ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাবারড্যাম খুলে দিচ্ছে চেল্লাখালীর দু’তীরের সম্ভাবনার দ্বার ২৮শ কৃষক পরিবারে হাসির ঝিলিক

প্রকাশিত: ০১:৩৮, ১৪ মে ২০১৬

রাবারড্যাম খুলে দিচ্ছে চেল্লাখালীর দু’তীরের সম্ভাবনার দ্বার ২৮শ কৃষক পরিবারে হাসির ঝিলিক

রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর ॥ অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে গড়ে তোলা একটি রাবারড্যাম শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্তে ভারতের কোল বেয়ে নেমে আসা খরস্রোতা চেল্লাখালী নদীর দু’তীরের মানুষের বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) বাস্তবায়িত বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের প্রায় ১২ কোটি টাকা অর্থায়নে চেল্লাখালী নদীর সন্ন্যাসীভিটা অংশে ১৪ মে শনিবার বিকেলে ওই রাবারড্যামটি উদ্বোধন করা হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন আব্দুল্লাহসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীসহ এলাকার বিপুল সংখ্যক জনতার উপস্থিতিতে রাবারড্যামটি উদ্বোধন করা হয়। এতে এলাকার প্রায় ২৮শ কৃষক পরিবারে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক। জানা যায়, নালিতাবাড়ী-নকলা নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর প্রচেষ্টায় উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের চেল্লাখালী নদীর সন্ন্যাসীভিটা অংশে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে রাবারড্যাম নির্মাণ করা হয়। ওই কাজের তত্ত্বাবধান করে বিএডিসি। এর দৈর্ঘ্য ৩৬ মিটার ও প্রস্থ সাড়ে ৪ মিটার। ওই বাঁধ স্থাপনের ফলে নদীর উজানে সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলাকায় পানি মজুত থাকবে। ওই মজুত পানির মাধ্যমে উপজেলার বাঘবেড়, রাজনগর ও কলসপাড় ইউনিয়নের ২ হাজার ৮শ কৃষকের ১ হাজার ৮শ ৭৫ একর জমি সেচ-সুবিধা পাবে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার হ্রাস পাবে। কৃষকেরা খুব সহজে কম খরচে তাঁদের জমিতে সেচ দিতে পারবেন। এতে এখানে বোরো ধানের আবাদ ও উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। শনিবার বিকেলে সরেজমিনে গেলে সন্ন্যাসীভিটা এলাকার নদী তীরবর্তী কৃষক রহমত আলী, গৃহবধূ রহিমা বেগম, কৃষক আহাজ উদ্দিন, আশরাফ আলী, কফিল উদ্দিনসহ কথা হয় কয়েকজনের সাথে। তাদের মধ্যে কৃষক রহমত আলী বলেন, ‘বাঁধ অওয়াতে এলাকার মানুষের বিরাট উপকার অইলো। শুকনা মৌসুমে পানির অভাবে এলাকার মানুষ ঠিকমতো চাষবাস করবার পাইত না। অহন হেই দুশ্চিন্তা দূর অইলো।’ একই এলাকার গৃহবধূ রহিমা বেগম (৪০) জানান, ‘চৈত মাসে কোনদিন আশপাশে পানি থাকতো না। প্রতিদিন পাড়ার মহিলারা মিইল্যা নদীর তলা ধইরা হাঁটতে শুরু করছি, কোথাও পানি পাওয়া যায় কি না। পানি না পাইয়্যা নদীর তলা খুইদ্যা গর্ত করছি। এরপর আস্তে আস্তে পানি জমলে সবাই লাইন ধইরা পানি আনছি। আর এহন রাবার ড্যাম হওয়াতে বাড়ির টিউবওয়েলে পানি থাহে। পানির কোন অভাব নাই। আল্লায় কি যে শান্তি করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবছর নদী ভাংছে। আমার বাড়ি-ঘর ভাসাইয়া নিয়া গেছে। ভাইঙ্গা যায় দেইখ্যা কোনদিন ভাল কইরা বাড়ি বান্ধি নাই। এখন রাবার ড্যাম হওয়াতে নদী আর ভাংবো না। এই বছর নিয়ত করছি, সুন্দর কইরা বাড়ি-ঘর করমু।’ স্থানীয় কৃষক আহাজ উদ্দিন (৫৫) জানান, ‘এহন বোরোর আবাদ বাড়ব। নদীতে মাছ থাকব। হাঁস পালন করন যাইবো। গোসল-আসল করন যাইবো। সব দিক দিয়াই সুবিধা অইছে।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফ ইকবাল জানান, প্রথম এক বছর বিএডিসি পরীক্ষামূলক নিজেদের ব্যবস্থাপনায় সেচ সুবিধা দিবে। এরপর অবস্থা বুঝে স্থানীয় কৃষকদের সমন্বয়ে কমিটি করে তাদের হাতে সেচ ব্যবস্থাপনা হস্তান্তর করবে। এর ফলে স্থানীয় অন্তত ২৮শ কৃষক পরিবার রাবার ড্যামের সেচ সুবিধার আওতায় আসবে। এ বিষয়ে বিএডিসি শেরপুর কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. নুর মোহাম্মদ বলেন, এ বাঁধের ফলে উপকারভোগী কৃষকেরা ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করে কম খরচে শুষ্ক মৌসুমে ফসল আবাদ করতে পারবেন। এর ফলে ওই এলাকায় ফসলের উৎপাদন বাড়বে ও ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমবে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক জানান, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর প্রচেষ্টায় চেল্লাখালি নদীতে রাবারড্যামটি নির্মাণের ফলে এলাকার কৃষকদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়েছে। এটি কৃষিক্ষেত্রে বিরাট সহায়তার পাশাপাশি এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।
×