ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে ইসরাইলের জন্য দরজা খুলে দেবার আশ্বাস দেন আসলাম

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৭ মে ২০১৬

বাংলাদেশে ইসরাইলের জন্য দরজা খুলে দেবার আশ্বাস দেন আসলাম

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদি ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে দিল্লীতে গোপন বৈঠক করে বাংলাদেশ সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে দিল্লীতে ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদি ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে দেখা হওয়া, বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় একসঙ্গে ঘোরাফেরা, সংবর্ধনা গ্রহণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মেন্দি ও এক নারীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের ছবি তোলাসহ বিভিন্ন বিষয়ের কথা স্বীকার করেছেন আসলাম চৌধুরী। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ডিবি সূত্র জানায়, ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদি শীঘ্রই সবক্ষেত্রে বাংলাদেশের দরজা ইসরাইলীদের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন আসলাম চৌধুরীকে। বাংলাদেশের নাগরিকদের পাসপোর্টেও লেখা থাকে, ইসরাইল ছাড়া সারাবিশ্বে তারা ভ্রমণ করতে পারবে, সেটাও শীঘ্রই পরিবর্তন করে দেয়া হবে বলেও আসলাম চৌধুরীকে আশ্বস্ত করেন মেন্দি এন সাফাদি। এজন্য বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করার প্রয়োজনীয়তার কথা আলাপ-আলোচনায় আসে। তবে আসলাম চৌধুরী মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত, কথাবার্তা, পর্যটন এলাকায় ভ্রমণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলেও কোন গোপন বৈঠকের কথা এখনও জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেননি। মেন্দি এন সাফাদি ও তার সঙ্গে এক নারীর সঙ্গে যে ছবি ফেসবুকসহ গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে তা তার নিজের বলে স্বীকার করেছেন আসলাম চৌধুরী। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক কর্মকর্তা বলেন, আসলাম চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার যথেষ্ট প্রমাণ থাকার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তার কাছে পাওয়া প্রমাণগুলো আদালতে উপাস্থাপন করে মামলার অনুমতি চাওয়া হবে। সরকারের অনুমতি পেলেই তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহ মামলা করা হবে। এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে তা বিশ্লেষণ করে দেখছি। তিনি কী কী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত তাও পরীক্ষা করে দেখছি। কোর্ট রিপোর্টার জানান, ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে মিলে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব এম আসলাম চৌধুরীরসহ দু’জনের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে ঢাকা সিএমএম আদালত। সোমবার ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সারাফুজ্জামান আনছারী দীর্ঘ শুনানি শেষে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে নেয়া দ্বিতীয় আসামী হলেন আসলাম চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী মোঃ আসাদুজ্জামান মিয়া। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর গোলাম রাব্বানী ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় সন্দিগ্ধ হিসেবে আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, আসলাম চৌধুরী গত ৫ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত ভারতে অবস্থানকালে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কবহির্ভূত রাষ্ট্র ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাত করেন, যার কিছু ছবি গণমাধ্যমে এসেছে। গ্রেফতারের পর আসামি জানিয়েছেন, মেন্দির সঙ্গে বৈঠক করে তিনি বাংলাদেশ সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছেন। এ অপকর্মে তার সঙ্গে আর কে কে জড়িত আছে তা জানার জন্য রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। রিমান্ড শুনানিকালে প্রসিকিউশন পুলিশের সহকারী কমিশনার মিরাস উদ্দিন বলেন, ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র মূলত রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি প্রয়োজন হয়, যা প্রক্রিয়াধীন। উক্ত কার্যকলাপের সঙ্গে আর কে কে জড়িত আছে তা জানার জন্যই এখন রিমান্ডের প্রয়োজন। আসামীপক্ষে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মোহসীন মিয়াসহ প্রমুখ আইনজীবী অভিযোগ অস্বীকার করে জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করেন। শুনানিতে তারা বলেন, আসলাম চৌধুরী একজন ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসার উদ্দেশ্যেই ভারতে যান। সেখানে শিপন রায় নামে একজন মেয়রের আমন্ত্রণে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানেই শিপন রায় ইসরাইলী রাজনৈতিক নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন। এর পর তাদের মধ্যে সৌজন্য সাক্ষাত হয় মাত্র। এর বাইরে কিছুই নেই। বিএনপির সঙ্গে ফিলিস্তিনী রাষ্ট্রের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক থাকায় তা নষ্ট করার জন্য সরকার এ মিথ্যা অভিযোগ করেছে। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন তাসলিমা ইয়াসমিন দীপা ও সালমা হাই টুনী। রবিবার রাজধানীর খিলক্ষেত থানা এলাকা থেকে আসলাম চৌধুরী এবং মোঃ আসাদুজ্জামান মিয়াকে আটক করা হয়। কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যম খবর দেয়, মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে নয়াদিল্লীতে একাধিক বৈঠক করেছেন আসলাম চৌধুরী। ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশের সরকার উৎখাত করাই ছিল এসব বৈঠকের উদ্দেশ্য। গলায় ফুলের মালা পরা অবস্থায় সাফাদি ও আসলাম চৌধুরীর একত্রে ছবি প্রকাশিতও হয় গণমাধ্যমে। এছাড়া একটি রেস্তরাঁর এক টেবিলে এ দু’জনের বসে কথা বলার ছবিও প্রকাশিত হয়েছে। ছবিগুলোর উৎস মেন্দি এন সাফাদির ব্যক্তিগত ফেসবুক পাতা ‘মেন্দি এন সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি এ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস’। ওই পাতায় মেন্দি নিজেই ছবিগুলো প্রকাশ করেন। গণমাধ্যমে এসব বৈঠকের ছবি ও খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও সরকারী দলের নেতারা এটাকে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিএনপির সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দেন। তবে আসলাম চৌধুরী একাধিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, তিনি গত মার্চে ব্যক্তিগত সফরে ভারতে গেলে অন্য একজনের মাধ্যমে সাফাদির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারা বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় একসঙ্গে ঘুরেছেন, খাওয়া-দাওয়া করেছেন। তবে কোন বৈঠক করার কথা তিনি অস্বীকার করেন। রফিকুল ইসলাম মিয়া কারাগারে এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করে নাশকতার ১৪ মামলায় জামিনের আবেদন জানান রফিকুল। চার মামলায় জামিন মঞ্জুর ও নাশকতার দশ মামলায় নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, মিরপুর, পল্লবী ও যাত্রাবাড়ী থানায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়। তবে মতিঝিল থানায় দায়ের নাশকতার এক মামলায় জামিন পেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মারুফ হোসেনের আদালতে উপস্থিত হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন তিনি।
×