ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ট্রাম্পের কূটকৌশলই গ্রহণ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ॥ সাদিক খান

ক্যামেরনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ॥ জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৯ মে ২০১৬

ক্যামেরনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ॥ জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি

লন্ডনের নবনির্বাচিত পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত প্রথম মুসলিম মেয়র সাদিক খান ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও তার পরাজিত প্রতিদ্বন্দ্বী জ্যাক গোল্ডস্মিথকে নজিরবিহীন আক্রমণ করেছেন। লেবার পার্টির এই মেয়র অভিযোগ করেছেন, রাজধানীতে তার বিজয় রুখতে তারা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিভক্তির চেষ্টা করেছিলেন এবং এজন্য তারা ট্রাম্পের কলা-কৌশল ব্যবহার করেছেন। ব্রিটিশ দৈনিক অবজারভারে রবিবার প্রকাশিত এক লেখায় সাদিক এ অভিযোগ করেন। খবর গার্ডিয়ান ও এএফপির। মেয়র নির্বাচিত হয়ে সাদিক খান ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষমতাবান মুসলিম রাজনীতিবিদে পরিণত হয়েছেন। মেয়র হিসেবে শপথ নেয়ার একদিন পর লেবার পার্টির এই আইনপ্রনেতা সমালোচনা করে বলেন, ক্যামেরনের কনজারভেটিভ পার্টি মেয়র নির্বাচনের প্রচারের সময় তাকে ইসলামী চরমপন্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম বিদ্বেষী মন্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী ও গ্লোডস্মিথ ডোনাল্ড ট্রাম্পের কূটকৌশল গ্রহণ করেছেন। সাদিক আট বছর পর খুব সহজেই টোরিদের কাছ থেকে যুক্তরাজ্যের রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছেন। কনজারভেটিভ পার্টির (টোরি) মেয়র রবিস জনসন ২০০৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত লন্ডনের মেয়র ছিলেন। সাদিক বলেছেন, তিনি আশা করেছিলেন, নির্বাচনী প্রচারের সময় বাসস্থান, যাতায়াত ব্যবস্থা ও বায়ু দূষণের মতো বিষয়গুলোতে জোর দেয়া হবে। কিন্তু ডেভিড ক্যামেরন ও জ্যাক গোল্ডস্মিথ জয় পেতে লন্ডনের কিছু এলাকায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা চালান এবং কোন কোন এলাকায় ভোটাররা নিগৃহীত হন। তারা বিভিন্ন জাতিগত ও ধর্মীয় গ্রুপগুলোকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ভয়-ভীতি দেখান ও শ্লেষোক্তি ব্যবহার করেছেন। যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কৌশলের অনুরূপ। তবে লন্ডনবাসীর জন্য সেরাটাই প্রাপ্য এবং আমি আশা করি কনজারভেটিভ পার্টি কখনও এর পুনরাবৃত্তি করবে না। অভিজাত ধনকুবের পরিবারের সন্তান জ্যাক গোল্ডস্মিথ পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে রাজনীতিক ইমরান খানের সাবেক স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের ভাই। প্রচারের শুরু থেকেই সাদিক খানকে উগ্রবাদ ও চরমপন্থীদের সমর্থক বলে আক্রমণ করেন গোল্ডস্মিথ। স্বয়ং ক্যামেরন লন্ডনে বসবাসরত হিন্দু সম্প্রদায়কে যুক্তরাজ্য ও ভারতের মধ্যে ‘বিশেষ সম্পর্কের’ কথা তুলে ধরে গোল্ডস্মিথকে ভোট দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, লেবার পার্টির প্রার্থী সাদিক খান ভয়ঙ্কর ব্যক্তি। সাদিক খান নির্বাচিত হলে লন্ডনের বাসিন্দারা গবেষণাগারের ইঁদুরে পরিণত হবে। গত রবিবার মেইল অন সানডে পত্রিকা গোল্ডস্মিথের লেখা একটি নিবন্ধের সঙ্গে লন্ডনের ২০০৫ সালের বোমা হামলার ঘটনার একটি ছবি জুড়ে দেয়। ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের এমন প্রচারকে ‘বিষাক্ত’ ও ‘বিভাজন সৃষ্টিকারী’ আখ্যায়িত করে সমালোচকরা বলেছেন, প্রচারের এমন নেতিবাচক কৌশল যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে আগে কখনও দেখা যায়নি। কনজারভেটিভদের মধ্যে অনেকেই নির্বাচনী প্রচারের ধরন নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তবে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইকেল ফেলন বলেছেন, প্রশ্ন ওঠা ন্যায়সঙ্গত। তিনি বিবিসি রেডিওকে বলেছেন, উভয় প্রার্থীকেই তাদের অতীত অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিত্ব, বিচার-বিবেচনা ও তারা কাদের সঙ্গে মেলামেশা করেন, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এবং রাজনীতির সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য। পাকিস্তানী অভিবাসী বাসচালকের ৪৫ বছর বয়সী ছেলে সাদিক খান তার জয়কে বিভাজনের পরিবর্তে ঐক্যের বিজয় বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সাউথওয়ার্ক ক্যাথেড্রালে মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং ধনী-গরিব, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী, শ্বেতাঙ্গ-অশ্বেতাঙ্গ, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের, শহরের প্রত্যেকটি অংশের ও লন্ডনের সব মানুষের মেয়র হওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তবে ক্যামেরনকে নিয়ে তার রূঢ় মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হতে পারেন প্রধানমন্ত্রী এবং এতে করে দুইজনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে পারে। তাদের দুইজনকেই আসছে মাস ও বছরগুলোতে লন্ডনের নিরাপত্তা এবং অন্যান্য ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এদিকে সাদিক খানকে বিশ্বের বিভিন্ন নেতারা স্বাগত জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিলারি ক্লিনটন টুইটে লিখেছেন, পাকিস্তানী বাসচালকের ছেলে, শ্রমিকদের অধিকার ও মানবাধিকারের রক্ষক ও লন্ডনের বর্তমান মেয়র, সাদিক খানকে অভিনন্দন। সাবেক কনজারভেটিভ মন্ত্রী সাঈদা ওয়ার্সি, তিনি নিজেও একজন পাকিস্তানী বাসচালকের মেয়ে, সাদিককে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং তাকে আক্রমণ করায় নিজ দলের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
×