স্টাফ রিপোর্টার ॥ চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর জন্য স্ত্রীর পরকীয়াকে দায়ী করছেন তার মা নীলা চৌধুরী। রবিবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত চিত্রনায়ক সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরী বলেন, গত ৯ মাসে ১১ বার শুনানির পরও মামলার রায় প্রকাশ করা হয়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমি সাংবাদিকদের সম্মুখে উপস্থিত হয়েছি।
নীলা চৌধুরী বলেন, সালমান শাহ’র শরীরে কোন ক্ষত চিহ্ন ছিল না। যাতে আত্মহত্যা বলে ধরা যায়। তিনি বলেন, সালমান শাহকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। খালি ইঞ্জেকশন পুশ করে বা গলায় চাপ দিয়ে শ্বাসরোধ করে সালমান শাহকে হত্যা করা হয়।
সালমান শাহ’র স্ত্রী সামিরা এই হত্যার সঙ্গে জড়িত দাবি করে নীলা চৌধুরী বলেন, আমার ছেলে সালমান শাহ’র স্ত্রী সামিরা ও তার পরিবারকে আমার পাশে কোন সময় দাঁড়াতে দেখিনি। এমনকি সালমান শাহ’র ঘরে তার স্ত্রীকেও তার কাছে পাইনি। সামিরা এখন সালমান শাহ’র এক বন্ধুর স্ত্রী হিসেবে ঘর-সংসার করছে। এটা কি প্রমাণ করে না যে সামিরা’র পরকীয়া সম্পর্ক ছিল?
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সালমান শাহ’র স্ত্রী সামিরার পরকীয়া সম্পর্ক এবং চলচ্চিত্রের সিন্ডিকেটের কারণে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। কারণ সালমান শাহ ছাড়া আর কারও সিনেমা তখন বাজারে চলতো না। এতে চলচ্চিত্র অঙ্গনের একটা গ্রুপের সঙ্গে শত্রুুতে পরিণত হয়েছিল সালমান শাহ’র। প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ কামনা করে নীলা চৌধুরী বলেন, আইনের শাসনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে দেশে এক বিরল ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সালমান শাহ হত্যা মামলার ন্যায় বিচার দাবি করছি।
এদিকে দুই দশক পরও চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হয়নি। সিআইডি ও বিচার বিভাগীয় তদন্তে অপমৃত্যু উল্লেখ্য করে প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও তা প্রত্যাখ্যান করেন সালমান শাহ’র পরিবার। সর্বশেষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেন সালমান শাহ’র মা নীলুফার চৌধুরী (নীলা চৌধুরী)। আদালত নারাজির আবেদন মঞ্জুর করে পুনঃতদন্তের জন্য র্যাব-৩ কে নির্দেশ দেন।
অপরদিকে পুনঃতদন্ত বাতিল চেয়ে অপমৃত্যুর আবেদনটি গ্রহন করার আবেদন করে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। নারাজির আবেদনে সালমান শাহের মা নীলুফার চৌধুরী উল্লেখ্য করেন, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক সালমান শাহ। সে সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা করেন তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ৩ নবেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ্য করা হয়। ১৯৯৭ সালের ২৫ নবেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত।
এরপর প্রায় ১২ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল। ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ্য করা হয়। ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহর মা নীলুফার চৌধুরী ছেলের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেন। পরে তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি মাসে নীলুফার চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের নারাজির আবেদন দাখিল করেন। আদালত নারাজির আবেদন গ্রহন করে পুনঃতদন্তের জন্য র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: