ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ নিজামীর রায় ও পাকিস্তানের আস্ফালন

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১৫ মে ২০১৬

সিডনির মেলব্যাগ ॥ নিজামীর রায় ও পাকিস্তানের আস্ফালন

পাকিস্তানীরা ভুল করেনি। তারা তাদের কাজ করেছে। বাংলাদেশকে এখনও তারা মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। তাদের দালালেরা এদেশে সক্রিয়। দিন দিন সংখ্যাও বেড়েছে তাদের। আমাদের মগজ ধোলাইয়ের মূল কারণ দুটো। এক. ভারত তথা হিন্দু বিরোধিতা, অপরটি কথিত জোস বা পাকিপ্রেম। নিজামীরা এদেশের অস্তিত্ব ও ইতিহাসকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে অনেক বছর তাদের প্রতাপ দেখিয়ে গেছেন। তাদের বিচার বা শাস্তি হতে পারে এটা ভাবতেও পারেনি তারা। ভেবেছিল এদেশ পাকিস্তান না হলেও তার ছায়া হয়ে থাকবে আজীবন। অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল তারা। রাজাকার ও দালালদের পথ ধরে নানা কারণে বদলে যাওয়া সুশীল কুশীলবরা যখন দেশ ও জাতিকে মোহাবিষ্ট করে ফায়দা লুটতে ব্যস্ত, সময় আবারও তার কাজ করে দেখিয়েছে। সেই কবে জননী সাহসিকা জাহানারা ইমাম মাঠে নেমেছিলেন। জনগণ তাঁর সঙ্গে থাকলেও বিএনপি থাকেনি। দেশদ্রোহের মামলা ঠুকে দেশের মানুষকে বিপদে ফেলা যায়; কিন্তু সময়ের কাছে মাফ পাওয়া যায় না। সেই ডাইনোসর বিএনপি এখন লেজ গোটানো ইঁদুর। সত্যের যে কত শক্তি আর সে কিভাবে কথা বলে খালেদা জিয়ার জানার কথা নয়। সময় জানত। তাই পিতামাতা, ভাই ও পরিবার হারানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সঠিক কাজের জন্য সঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় নিয়ে এসেছে। পাকিস্তানের তো ভাল লাগবে না। এটাই নিয়তি। তাদের বাংলা ভাল লাগে না। বাঙালী ভাল লাগে না। বাংলার মুসলমানকে মুসলমান মনে হয় না। সম্প্রদায়গত পরিচয়ে পাকিরা আমার মতো কাউকে কাফের ছাড়া কিছু ভাবতে পারে না। তাছাড়া তাদের সিংহভাগ মগজ ধোলাই করা তালেবান। তার পরও আমার কিছু পাকিস্তানী বন্ধু আছেন যারা নিজেরাই মহাবিপদে। সেখানে বোমায় গুলিতে ড্রোন হামলা বা স্কুলে যারা মারা যায় তারাও কি আমাদের দুশমন? আমরা এমন এক জাতি আমাদের কোন মেয়ে ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদিকে শাদি করবে জানলে ভেতরে ভেতরে খুশি হই। চাই ছেলেও পাকিস্তানী ঝুল জামা শেরওয়ানি গায়ে দিয়ে করাচী বা লাহোরের বিবি নিয়ে আসুক। ওপরে ওপরে বিরোধিতার তাই কানা কড়িও মূল্য নেই। গলদটা আমাদের ভেতরে। পাকিরা লাল-সবুজ পতাকা পায়ে মাড়ায়। কেউ কোনদিন সাকিবের নাম লিখে নিয়ে বলবে না ম্যারি মি। তারা রুটি-ডালের ভারতকে ভাই মনে করলেও ভেতো বাঙালীকে দুশমন মনে করে। দেখলেন না, নরেন্দ্র মোদি উড়ে গিয়ে নওয়াজ শরীফের মার পায়ে কদমবুসি করে এলেন। শিষ্টাচার অবশ্যই। কথা হলোÑ নিজামীর রায়ের পর পাকিরা কি বলেছে বা বলবে সেটা নিয়ে প্রতিক্রিয়ার আগে দরকার ঘর ঠিক করা। ওরা দুনিয়ায় কোন সভ্য জাতি হিসেবে পরিচিত নয়। তাছাড়া তাদের চাচাজান ভুট্টো মিয়া জাতিসংঘে কাগজ ছিঁড়ে রাগ দেখিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। পরে পাকিরাই তাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে দিয়েছিল। এখন আবার তুরস্কও দেখি রাগ করেছে। কোন্ তুরস্ক? কামাল বিন আতাতুর্কের তুরস্ক? সে তো কাগজে-কলমে, আসলে নেই। থাকলে তাকে কত আগে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মেম্বার করা হতো। করা হয়নি। কারণ সে দেশের মৌলবাদ ও জঙ্গীদের মিলিটারি পাহারায় না রাখলে খোলনলচেও বদলে দিত তারা। সে দেশের গাত্রদাহ স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক আমাদের আচরণ। পাকিস্তানকে কড়া জবাব আর যারা এ নিয়ে খামোখা পানি ঘোলা করছে তাদের সমুচিত জবাব দিতে দেরি করা কেন? এ দেশ মুক্ত হয়েছিল আমেরিকা চীনের মুখে কালি দিয়ে। পথ ঠিক থাকলে, সাহস থাকলে তা করা সম্ভব। এখনকার দুনিয়ায় কারও সাহায্য বা পাশে থাকা তেমন জরুরী কিছু না। যারা মৌলবাদ ও জঙ্গীর দোসর বা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে মিত্রতা চায় তাদের যোগ্য ও উপযুক্ত জবাব দেয়ার মতো সাবালক হয়েছে বাংলাদেশ। যদি কোন ভয়-ভীতি থাকে তা মনের। ফলে এখনই তা করার সময়। কোন লাল চোখকে কেয়ার না করা বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনা ভালই জানেন কি করতে হবে। আমাদের দেশে যারা গাছের খায় তলারও কুড়ায় তারাই নষ্টের গোড়া। এরা সরকারী দলে কিলবিল করছে। উঠতে উঠতে কেউ কেউ মগডালে চলে গেছে। সেখান থেকে যারা বিষয়গুলোকে দেখে তাদের কথা শুনলে বিপদ কমবে না। যে সাহস ও প্রজ্ঞা এতদূর নিয়ে এসেছে তার আলোয় চললে বাকিটাও পার হওয়া যাবে। সঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার দেশ যেন সবার হয়। দেশ যেন সব মানুষের ভরসার জায়গা হতে পারে। তাই সহিষ্ণুতা ও সমঝোতার দিকটাও জরুরী। দায়মুক্তির পরের কাজ ও ঝাপটা সামলানোর সময় ঐক্য অটুট থাকুক, দেশে-বিদেশে। [email protected]
×