ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আদমশুমারি ও বিবিএস তথ্যের ভিত্তিতে কাউন্সিলর নির্ধারণ

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ১১ মে ২০১৬

আদমশুমারি ও বিবিএস  তথ্যের ভিত্তিতে  কাউন্সিলর নির্ধারণ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আগামী ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলকে সামনে রেখে ২০১১ সালের আদমশুমারি এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ নির্ধারিত হার নির্ধারণ করে জেলা পর্যায়ে কাউন্সিলরের সংখ্যা নির্ধারণ করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে সাড়ে ছয় হাজার কাউন্সিলরের সংখ্যা নির্ধারণ করেছে দলটি। তবে বিবিএসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী কাউন্সিলর নির্ধারণ করতে গেলে তা ৮ থেকে সাড়ে ৮ হাজার পেরিয়ে যাবে। তবে গত দুই/এক বছরে আদমশুমারি না হওয়ার ফলে মহানগরীগুলোতে জনসংখ্যা নির্ধারণ জটিলতায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। শীঘ্রই দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী কাউন্সিলর সংখ্যা চূড়ান্ত করবেন দফতর উপ-পরিষদের নেতারা। দফতর উপ-পরিষদের নেতারা জানিয়েছেন, উপ-পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা শীঘ্রই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে কাউন্সিলর ফি নির্ধারণ, ডেলিগেটরদের নাম ধানম-ির কার্যালয়ে পাঠানোর সময়সীমাসহ জেলা সাধারণ সম্পাদকদের রিপোর্ট জমার তারিখ নির্ধারণ করবেন। গত কাউন্সিলে একটি সংশোধনীর ফলে এবারই প্রথম আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো থেকেও নির্দিষ্ট সংখ্যক কাউন্সিলর নেয়া হবে। আর প্রবাসী সংগঠনগুলো থেকেও কাউন্সিলর নেয়া হবে কি না, সেটিও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে দলটি। গত ২৮ এপ্রিল দফতর উপ-পরিষদের সভায় সম্মেলন উপলক্ষে আগামী ৩০ মের মধ্যে জেলা নেতাদের কাউন্সিলরের তালিকা পাঠানোর আহ্বান করেন উপ-পরিষদের আহ্বায়ক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ৩০ মের মধ্যে কাউন্সিলরের তালিকা পাঠাতে জেলা কমিটিগুলোকে নির্দেশ দিয়ে চিঠি যাবে। আর কতজন কাউন্সিলর পাঠাবে এটা আমাদের গঠনতন্ত্র দেখে এবং নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে পরামর্শ করে সংখ্যাটা জানিয়ে দেব। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কাউন্সিলরের সংখ্যা নির্ধারণের কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত দলটির সিনিয়র নেতা আবদুল মান্নান এমপি জনকণ্ঠকে বলেন, ২০১১ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে কাউন্সিলরের সংখ্যা নির্ধারণ হলে সেক্ষেত্রে মোট সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ হাজার হবে। তবে বিবিএসের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী জনসংখ্যার ভিত্তিতে করা হলে সেক্ষেত্রে কাউন্সিলর ৮ হাজার পেরিয়ে যাবে। আর মহানগরীতে কীভাবে হবে সেটি নিয়েও দলের প্রধানের সঙ্গে আলোচনার বিষয় রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা প্রাথমিকভাবে একটি খসড়া তৈরি করছি। উপকমিটির আহ্বায়ক ওবায়দুল কাদের শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁর প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করা হবে। ২০১১ সালে প্রকাশিত সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫ লাখ ৮৪ হাজার। তবে মঙ্গলবার ১০ম বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ওয়েবসাইটে দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৬৫ লাখ ৬০ হাজার ৫০ জন। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৬ (খ) ধারায় বলা আছে, ‘প্রত্যেক মহানগর ও জেলার প্রতি ২৫ হাজার জনসংখ্যার জন্য একজন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। ভগ্নাংশের বেলায় যথাক্রমে প্রতি ১২ হাজারের অধিক জনসংখ্যার জন্য একজন কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন।’ এছাড়াও একই অনুচ্ছেদের (ঘ) ও (ঙ) ধারায় আরও বলা আছে, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের কর্মকর্তাসহ সদস্যবৃন্দ পদাধিকার বলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর হবেন। ত্রিবার্ষিক, বার্ষিক কাউন্সিল বা বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশন আহুত হবার পর সহযোগী সংগঠনের নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর হিসেবে মনোনীত হবেন।’ গত ২০ মার্চ গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আগামী ১০ ও ১১ জুলাই দু’দিনব্যাপী দলের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এরপর গত ১১ এপ্রিল ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটিসহ ১১টি উপকমিটি ঘোষণা করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ১৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সম্মেলনে ৬ হাজার একশ’ কাউন্সিলর ছিল। তবে এবার কাউন্সিলর সংখ্যা সাড়ে ৮ হাজার পেরিয়ে যাবে বলেই মনে করছেন দফতর উপ-পরিষদের সদস্যরা। সূত্র জানায়, গত ২৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানম-ি-৩/এ প্রিয়াংকা কমিউনিটি সেন্টারে দফতর উপ-পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে উপ-পরিষদের আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নানকে সমন্বয়ক করে উপ-পরিষদের তিনজন সদস্যকে কাউন্সিলরের সংখ্যা নির্ধারণের দায়িত্ব দেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা গত কয়েক দিন থেকে ধানম-ির দলের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকে বসে কাউন্সিলর সংখ্যার একটি প্রাথমিক খসড়া নির্ধারণ করেন। সূত্র আরও জানান, ইতোমধ্যে প্রতিটি জেলার জন্য প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কাউন্সিলরের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারি এবং বিবিএস থেকে প্রাপ্ত হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিটি জেলার জন্য কাউন্সিলরের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বিপত্তি দেখা দিয়েছে মহানগরীগুলো নিয়ে। কারণ সম্প্রতি কোন আদমশুমারি না হওয়ায় মহানগরীগুলোতে কাউন্সিলর সংখ্যা নির্ধারণে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে উপ-পরিষদের আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিবের নেতৃত্বে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দুই একদিনের মধ্যেই দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করে করবেন। এছাড়াও দেশের বাইরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কমিটিগুলোর কাউন্সিলরের সংখ্যা নির্ধারণের বিষয়েও সভানেত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করবেন তারা। এবার গত সম্মেলনের তুলনায় প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার কাউন্সিলর সংখ্যা বৃদ্ধি হবে। তাই ইতোমধ্যেই জেলা কাউন্সিলরদের খসড়ার তালিকাটি দফতর উপ-পরিষদের আহ্বায়ক এবং দলের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপের কাছে দেয়া হয়েছে বলে সূত্রটি জানায়। আজ স্বাস্থ্য উপ-পরিষদের সভা ॥ আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক জাতীয় কাউন্সিল সফল করতে গঠিত স্বাস্থ্য উপ-পরিষদের সভা আজ বুধবার বিকেল ৩টায় ধানম-ির প্রিয়াংকা কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন উপ-পরিষদের আহ্বায়ক ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। সভায় সংশ্লিষ্ট সব সদস্যকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন উপ-পরিষদের সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু।
×