ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উন্নয়নমুখী কাজে অনিশ্চয়তা

ঠিকাদারের ইচ্ছায় নির্মাণ হচ্ছে আট কিমি সড়ক

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১১ মে ২০১৬

ঠিকাদারের ইচ্ছায় নির্মাণ  হচ্ছে আট কিমি সড়ক

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ সরকারী নিয়মকানুন নয়, ঠিকাদারের নিয়মনীতিতে চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলজিইডির কাজকর্ম। এতে চলমান উন্নয়নমুখী একটি কাজ বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উন্নয়নবঞ্চিত অঞ্চল বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ও চরইসলামপুর ভাটি এলাকা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রামপুর থেকে পত্তন ইউনিয়নের লক্ষীমোড়া হয়ে চরইসলামপুর বাজার পর্যন্ত সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার উদোগ নেয়া হয় ২০১০ সালে। স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের উন্নয়ন ফান্ডের অর্থও বরাদ্দ হয়। এতে বর্ষায় নৌকা আর শুকনো মৌসুমে হেঁটে চলাচলকারী দেড় লাখ মানুষ গাড়িতে করে বাড়ি যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কাজও শুরু হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃপক্ষের দুর্বলতায় স্বপ্নের সড়ক নির্মাণ শেষ হচ্ছে না নির্ধারিত সময়ে। এমনকি নির্মাণ নিয়েও মানুষের প্রশ্নের শেষ নেই। কাজের মান নিয়েও আছে অভিযোগ। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রামপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে চরইসলামপুর বাজার পর্যন্ত সাড়ে আট কিলোমিটার রাস্তার কাজের কার্যাদেশ দেয়া হয় ২০১৪ সালের ৩ নবেম্বর। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে এ রাস্তাটি নির্মাণের কাজ পায় রানা বিল্ডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চলতি মে মাসেই সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়েছে মাত্র ৪৩ ভাগ কাজ। নির্ধারিত সময়ে সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। কাজের ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ জেনেও না জানার ভান করে আছে। দ্রুত কাজ শেষ করা, ত্রুটি-বিচ্যুতি, মান নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত বারবার তাগিদ দেয়া হলেও কিছুতেই কর্ণপাত করছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সাধারণ মানুষ, জনপ্রতিনিধি, কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দূরবর্তী এলাকা থেকে মাটি এনে রাস্তা বানানোর কথা থাকলেও মাটি কাটা হয়েছে রাস্তার পাশ থেকে; ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই মাটি ভেঙ্গে আবার পাশের গর্তেই পড়ছে। ৬ ইঞ্চি পর পর কমপেকশন করে মাটি চেপে আবার মাটি ফেলার কথা থাকলেও তা না করেই মাটি ফেলা হচ্ছে। তাই মাটি রাস্তায় তেমন বসছে না। সড়ক শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়ানোর আগেই ভাঙ্গা, গর্ত মাটি সরে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এদিকে রাস্তার রক্ষার জন্য যে ব্লক দেয়ার কথা অথবা কোথাও কোথাও দেয়াও হয়েছেÑ সেসব ব্লক নিয়েও রয়েছে নানান অভিযোগ। গত ২৭ এপ্রিল এ কাজ পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খলিলুর রহমান ও প্রকল্প পরিচালক মোস্তফা কামাল। তারা ধীরগতি, নিম্নমানের কাজ দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। রানা বিল্ডার্সের সাথে অংশীদারিত্বে যুক্ত ঠিকাদার আতাউর রহমান পিন্টু বলেন, এলাকাটি অনেক বেশি প্রত্যন্ত হওয়ায় এবং যথাসময়ে মাটি না পাওয়া, মালামাল আনা-নেয়ায় নানা অসুবিধা সৃষ্টি হওয়ায় কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে আমরা কাজ শেষ করতে পারিনি। কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে চেষ্টা করছি। স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রায়হান সিদ্দিক বলেন, রামপুর-ইসলামপুর রাস্তাটি দ্রুত নির্মাণ করার জন্য ঠিকাদারকে কঠিন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা না মানলে ঠিকাদারকে এ কাজ থেকে অপসারণ করা হবে।
×