ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিজামীর ফাঁসির রায় বহালে পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্বেগে ঢাকার প্রতিক্রিয়া

নাক গলাবেন না

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৯ মে ২০১৬

নাক গলাবেন না

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো বন্ধ করতে ইসলামাবাদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ঢাকা। এছাড়া ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির অপব্যাখ্যা দেয়াও বন্ধ করতে বলা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতা মতিউর রহমান নিজামীর সুপ্রীম আপীল বিভাগের দেয়া রায়ের প্রেক্ষিতে ইসলামাবাদের উদ্বেগের পর ঢাকা এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। এছাড়া আপীল বিভাগে নিজামীর রায় ঘিরে নতুন করে ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-াদেশ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতা মতিউর রহমান নিজামীর রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন গত বৃহস্পতিবার সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ খারিজ করে দিয়েছেন। আপীল বিভাগের খারিজের পর নিজামীর মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রয়েছে। তবে নিজামীর মৃত্যুদ-াদেশ বহালের পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। শনিবার পাকিস্তানের ইংরেজী দৈনিক ডন দেশটির উদ্বেগের খবর প্রকাশ করে। এ প্রেক্ষিতে রবিবার পররাষ্ট্র দফতরে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তানকে নাক না গলানোর জন্য হুঁশিয়ার করেছেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতা মতিউর রহমান নিজামীকে কেন্দ্র করে ইসলামাবাদের প্রতিক্রিয়া আমাদের হতাশ করেছে। আমরা কখনই আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কারও উদ্বেগকে স্বাগত জানাই না। বার বার মনে করিয়ে দেয়ার পরও তারা এটি করছে। তারা বলছে যে ব্যথিত হয়েছেন। কিন্তু আমরা যাঁদের বিচার করছি, তাঁরা বাংলাদেশের নাগরিক। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৭৪ সালে যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির কথা বলা হচ্ছে, সেখানে উল্লেখ ছিল পাকিস্তানের যে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে না। ওই চুক্তিতে কিন্তু বলা হয়নি যেসব যুদ্ধাপরাধী বাংলাদেশের নাগরিক, তাদের বিচার করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধীরা পাকিস্তানের হয়ে কাজ করেছেন। তাই তাদের জন্য সেই জায়গা থেকে পাকিস্তান ব্যথিত হয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমি এটিকে বিপজ্জনক মনে করি, কারণ মানবতাবিরোধী বা যুদ্ধাপরাধীরা ভবিষ্যত প্রজন্মকে আশ্বস্ত করার একটি জায়গা খুঁজছেন। পাকিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে তাদের পাশে থাকবে, এ রকম একটি বার্তা বোধহয় দিতে চাইছে। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, তা না হলে নিজামীর বিচারে পাকিস্তান কেন ব্যথিত হবে? এসব কারণে প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় থেকে দূরে থাকতে এবং ১৯৭৪ সালের চুক্তির অপব্যাখ্যা দেয়া বন্ধ করতে পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে নিজামীর মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রাখার পরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সুপ্রীমকোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দ-ের বিরুদ্ধে পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া অনুসরণ করছি। বিবৃতিতে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে চলমান বিচারকে বিতর্কিত বলা হয়েছে। সূত্র জানায়, ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে শীতল সম্পর্ক চলে আসলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে নতুন করে টানাপোড়েন শুরু হয়। এর আগে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মুজাহিদের মৃত্যুদ-ে নাখোশ হয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় পাকিস্তান। পাকিস্তানের ওই প্রতিক্রিয়ার প্রতিবাদে দেশটির ঢাকায় নিযুক্ত হাইকমিশনার সুজা আলমকে তলব করে বাংলাদেশ। সে সময় পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে জানিয়ে দেয়া হয়, পাকিস্তান সরকার সরাসরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান সরকার কোনভাবেই যেন আর হস্তক্ষেপ না করে, সে বিষয়ে তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়। সে সময় ঢাকার পাক হাইকমিশনারকে তলবের প্রতিক্রিয়া হিসেবে গত বছর ডিসেম্বরে ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মৌসুমী রহমানকে তলব করে পাকিস্তান সরকার। তাকে তলবের পর ১৯৭১ সালের হত্যাকা-ে সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে পাকিস্তান। তলব ও পাল্টা তলব নিয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন করে টানাপোড়েন শুরু হয়। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে পাকিস্তানের কূটনীতিক ফারিনা আরশাদকে বহিষ্কার করা হয়। ফারিনা আরশাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে জঙ্গী তৎপরতার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ দেয় বাংলাদেশ। তারই পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইসলামাবাদ থেকে বাংলাদেশের কূটনীতিক মৌসুমী রহমানকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের বিচার ঘিরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। এই প্রেক্ষিতে দুই দেশের কূটনীতিককে তলব পাল্টা তলব ও বহিষ্কার পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনা ঘটছে। তবে পাকিস্তানই দুই দেশের সম্পর্ক তিক্ত করে চলেছে। সর্বশেষ নিজামীর আপীল বিভাগের রায় বহাল থাকায় আবারও দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, ৫ মে মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দ- বহাল রেখে রায় পুনর্বিবেচনার আপীীল খারিজ করে দেন আদালত। নেপালের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক ॥ নেপালের কাউন্সিল ফর ওয়ার্ল্ড এ্যাফেয়ার্সের একটি প্রতিনিধি দল রবিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাত করেন। কাউন্সিলের সভাপতি ড. রাজেন্দ্র বাহাদুর শ্রেষ্ঠার নেতৃত্বের চার সদস্যের প্রতিনিধি দলটি তিন দিনের সফরে ঢাকা এসেছেন। ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ওয়ার্ল্ড এ্যাফেয়ার্স ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সঙ্গে রবিবার বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে একাডেমিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে চার বছরের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাতকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশের সরকারসমূহের উদ্যোগে সে সমস্ত দেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশার প্রতিফলনের জন্য জনগণের সঙ্গে জনগণের এবং থিংক ট্যাংক ও সিভিল সোসাইটিসমূহের মধ্যে যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রতিনিধি দলের নেতা ড. রাজেন্দ্র বলেন, বাংলাদেশ ও নেপালের যৌথভাবে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। দু’দেশের জনগণের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক সেসব সুযোগ পূর্ণভাবে কাজে লাগিয়ে তাদের কল্যাণ বৃদ্ধি করতে পারে। বৈঠকে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে যোগাযোগ ছাড়াও সহযোগিতার অন্যান্য ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক তারেক আরিফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত নেপালের কাউন্সিল ফর ওয়ার্ল্ড এ্যাফেয়ার্সের নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি থিংক ট্যাংক হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে। এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণে কাজ করে।
×