স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবন সমাজের সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণের ফসল। একজন বাদামওয়ালা এ ভবন নির্মাণে যেমন অংশীদার হয়েছেন তেমনি হয়েছেন কোটিপতিরাও। ভবন নির্মাণে অর্থের বড় অংশটিই এসেছে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। ১০২ কোটি টাকার বিল্ডিংয়ে সরকার মাত্র ৩৫ কোটি টাকা দিয়েছে, বাকিটা সাধারণ মানুষের। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এমন একটি ক্ষেত্র তৈরি করেছে যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে এমন সবাই অংশগ্রহণ করতে পারেন। আশা করছি আগামী ৩ থেকে ৩ মাসের মধ্যে জাদুঘরটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া সম্ভব হবে।
সোমবার সকালে আগারগাঁওস্থ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনে ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ তহবিল’-এ অনুদান গ্রহণের লক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের ১৭তম ব্যাচের ডাক্তারগণ এসময় অনুদান প্রদান করেন। অনুদানের ৫ লাখ টাকা তারা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হকের হাতে তুলে দেন।
অনুদান গ্রহণ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণে সমস্ত কিছুর প্রতি রয়েছে সমাজের শক্তি। এটা জনগণের জাদুঘর। জাদুঘর নির্মাণে বহু ঘটনা বহু গল্প রয়েছে। তরুণ প্রজন্ম কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে তাও বিভিন্ন সময়ে প্রতিফলিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর একটা ক্ষেত্র তৈরি করেছে যেখানে সবাই অংশ গ্রহণ করতে পারে। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ যেমন সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল ঠিক তেমনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরও পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন তারিক আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর সকলের সম্বলিত প্রয়াসের ফসল। গ্যালারিগুলো সাজানো হচ্ছে, আশা করা যাচ্ছে আগামী ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে। ১০২ কোটি টাকার বিল্ডিং এ সরকার মাত্র ৩৫ কোটি টাকা দিয়েছে, বাকিটা আপনাদের মতো সাধারণ মানুষের।
ব্যক্তিগতভাবে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যালের তদন্ত কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম অনুদান প্রদান শেষে বলেন, প্রতিকী ইট ক্রয় করার জন্য যে টাকা দিচ্ছি সেটা কিন্তু টাকা নয়, অন্তরের স্বাদ গ্রহণের জন্য ইট ক্রয় করেছি। এখানে দাঁড়িয়ে যে মুক্তিযুদদ্ধের গন্ধ পাচ্ছি, সেই গন্ধে যেন আমাদের হৃদয়ও মিশে থাকে সেই প্রত্যয়েই এই অনুদান। এসময় তিনি আরও বলেন, আমি ও আমার স্বামী আরও ১ লাখ টাকা করে দেওয়ার আশা করছি।
অনুদান প্রদান করে ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমাদের এই অনুদান প্রদান অন্যান্য অনেক ডাক্তারদেরকেও অনপ্রাণিত করবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ডাক্তাররা অনুদান প্রদানের আগ্রহ দেখিয়েছেন। কেউ কেউ উদ্যোগ নিতেও শুরু করেছেন। তিনি আরও বলেন, সমাজের সব অংশ যাতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অনুদান দিতে পারে সে ব্যাপারে প্রচার ও প্রসার দরকার।
একই ব্যাচের ড. সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা অনেকেই মুখে বলেন, শুধু চেতনার কথা না বলে সবাই যদি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কাজ করে তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে। ওই ব্যাচের ড. মোমেনা শীরিন বলেন, এই ছোট্ট অনুদান প্রদান তারই বহিঃপ্রকাশ, যা আমাদের বংশপরম্পরায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বয়ে চলার নির্দেশক। এছাড়াও ওই ব্যাচের ডাক্তারদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ড. মোঃ শফিকুর রহমান ও ড. মোঃ সেলিম।