ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দিন বদলের বার্তা বামদের

প্রকাশিত: ১৯:০১, ১৪ মে ২০১৬

দিন বদলের বার্তা বামদের

অনলাইন ডেস্ক ॥ ব্যবধান পাঁচ বছরের। ভোটের ফলপ্রকাশের আগে এ বার ঠিক বিপরীত অবস্থান দুই শিবিরের! শাসক দল বলছে, ১৯ মে-র পরে এ বার চড়াম চড়াম ঢাক বাজতে পারে! বিরোধী বামেরা এ বার বার্তা দিল, ঢাকের সঙ্গে কাঁসর বাজানোর দরকার নেই! জিতলে বিজয় মিছিলও চাই না। বরং, ভোট-পরবর্তী আক্রমণ বন্ধ করার দায়িত্বই সকলের কাঁধে তুলে নেওয়া উচিত। পরিবর্তনের ভোটের সময় ২০১১ সালে বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ৩৪ বছরের বাম জমানার অবসান হলে তাঁরা কোনও বিজয় উৎসব করবেন না। তাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। উচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্য নিয়েই সে বার তৃণমূলের বিজয় সমাবেশ হয়েছিল ফল বেরেনোর দু’মাস পরে ২১ জুলাই ব্রিগেড ময়দানে। বদলার রাজনীতি চান না বলে ঘোষণা করে মমতা নির্দেশ দিয়েছিলেন, পালা বদলের পরে পাড়ায় পাড়ায় রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজাতে হবে। আর এ বার ভোট-পর্বের শেষ দিকে সেই মমতাকেই যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে ১৯ তারিখের পর রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজবে কি না, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘না! কী বাজবে, মা-মাটি-মানুষ ঠিক করবে!’’ অনুব্রত মণ্ডলের মতো দিদির স্নেহধন্য তৃণমূল নেতারা আরও এদিয়ে চড়াম চড়াম ঢাক বাজানোর নিদান দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতেই পুরনো মমতার ভূমিকায় এ বার দেখা যাচ্ছে সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুদের। জোট সরকার ক্ষমতায় এলেও বিজয় মিছিল দরকার নেই বলে জানিয়ে তাঁর বাম কর্মী-সমর্থকদের নির্দেশ দিচ্ছেন, ফল ঘোষণার পরে পাড়ায় পাড়ায় যাতে হামলা না হয়, তার জন্য অতন্দ্র প্রহরীর দায়িত্ব পালন করতে হবে। তৃণমূলের চেয়ে বামেরা যে বেশি দায়িত্বশীল, ফলপ্রকাশের আগে মানুষকে এই বার্তা দেওয়াই সূর্যবাবুদের উদ্দেশ্য। বাম নেতারা বোঝানোর চেষ্টা করছেন, পরিবর্তনের পরিবর্তন ঘটিয়ে রাজ্যে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী। কিন্তু কেউ যাতে আইন হাতে তুলে না নেন, সেই হুঁশিয়ারিও বারবার দিয়ে চলেছেন তাঁরা। নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাসের প্রতিবাদে শুক্রবার ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে অবস্থান-বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছিল ‘আক্রান্ত আমরা’র তরফে। সেই অবস্থান-মঞ্চে গিয়েই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু বলেন, শুধু সরকার বদলের জন্যই মানুষের জোট গড়া হয়নি। লড়াই হচ্ছে দিন বদলের, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি বদলের। বিকল্প সরকার এলে সেই কাজে সুবিধা হবে। সূর্যবাবুর কথায়, ‘‘ওরা বলেছে, চড়াম চড়াম করে ঢাক বাজবে। আমরা কি কাঁসর বাজাব, জানতে চাইছেন অনেকে! আমরা পরিষ্কার বলছি, একটা মানুষও যাতে আক্রান্ত না হন, সেটা শুধু দেখবেন। কীসের বদলা? একটা শিশুকে যারা মারতে পারে, তাদের বাড়ির শিশুকে গিয়ে মেরে আসব? এ কখনও হয়?’’ প্রসঙ্গত, হরিদেবপুর ও হালিশহরের দুই আক্রান্ত পরিবারের তরফে বাসন্তী বর ও দেবশ্রী ঘোষ তাঁদের সন্তানদের নিয়ে এ দিনই মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে গিয়ে দাবি জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের অবাধ ভোটের আহ্বানেই তাঁরা ভোট দিতে গিয়েছিলেন। তার পরে যে ভাবে তাঁদের উপরে আক্রমণ হয়েছে, তার ক্ষয়ক্ষতির দায়ও কমিশনকে নিতে হবে। সঙ্গে ছিলেন শ্যামল চক্রবর্তী, আব্দুল মান্নান, অম্বিকেশ মহাপাত্রেরা। তার আগে এ দিন আলিমুদ্দিনে বামফ্রন্টের বৈঠকেও ঠিক হয়েছে, বিজয় মিছিলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। বৈঠকের পরে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানবাবু বলেন, ‘‘এটা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই। এখন বিজয় উৎসব হবে না।’’ তার মানে তাঁরা কি আত্মপ্রত্যয়ী যে, জোটের সরকারই আসছে? বিমানবাবুর জবাব, ‘‘সব ১৯ তারিখ জানা যাবে! ভোটে কেমন স্যুইং হচ্ছে, কোনও ভোট-বিশেষজ্ঞই তা আগাম বলতে পারছেন না! আমরা শুধু বলছি, যেখানেই জিতি, কোথাও বিজয় মিছিল নয়।’’ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও কেন তারা উৎসব-মিছিল কিছুই চান না, তার আরও স্পষ্ট ব্যাখ্যা এ দিন দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। সূর্যবাবুর বক্তব্য, ‘‘চা-বাগানে খাদ্য নেই, শিশুর গায়েও মারের দাগ, মোষ চুরির অপবাদে ছাত্রকে পিটিয়ে মেরে অভিযুক্ত বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে— এর মধ্যে কীসের উৎসব? সরকার হলে অনেক বড় দায়িত্ব আসবে আমাদের উপরে। কঠিন কাজ করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যেন সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে পারেন, নিশ্চিত করতে হবে।’’ সেই সঙ্গেই বাম জমানার প্রাক্তন মন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘সরকার হলে সেই সরকার আর শুধু পুলিশ-আমলাদের ভরসায় চলবে না। সেই সরকার হবে প্রকৃতই মানুষের সরকার।’’ অতীতের ভুল থেকে তাঁরা যে শিক্ষা নিতে চান, গণনা-পর্বের আগেও সেই বার্তা দিয়ে রেখেছেন সূর্যবাবু। যদিও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘অত বর্ষণ হবে না! মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ফের রাজভবনে গিয়ে শপথ নেবেন।’’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×