ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কবিতা

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ১৩ মে ২০১৬

কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেলে না উত্তর দাউদ হায়দার প্ল্যানচেটে পেয়ে গেছি রবীন্দ্রনাথ। সোনার তরী থেকে রক্তকরবীর গূঢ় ব্যাখ্যা জেনে নেবো, প্রয়োজনে জিগ্যেস করবো কী করে বাঁচবো, বাঁচাবো নিজেকে? চারদিকে হননের গান, অসহিষ্ণুতা। পাড়ায়-অঙ্গনে প্রকাশ্যে মস্তানি, গুপ্তহত্যা, ভয়ের সংস্কৃতি। ক্রমশ এগিয়ে আসছে ধ্বংসের দিন। সমস্ত সরণি- প্রান্তর জল্লাদ আর যমের দখলে। বধ্যভূমির সম্প্রীতি। রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করোনি। নাগিনীরা ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস। সর্বত্র নেকড়ে-ভালুক-সিংহের সমাহার। ঘরে-ঘরে নেই আর বীর, যোদ্ধা। অথচ সমর। প্রত্যেকেই ভীরু আজ, বলুন ঠাকুর, কার হাতে দিতে চান ভুবনের ভার? মেলে না উত্তর ০৬ . ০৫ . ২০১৬ বার্লিন , জার্মানি টুকরো জীবন রাহমান ওয়াহিদ দু’টুকরোই তো জীবন। অর্ধেকটা যায় নক্ষত্র গুণে, বাকিটা জল আগুনে। এক টুকরো ভাগাভাগিও হতে পারে। যেমন, সকালের তিস্তা যদি হয় তোমার বিকেলের পদ্মটা হতে পারে আমার। হাতে পারে এমনও যে- তোমার মেঘগুলো ছড়াবে কুয়াশা আর আমার আঙ্গুল ছোঁবে রাতের বিরহ। মন্দ কি, যদি এমনটা হয়- তুমি আকাশের পেটে ফোটাচ্ছো বকুল আমি বন-বাদাড়ে কুড়োচ্ছি হীরের মুকুল। দু’ টুকুরো তো জীবন। না হয় হলোই বা এমন- তুমি আমি কেউ নই, তবুও লেগে রই বৈয়ামের তেলডোবা আচার হয়ে কারো বা স্বাদে, কারো বা বিস্বাদে জীবন জীবনের মতো যাক বয়ে বয়ে। ঘাতকযুবক শেখ আতাউর রহমান ‘অ চড়বঃ রং ফরারহব : চড়বঃরপং : অৎরংঃড়ঃষব হে ঘাতকযুবক, কোনোকোনো বিমূর্ত রাতে চিতার থাবার মতো হানা দাও আমার বদ্ধজানালায়, তখোন মত্ত হয়ে উঠি, ‘মহামায়া’ হয়ে যাই আমি- রাসভ ‘রাজীব’ জড়িয়ে ধরেছে পা -তাকে আছড়ে ফেলে উধাও হই আবলুশ আঁধারে অ-প্রেমের অন্ধ কারাগারে! আমার সঙ্গে এ-তোমার কেমন লীলাখেলা? সারাদিন সারাবেলা? ‘বিজন বেদনা’য় আমাকে কেনগো বিদ্ধ কর বারংবার? বীভৎস কঙ্কালের অক্ষিগহ্বরে জীবন্ত বিস্ফারিত চোখে অতর্কিতে ‘মণিমালা’ কেন দাঁড়ায় এসে আমার সম্মুখে, ছড়ায় আতঙ্ক অস্তিত্বের ভিতে অশরীরী ইঙ্গিতে! এ-যাতনা কি শুধু আমার? আর কারো নয়? -শুধুই আমার? নাই সংহার? তুমিতো ‘কাদম্বরী’কে চুমু খেয়েছিলে -লালাভেজা আঠালো চুম্বন! কতোক্ষণ? এরই পরিমাণ তবে ওই দুখি রমণীর লেলিহান অগ্নিদাহন? তোমার চে আর কে বোঝে ভালো এ-জগতে রিলেটিভ সবকিছু- কেরোসিন কখনো বা পারফিউম হয়ে যায় আশাহীন মানুষের কাছে অমোঘ নিয়তির মতো আত্মহনন তাকে বাঁধে নাগপাশে! তবে কেন এই জীর্ণজীবন নিয়ে তোমার উথালপাতাল জুয়াখেলা? ‘বেলা অবেলা কালবেলা’? আমিও যে ‘তারাপদ’ -বুনোমেঘের গর্জনে উতল হই, ছিঁড়তে চাই ‘কুমু’র বন্ধন ভয় পাই ‘লাবণ্য’কে -চোখে তার প্রেম নয়, দেখি ত্রাস- সেকি ‘আমার সর্বনাশ’? কখনোবা ধর্ষণে কাতর হই ‘মধুসূদন’ দানবের কাছে ‘কুমুদিনী’ সেতো এক ডেকাডেন্ট সামন্তমেয়ে -ভুঁইফোড় স্থূলধনীকের কাছে আত্মসমর্পণ ছাড়া তার আর কিবা আছে! এ-জীবন আতঙ্ক এক-ভয় পাই তাই প্রতি ‘রবিবার’ ফিরে আসে ‘মণিমালা’ আবার আবার! তুমি কি সেই কুহকপাখি আমার নিঃসঙ্গতায় ডেকে ওঠো অকস্মাৎ আঁধার সন্ধ্যায়? হননে প্রলুব্ধ কর, বল, মর মর! তুমুল