ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পিতার ভারতে বিক্রি করতে নেয়া তিন কন্যা কি মায়ের কোলে ফিরতে পারবে?

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১৪ মে ২০১৬

পিতার ভারতে বিক্রি করতে নেয়া তিন  কন্যা কি মায়ের  কোলে ফিরতে  পারবে?

সমুদ্র হক ॥ বাংলাদেশ থেকে পিতা কর্তৃক তিন কন্যাশিশুকে বিনা পাসপোর্টে বিক্রির উদ্দেশ্যে ভারতে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ তাদের আটক করে তিন শিশুকে সেফহোমে পাঠায়। এই শিশুরা তাদের মায়ের কোলে ফিরতে পারবে কি-না তা নিয়ে সংশয় দানা বেঁধে উঠেছে। উল্লেখ্য, বগুড়ার ধাওয়াকোলা গ্রামের সহোদর রাজ্য চন্দ্র কর্মকার ও বাবলু চন্দ্র কর্মকার তাদের স্ত্রী যথাক্রমে দীপালি রানী কর্মকার ও তপতি কর্মকারকে ফাঁকি দিয়ে মেলা দেখার নাম করে তিন কন্যাসন্তান টুসু কর্মকার (৮), রিংকি কর্মকার (৭) ও পিংকি কর্মকারকে (৫) নিয়ে ভারতের শিলিগুড়ি যায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। সেখানে গিয়ে ফোনে জানায়, দীপালির দুই মেয়ে রিংকি ও টুসু এবং তপতির মেয়ে পিংকিকে বিক্রি করে দিয়ে তারা ভারতে নতুন করে সংসার পাতবে। দীপালি তপতি সম্পর্কে জা। তাদের অপরাধ কন্যাসন্তান প্রসব। তারা দেশে তাদের বসতভিটা বিক্রি করে দেয়। বিষয়টি দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত হওয়ার পর দীপালির ভাই কৃষ্ণ চন্দ্র ভারতের শিলিগুড়ি গিয়ে দার্জিলিংয়ের ফাসিদেওয়া থানাকে অবহিত করে। মার্চের ৪ তারিখে রাজ্য চন্দ্র ও বাবলু চন্দ্রকে ফাসিদেওয়া থানা পুলিশ গ্রেফতার করে এবং তিন কন্যাশিশুকে উদ্ধার করে কোচবিহারের শিশু চাইল্ড ওয়েলফেয়ারের একটি সেফহোমে পাঠায়। রাজ্য চন্দ্র ও বাবলু চন্দ্রকে আদালতে সোপর্দ করার পর জামিনে মুক্তি পায়। দীপালির ভাই কৃষ্ণ চন্দ্র জানান, তিন কন্যাশিশুকে কাছে না পেয়ে তাদের মা দীপালি ও তপতি পাগলপ্রায়। মেয়েরা কিভাবে সেফহোমে আছে এ নিয়েও তারা চিন্তিত। আইনের আওতা ছাড়া এই তিন কন্যাশিশু দেশেও আসতে পারছে না। ওদিকে রাজ্য চন্দ্র ও বাবলু চন্দ্র ভারতের শিলিগুড়িতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেছে। যদিও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তারপরও তারা কন্যাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এই অবস্থায় দীপালির ভাই কৃষ্ণ কলকাতার গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা কমিটি (এপিডিআর) ও কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনারের কাছে কন্যাশিশুদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা চান। এপিডিআর বাংলাদেশের আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালকের কাছে তিন শিশুকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে নিতে এবং অভিযুক্ত পিতাদের আইনের মুখোমুখি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানায়। কৃষ্ণ চন্দ্র জানান, অভিযুক্ত রাজ্য চন্দ্র ও বাবলু চন্দ্র এবং তাদের বাবা-মা দীপালি ও তপতির ওপর যৌতুকের জন্য নির্যাতন করত। তারা তাদের ভিটেবাড়ি বিক্রি করে স্ত্রীদের রেখে কন্যাদের নিয়ে পালিয়েছে। তিন শিশুকন্যাকে পাসপোর্ট ছাড়াই অবৈধভাবে পার করে নিয়েছে ওদের বাবা। কী করে এই তিন শিশু দেশে ফিরবে আর কিভাবে তাদের বাবা আইনের আওতায় আসবে বিষয়টি নিয়ে কৃষ্ণ চন্দ্র মানবাধিকার সংস্থার কাছে যাচ্ছে। তারা পরামর্শ দিয়েছে বিষযটি মিডিয়াতে এলে দুই দশের সরকার তা জেনে শিশুকন্যাদের দেশে ফিরিয়ে আনার আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। আরেক সূত্র জানায়, রাজ্য চন্দ্র ও বাবলু চন্দ্রের ভিসার মেয়াদ আছে আগস্ট পর্যন্ত। বাংলাদেশ-ভারত দু’পক্ষই আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে পারে। মায়েদের ছেড়ে থাকা কন্যাশিশুরা মায়ের কোলে ফিরতে পারে।
×