেই পাকিস্তানী ধারায় ফিরিয়ে নেয়ার সূক্ষ্ম, পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ আয়োজন চলে জিয়ার গোটা শাসনামলে। বেগম জিয়া তার দলীয় রূপরেখা বিষয়ক ভাষণটিতে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বেশ সম্মান-শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ভান করেছেন। জামায়াত, যুদ্ধাপরাধী, ধর্ম ব্যবসায়ী ইত্যাদি বিষয়ে ঠিকই মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইলেন আবার মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে কপট দরদ দেখালেন। এ দেখছি ‘সোনার পাথর বাটি’ বিশেষ! একেই বুঝি বলে ‘ডুডুও খাবো, তামাকুও খাবো’। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের ‘কদর’ করেন এই ভাব দেখাবেন আবার তাদের হন্তা বা ঘাতকদের বরণ ডালা সাজিয়ে বরণ করবেন, এ তো ভারি বাহারী মজা! হ্যামলেট কি এমন ধাঁচের রমণীদের কথা মাথায় রেখে তার সেই সুবিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন? সেই যে ‘ভৎধরষঃু, ঃযু হধসব রং ড়িসধহ’ উক্তিটি? কে জানে হয়ত হবেও বা! বেগম জিয়া আরও বলেছেন যে, বিএনপি এবার ক্ষমতায় গেলে প্রতিহিংসার রাজনীতি করবে না। খুব ভাল কথা এটি। কিন্তু আমরা যে ‘ঘরপোড়া গরু, তাই ঈশান কোণে সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পাই’। বিএনপি জন্মাবধি যত রাজনৈতিক হত্যাকা- ঘটিয়েছে এবং জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে নারকীয় সব সন্ত্রাস চালিয়ে দেশটির অসাম্প্রদায়িক চেহারা-চরিত্র পাল্টে দিতে তৎপর থেকেছে তাতে বেগম জিয়ার এ জাতীয় অঙ্গীকার ‘আস্তিনের নিচে ছুরি লুকিয়ে রেখে’ ঝোপ বুঝে কোপ মারার অঙ্গীকার কিনা সেই আশঙ্কা মন থেকে দূর করাটা সহজ নয় নিশ্চয়। যিনি হরতালের নামে, অবরোধের নামে, গণতন্ত্র উদ্ধারের নামে নির্বিচারে মানুষ হত্যা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের নির্দেশ দিতে পারেন তিনি কি রাজনীতিক হতে পারেন? তিনি কি মানবী না দানবী? তার সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবেই এখন এই প্রশ্নটাই উঠে এসেছে আমাদের সমাজে। বেগম জিয়ার চেহারার মধ্য থেকে এক দানবীয় চেহারা ফুটে উঠতে দেখেছি আমরা। আমরা যেন রাক্ষুসী হিড়িম্বাকে প্রত্যক্ষ করছি। কি অভাবিত আশ্চর্য নির্লিপ্তি! তারই নির্দেশে ‘মরেছে মানুষ পুড়েছে দেশ’, অথচ ‘তিনি কিন্তু ছিলেন বেশ’। প্রতিদিন মিডিয়ায় বিএনপি নেত্রীর এই হিংসাশ্রয়ী জিঘাংসার চেহারা দেখেছি আমরা আর তাতে করে তার কেবল জনতার ঘৃণা ও ধিক্কারই প্রাপ্য বৈকি! ক্ষমতার লোভ কি জঘন্যভাবেই না প্রকাশ করেছেন তিনি। আর অন্যদিকে, দূর শ্বেত দ্বীপ থেকে তার অর্বাচীন পুত্র ঐ নির্মম - নিষ্ঠুরতার অগ্নিতে ঘৃত সংযোগ করেছে দিনের পর দিন। আর বিএনপির সব বিরাট বিরাট ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার, শিক্ষাবিদ নেতারা কেবলই ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়ার সকল প্রকার অনাচার-মিথ্যাচার-অবিচার একান্ত বাধ্যগত কর্মচারীর মতো মেনে নিচ্ছেন। এই তো সেদিন ব্যারিস্টার মওদুদ, ডাঃ বদরুদ্দোজা, ড. মঈন খান প্রমুখ সোৎসাহে খালেদা-তারেকের জামায়াত প্রীতির বিরুদ্ধে বিষোদগার করলেন এবং বিএনপির বর্তমান নিমজ্জমান অবস্থার জন্য খালেদা ও তারেক জিয়ার গোঁয়ার্র্তুমি, জামায়াতপ্রীতি ও অর্বাচীনতাকে দায়ী করলেন। এখন তারাই আবার কি সুন্দর বেগম সাহেবার ডাকে সাড়া দিয়ে সুড়সুড় করে ঐ ষষ্ঠ সম্মেলনে হাজির হয়ে বেগম জিয়ার ভাষণে গদগদ হয়েছেন। আমরা জানতাম যে, এই সব সুখের পায়রা বা বেগম জিয়ার তথাকথিত এই সমালোচকরা বেগম জিয়া আতু বলে ডাক দিলেই লবেজান হয়ে তার পায়ের কাছে আসন পাবার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠবেন। অবিশ্যি এদের সমালোচনা করেইবা কি লাভ? কেননা, এরা সকলেই তো বিএনপি আয়োজিত নানা যজ্ঞের হবি লেহন করে ফুলে-ফেঁপে সমাজের কেউকেটা বনে গেছেন। তাই আজ সত্যি সত্যি সত্যের খাতিরে সত্য বলার মতো নৈতিক বল আর এদের অবশেষ নেই। তাই বেগম জিয়ার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অবস্থান সত্ত্বেও দলের মধ্যকার মুক্তিযোদ্ধারা বেগম জিয়া ও তারেকের পায়রবি করতে বাধ্য। সত্য বলার সৎ সাহস তাদের উবে গেছে আজ বহুকাল। আর সে কারণে বিএনপি নেত্রীর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ‘স্তোত্র বাক্য’সমূহ তাদেরকে হজম করতেই হয়।
×