বজ্রাঘাতে দগ্ধ করেছো আমাকে অবিরাম আমার অগ্নিস্নান ধুঁকে ধুঁকে মরি জিজিবিষু মানব সন্তান! পঁচিশে বৈশাখ শাপগ্রস্ত করেছো আমাকে, অনর্গল রক্ত ঝরে অ-সুখে আঘাতে ধস্ত করে তোমার সহস্র সক্রুদ্ধ অগ্নিবাণ সুদক্ষ নির্ভুল লক্ষভেদি হে সুচতুর স্নাইপার, প্রার্থনা, এবার শাপমুক্ত কর আমাকে চাই গো পরিত্রাণ!! ছাড়পত্রের ছবিওয়ালা ফকির ইলিয়াস আমার কপালে তুমি এঁকে দিতে চাইছো যে রেখাচিত্র- জানি, তা আমার ভাগ্য বদলাবে না। তবু বৃষ্টিফোঁটার শীতল পরশ নিতে আমি আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিই আমার মুখমণ্ডল। যে অশ্রু চোখের পাতা ভেজাতে পারে না- তুলে রাখি সেই কান্নার উষ্ণতা। নিঃশর্ত দানপত্রে লিখে দিই আমার প্রেম, আমার পরব। ছাড়পত্র হাতে যে ছবিওয়ালা প্রতিদিন নির্ণয় করে মানুষের দেশান্তর-ভাগ্য, ঠিক তার মতো তুমিও তুলে রাখতে চাইছো আমার স্থিরচিত্র। রঙিন আলোয় ভরিয়ে দিতে চাইছো আমার সঞ্চিত সাদা-কালো যুগ। আলোর দিব্যি দিয়ে উজ্জ্বল করছো বিনয়ের বৃন্দাবন। আমার জন্য তুমি সাজাচ্ছো যে মুক্তোর মালা, তা কি কোনও কাজে লাগবে আমার! এর উত্তর জানা নেই। তবে এটুকু জানি- একটি আনন্দঘন নৃত্যসন্ধ্যার খোঁজে তোমার পায়েই আলতা পরিয়ে দিয়েছিল এই প্রবীণ ধরণী। আমি নিখিল আনিসুর রহমান ধর্মদোষে জেলখাটার পর, এই তো সেই ভিটে, বাবার চিতা মায়ের ঘর, উড্ডীন পতাকা আজও চোখে পড়ে, চেনা পথ অচেনা ট্রাফিক ধরে আমি দেখি চেনা বর্ণমালা শুনি অচেনা উচ্চারণ, ভুলচোখে দেখে তারে সবুজ রেখে কেনে দেয়ালে চোখ ঠেসে, লালনের গান ছেড়ে ভুতুড়ে আাওয়াজ তুলে, আসমানী দোহাইয়ে কে দোকান খুলে? চারদিকে কেনো আজ গায়েবি কানাকানি? জীবন ঠেলে মরণরে কাছে টানি? জমজম কূপের নাম ভুলে অন্ধজন আনবিক বোমা করে ক্ষেপণ, ওরা কারা এতো প্রখর দেখে অর্বাচীনরে চিনে নিতে পারে অভিষেকে জীবিতরা মৃত হোক, মৃতরা দরবার চালাক কালো খাকি জলপাই রঙে মহড়া দিক; আমি তুমি সে এসব নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে যাই এই ধর্মদেশে, অর্বাচীনটা আবার কে? হ্যাঁ অর্বাচীনেরা জমিন ছেড়ে গেলে জমিনের কি থাকে? কার ইশারায় কার পিঠে চাবুক কর্তার পকেট গরম মেজাজ ভালো; কার হুকুমে কার ঘাড়ে ছুড়ি পড়ে? এই হিসাব কে কবে জানে? জানে না; পিতা খুন হলে এতিমের বসতভিটায় ভূতের আছর পড়ে, বিষ দিয়ে গরু মারে শকুনের উপর দোষ পড়ে, খাওয়া পড়া বাঁচা মরায় এতিমের বিপদ বাড়ে আর বাড়ে; বাবা মারা গেলে জমি দখলের লোভে মায়ের উপর খড়গ নামে, চাল চুয়ে পানি ঝরে, কুড়ে ঘরে বাজ পড়ে! তবুও অর্বাচীনের বয়স বাড়ে, অর্বাচীন বড় হয়, বড় তাকে হতেই হয়, জমিনের অধিকারে; জীবনের পথে হাঁটা ধরে, রাত দিন কারবার করে বাজারের খুপড়ি ঘরে; বালক সে বড় হয়; কথার পিঠে কথায় অর্বাচীনের কেনো দোষী করে? ভগবান জানে না, আল্লাহ খোদা কেউ জানে না, অর্বাচীন জানে না; জানে পিতার খুনের জিম্মাদার, কার পোষা চকিদার? নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার; নিখিলের ঘাড়ে ছুড়ি পড়ে, আজরাইলের ঘাড়ে দোষ পড়ে বোকা অর্বাচীন কয়, মেরো না আমারে, আমি নিখিল, গোপালপুরের নিখিল আফসোস! সরল সে বুঝল না, নিখিল নামেই যত দোষ, গ্রামের মন্টু ঘোষ, পঁচাত্তরে পিতা খুন হবার পরে জন্ম পরিচয় সঙ্কট বাড়ে, কে বাঁচে, কে মরে? চকিদারি দুনিয়ায় জান হাতে করে, জান হারালো,’ নিখিল’ নামটি আঁকড়ে ধরে !
×