ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২২ বছরে ঋণ শোধ দেননি

রাইন গার্মেন্টসের এমডি ঢাবি ডিনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩ এপ্রিল ২০১৬

রাইন গার্মেন্টসের এমডি ঢাবি ডিনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ ২২ বছরেও ঋণের টাকা পরিশোধ না করার অভিযোগে রাইন গার্মেন্টস (প্রাঃ) লিমিটেডের এমডি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলাম ও তার স্ত্রীসহ কোম্পানির আরও ২ পরিচালকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। ১০ বছর আগে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের দায়ের করা একটি মামলায় দ্বিতীয় দফায় গত ৯ মার্চ এ আদেশ দেয় ঢাকার অর্থঋণ আদালত-১। এর আগে ২০০৯ সালে একই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে বিজ্ঞ আদালত। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে ন্যাশনাল ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় রাইন গার্মেন্টস প্রা: লিমিটেডের নামে তিনটি হিসাব প্যাকিং ক্রেডিট নং-২৬৯৮, এসওডি (এক্সপোর্ট) নং-৭৮৭ ও এসওডি (এক্সপোর্ট) নং-২১৯৭ খোলা হয়। এর পর কোম্পানির নামে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি (ঋণপত্র) খোলার মাধ্যমে পোশাক প্রস্তুত ও রফতানির উদ্দেশে ১৯৯৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে রাইন গার্মেন্টস ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে ২৫ কোটি ৭৪ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫২ টাকা ঋণ নেয়। এ সময় ঋণ পরিশোধের সময়কাল নির্ধারণ করা হয় ১০ বছর। কিন্তু এ সময় সুদে-আসলে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয় কোম্পানিটি। বেশ কয়েকবার টাকা পরিশোধের সময় বাড়ানোর দাবিও জানায় কোম্পানিটি। কিন্তু এর পরও টাকা দিতে গড়িমসি করে গার্মেন্টস কোম্পানিটি। ফলে পাওনা টাকার পরিমাণ দিন দিন বাড়তে থাকে। ব্যাংকের দায়দেনা পরিশোধ না করায় ২০০৫ সালের ২৬ অক্টোবর ন্যাশনাল ব্যাংকের আইন উপদেষ্টার মাধ্যমে চূড়ান্ত লিগ্যাল নোটিস দেয়া হয় রাইন গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষকে। এরপর ওই বছরের ২৯ নবেম্বর রাইন গার্মেন্টসসহ ৪ পরিচালকের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ (যার মামলা নং-৩২৪/২০০৫)। মামলায় অন্য আসামিরা হলেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলাম, পরিচালক মোঃ ইকবাল, রঞ্জিত কুমার সাহা ও শেনিন রুবায়েত। এর পর মামলাটি ২০০৭ সালের ২৪ জুলাই ব্যাংকের অনুকূলে ডিক্রী হয়। পরবর্তীতে ব্যাংক ডিক্রী জারিকরণার্থে অর্থজারি মামলা (নং ৪৩৩/২০০৭) রুজু করে। ওই সময় পর্যন্ত ব্যাংকের দায়দেনা দাঁড়ায় ২৯ কোটি ২১ লাখ ১২ হাজার ৪৪৬ টাকা। এর পর ২০০৯ সালের ২৮ মে শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলামসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের দায়দেনা পরিশোধ না করায় অর্থঋণ আদালত ৬ মাসের দেওয়ানী আটকাদেশের আদেশ দেয়। তারপর ছয় বছর পার হলেও রাইন গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খেলাপী ঋণ আদায় করতে পারেনি ন্যাশনাল ব্যাংক । এদিকে দীর্ঘ ২২ বছরেও ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় সর্বশেষ চলতি বছরের ৯ মার্চ ঢাকার অর্থঋণ আদালত-১ পুনরায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। দেওয়ানী আটকাদেশের কপি ইতোমধ্যে রাজধানীর ধানম-ি থানায় পৌঁছানো হয়েছে বলেও আদালত সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে রাইন গার্মেন্টস্রে এমডি ও ঢাবি বাণিজ্য অনুষদের ডিন শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলামের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে টাকা আদায়ে আইনী সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ন্যাশনাল ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইন বিভাগের প্রধান লে. কর্নেল (অব) সাজ্জাদ হোসেন। জানা গেছে, এ মামলার অন্যতম দায়িক শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন হিসেবে কর্মরত। ২০০৯ সাল থেকে গ্রেফতারি পরোয়ারা জারি ও আদালত কর্তৃক ঋণ খেলাপী হওয়া সত্ত্বেও তিনি বহাল তবিয়তে দীর্ঘদিন থেকে বাণিজ্য অনুষদের ডিন আছেন। এ অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কতটা বিধিসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সব মহলে।
×