ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৩ মাস ধরে অর্থ সঙ্কট

রেলে পণ্য সরবরাহ করে বেকায়দায় ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৩ এপ্রিল ২০১৬

রেলে পণ্য সরবরাহ করে বেকায়দায় ব্যবসায়ীরা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রেলকে সচল রাখতে ও চাহিদা অনুযায়ী যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে বেকায়দায় পড়েছেন সরবরাহকারীরা। গত তিনমাসে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা বিল বকেয়া আদায়ের অপেক্ষায় রয়েছে তারা। পলোগ্রাউন্ডের বিভাগীয় অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব অধিকর্তার দফতরে সরবরাহকারীদের বিল পড়ে রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তহবিলের ঘাটতি দেখিয়ে এসব অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না। অথচ, চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে না পারলে উল্টো জরিমানা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু সরবরাহকারীরা ব্যাংক ঋণ নিয়ে সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ করে গত তিনমাস ধরে বিল আটকা পড়ায় ব্যাংকে সুদাসল বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু ঠিকা চুক্তিতে পণ্যের মূল্য পরিশোধে কোন ধরনের বিলম্ব বা সময়ক্ষেপণের নির্দেশনা নেই। অর্থ অধিকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, অর্থ বছরের শুরু হয় জুলাই থেকে। সে অনুযায়ী পুরো বছরের ক্রয় আদেশ অনুযায়ী অর্থ সংস্থান রাখা অর্থ বিভাগ ও ক্রয় বিভাগের দায়িত্ব। কিন্তু রেলে অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই ডিসেম্বরে বরাদ্দকৃত অর্থ ফুরিয়ে যায়। ফলে পুনরায় বাজেট বরাদ্দ নিতে হয় এমনকি বরাদ্দকৃত বাজেটের অনুমোদন ছাড়া খরচ করারও কোন সুযোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অর্থ) বৈঠকের মাধ্যমে বাজেট বরাদ্দ নিয়ে থাকেন। কিন্তু চলতি অর্থবছরের বাকি আরমাত্র দু’মাস। কিন্তু বছরের মাঝামাঝি সময়ে অর্থ সঙ্কট দেখা দেয়ায় সরবরাহকারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ কাজ করছে। ওপেন টেন্ডার, এলটিএম, ডিপিএম, আরএফকিউসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে রেল কর্তৃপক্ষ পণ্য ক্রয়ের জন্য ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও দাফতরিক কারণে সরবরাহকারীদের কাছে আগেভাগে বাজেট ঘাটতির বিষয়টি স্বীকার করে না। এমনকি চুক্তিপত্র সম্পাদনের আগেই ক্রয় কর্তৃপক্ষও চুক্তিপত্রের মেয়াদ না বাড়িয়ে টেন্ডার সিডিউল অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়কে ধরাবাধা নিয়মে পরিণত করে। এক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহে কোন ধরনের বিলম্ব হলেই জরিমানার বিষয়টি চাপিয়ে দেয় সরবরাহকারীদের ওপর। পলোগ্রাউন্ডের বিভাগীয় অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা (টিএ) দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছর অর্থাৎ ১ জুলাই ২০১৫ থেকে ৩০ জুন ২০১৬ পর্যন্ত ৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহে বরাদ্দকৃত অর্থ অনুমোদন সাপেক্ষে সরবরাহকারীদের বিলের বিপরীতে পরিশোধ করা হয়েছে। এছাড়াও গত অর্থবছরের প্রায় ৯ কোটি টাকা বকেয়া অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে অপরিশোধিত বিলের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। ৯ হাজার ৫শ’ কোডে সবচেয়ে বেশি বিল অপরিশোধিত রয়েছে সরবরাহকারীদের। সরবরাহকারীরা অভিযোগ করেছেন, চুক্তিপত্রের নিয়ম অনুযায়ী পণ্য সরবরাহে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোন ধরনের বিলম্ব হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। এছাড়াও চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের পূর্বে চুক্তিমূল্য পরিশোধে বিলম্ব হবে এমন তথ্য কর্তৃপক্ষ প্রদান করে না। এ ব্যাপারে রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অর্থ) জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে রেলের বাজেট বরাদ্দ হয়। সে অনুযায়ী ক্রয় আদেশের বিপরীতে অর্থ সঙ্কট দেখা দিলে তাও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েই বরাদ্দ নেয়া হয়। এক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে সরবরাহকারীদের বিল পরিশোধ করা হবে। আগামী ১৫ এপ্রিল নাগাদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে। ওই বৈঠকে অর্থ প্রাপ্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। এর আগে সরবরাহকারীদের বিল পরিশোধ সম্ভব নয়।
×