ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে ঢাকা-দিল্লী

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৩ মে ২০১৬

জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে ঢাকা-দিল্লী

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ঢাকা-দিল্লী আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে নোট বিনিময় হয়েছে। দুই দেশ দ্বিপক্ষীয়ভাবে সন্ত্রাস প্রতিরোধে জোর দেবে। এছাড়া আগামী অক্টোবরে ভারতে অনুষ্ঠেয় ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানানো হয়। ঢাকা-দিল্লীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনার জন্য বুধবার ঢাকায় আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৃহস্পতিবার সকালে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব বৈঠকে বসেন । বৈঠক শেষে জয়শঙ্কর সাংবাদিকদের বলেন, আমি পররাষ্ট্র সচিবকে জানিয়েছি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ের প্রতি জোরালো সমর্থন জানাতে এসেছি আমি। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে এটি আমাদের জন্য উদ্বেগের। এ ব্যাপারে ঢাকার সঙ্গে সব সময়ই যোগাযোগ রেখে চলেছে নয়াদিল্লী। আমরা সন্ত্রাস দমনে এক সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নয়াদিল্লী সব সময় ঢাকার পাশে থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর। এস জয়শঙ্কর জানান, আমরা দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়ে আলোচনা করেছি। এর মধ্যে জ্বালানি, বিদ্যুত, যোগাযোগসহ অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি। সচিব পর্যায়ের বৈঠকের বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তথ্য বিনিময় হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, আমাদের বিশ্লেষণে মিল রয়েছে। এ বিষয়ে দুই দেশ ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে বলেও জানান তিনি। শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ দমন করবে। এ জন্য এখন দুই দেশের মধ্যে যে কাঠামো রয়েছে তা ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী করা হবে। শহীদুল হক জানান, আগামী অক্টোবরে ভারতে অনুষ্ঠেয় ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী তা গ্রহণ করে ভারত সফরের বিষয়ে নীতিগত সম্মতিও জানিয়েছেন। তিস্তা চুক্তির বিষয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, আমরা এ বিষয়ে আশাবাদী। দুই দেশের মধ্যে জলবায়ু, পানি, খরাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি চান দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাত দেশের জোট বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল এ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) সদস্য দেশগুলো ব্রিকসের সম্মেলনে অংশ নিক। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার জোট ব্রিকসের অষ্টম শীর্ষ সম্মেলন ভারতের গোয়ায় হওয়ার কথা রয়েছে। এই সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মোদি। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরের বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় যেসব চুক্তি হয়েছিল, সেসব চুক্তির অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা হয়েছে। দুই পক্ষই চুক্তির অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন, ত্রিপুরা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ, বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ড উইথ সরবরাহ, চট্টগ্রাম থেকে কৃষ্ণাপত্তনমে নৌ পথে জাহাজ চলাচল, দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্রেডিট লাইন চুক্তির বিষয়ে পর্যালোচনা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. জয়শঙ্কর বৈঠকে জানিয়েছেন, সন্ত্রাস, উগ্রবাদ ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে সদা প্রস্তুত রয়েছে ভারত। এছাড়া বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর সাম্প্রতিক হামলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে পরামর্শ সভা (জেসিসি) অনুষ্ঠানের জন্য আলোচনা হয়েছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় এই সভা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় ॥ বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে ওয়াশিংটনের সঙ্গে দিল্লীর নিরাপত্তা সহযোগিতার ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় সভা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেল মতবিনিময় সভা শেষে এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ আবদুল মান্নান গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এ সময় বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করার কথা কাগজে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন জয়শঙ্কর। এর কোন ভিত্তি আছে বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে তাদের বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন সমস্যার কথা উঠে এসেছে। দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সম্পর্ক কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায়, সেটি নিয়ে কথা হয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার জন্য জয়শঙ্কর এসেছেন। বাংলাদেশের সন্ত্রাস দমনে নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করার বিষয়টি এখানে এসে শুনেছেন বলে জানিয়েছেন জয়শঙ্কর। এ ব্যাপারে তার কোন মন্তব্য সেভাবে ছিল না। জাতীয় সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল এসে বলেছিলেন সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশ, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত কীভাবে কাজ করবে? তিনি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, আমরা তো বলিনি। উল্লেখ্য, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর বুধবার রাতে ঢাকায় পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। দুই দিনের সফর শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।
×