ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিজামীর ফাঁসি

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১২ মে ২০১৬

নিজামীর ফাঁসি

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত; হত্যাকারী ও নারী ধর্ষক আলবদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর দ-াদেশ কার্যকর হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দ- প্রদান করা হয় তার। এই দ-াদেশ কার্যকরের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর হলেও দেশ এবং জাতি কলঙ্কমুক্ত হলো। মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদ এবং তিন লাখের বেশি মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ দায়মুক্ত হলো। দীর্ঘ চার দশক পর হলেও একাত্তরের নরপশুরা বিচারের সম্মুখীন হয়েছে, তা অবশ্যই জাতিকে দায়মুক্তভাবে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। বর্তমান সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসিকতার সঙ্গে সকল প্রতিকূলতা, বিরোধিতা, প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রেখেছেন। এ জন্য দেশ ও জাতি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। কেউ ভাবতে পারেননি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এদেশের মাটিতে হবে। কিন্তু সেই অসাধ্য সাধন করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। জামায়াত-বিএনপি জোট বিচার ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য নানা ধরনের কূটকৌশল অবলম্বন করেছিল। প্রচুর অর্থ ব্যয় করে দেশে-বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেও সুবিধা করতে পারেনি। এমনকি বিচার কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে তারা দেশজুড়ে গুপ্তহত্যা পেট্রোলবোমা মেরে বাসযাত্রী হত্যাসহ নানারকম অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে একাত্তরের সেই নৃশংস পথ ধরেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ক্ষুব্ধ পাকিস্তান। কারণ, তারা জামায়াত নেতাদের এখনও তাদের প্রাণপ্রিয় নাগরিক মনে করে। নিজামীর ফাঁসিতে আবারও প্রমাণিত হলো অপরাধীরা পার পেতে পারে না। বিচার ও শাস্তির ফলে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দীর্ঘদিনের কষ্ট-যন্ত্রণার কিছুটা হলেও উপশম হলো। যুদ্ধাপরাধীরা বিচারের সম্মুখীন হবেইÑ এমন দৃঢ়তায় আজ সংঘবদ্ধ পুরো জাতি, জামায়াত-বিএনপি ছাড়া। তারা একাত্তরের মতো এখনও দেশবিরোধী। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধাপরাধী ও তাদের ধ্যানধারণাকে মোকাবেলা করতে হবে। একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে ইসলামী ছাত্রসংঘ সভাপতি নিজামী আলবদর নামক খুনী সংগঠন গঠন করে সারাদেশে বাঙালী ও মুক্তিযোদ্ধা নিধন, নারী ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছিল। স্বাধীনতার পর এরা পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। ১৯৭৫’র ১৫ আগস্টের পর এরা জান্তাশাসক জিয়ার হাত ধরে রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজে পুনর্বাসিত হয়। নিজামীকে বেগম জিয়া তার সরকারের প্রথমে শিল্প ও পরে কৃষিমন্ত্রী করেছিলেন। স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকাত্তোলনের ব্যবস্থা করে দেয়। জামায়াত- ছাত্রশিবির মিলে পঁচাত্তরপরবর্তী রগকাটা শুধু নয়, মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, মুক্তমনা, স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তিকে হত্যা করে আসছে। জামায়াত পাকিস্তানভিত্তিক রাজনৈতিক দল। কেন্দ্রীয় অফিস করাচীতে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাসহ মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ সমর্থকদের অর্থে এরা পরিচালিত। নিজামীর ফাঁসির মধ্য দিয়ে একাত্তরের অন্ধকার যুগের একটি বড় অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের কনফেডারেশনের জন্য এরা দীর্ঘদিন ধরে নানা ষড়যন্ত্র করে আসছিল। নিজামী একজন কুলাঙ্গার, গাদ্দার, বেঈমান, নরাধম, বিশ্বাসঘাতকের নাম। তার অনুসারীরা আজও দেশে নাশকতা চালিয়ে আসছে তারই নির্দেশিত পথ ধরে। পাকিস্তান বাহিনীর কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর প্রধান নিজামীর ফাঁসির মধ্য দিয়ে জাতি তার স্বাধীনতা রক্ষার প্রতি পূর্ণ শক্তি প্রদর্শন করতে পেরেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফেলেছে স্বস্তির নিশ্বাস। বাংলাদেশ মুক্ত হলো আরও এক কলঙ্কের অধ্যায় থেকে। তরুণ প্রজন্ম গগনবিদারী হাঁক দিয়ে বলতে পারে, দেশকে যুদ্ধাপরাধী মুক্ত করবই।
×