ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রিজার্ভ জালিয়াতিতে জড়িত পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার হ্যাকার গ্রুপ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৭ মে ২০১৬

রিজার্ভ জালিয়াতিতে জড়িত পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার হ্যাকার গ্রুপ

রহিম শেখ ॥ রিজার্ভ জালিয়াতির টাকা গেল ফিলিপিন্সে। সেখান থেকে ক্যাসিনো হয়ে হংকং। কিন্তু এই টাকা চুরিতে ফিলিপিন্সের হ্যাকার নয়, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার হ্যাকার গ্রুপ জড়িত বলে সাইবার আক্রমণের তদন্তকারীরা মনে করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত কমিটিও বলছে, এ ঘটনায় তারা পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার হ্যাকার গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন। রিজার্ভ ডাকাতির সঙ্গে অন্য যে গ্রুপটির কথা ফায়ারআই জানিয়েছে, সেটি মিসরের হ্যাকার গ্রুপ বলে সন্দেহ করছে বাংলাদেশী গোয়েন্দারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরির ঘটনা তদন্তে ব্যাংকটির কম্পিউটার সিস্টেমে সন্দেহজনক যে ম্যালওয়্যার পাওয়া গেছে, তার মাধ্যমে মিসরে তথ্য পাঠানো হয়েছে বলে গোয়েন্দারা তথ্য প্রমাণ পেয়েছেন। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে সেখানকার এক নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও বেশকিছু কম্পিউটার সরঞ্জাম জব্দ করেছে মিসরীয় পুলিশ। সেসব কম্পিউটার সরঞ্জামের ফরেনসিক বিশ্লেষণ করতে ইন্টারপোল ও এফবিআইয়ের সহায়তায় মিসরে যাওয়ার কথা ভাবছে সিআইডি। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনায় সুইফটের ৫ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে দিয়েছে সিআইডি। অন্যদিকে প্রায় এক মাস পর আজ মঙ্গলবার ফিলিপিন্সের সিনেট ব্লু-রিবন কমিটির ৭ম দফা শুনানি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শুনানিতে টাকা চুরিতে জড়িত সব পক্ষকেই ডেকেছে সিনেট কমিটি। জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের রিজার্ভের আট কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্সে সরিয়ে নেয়া হয়, যাকে বিশ্বের অন্যতম বড় সাইবার চুরির ঘটনা বলা হচ্ছে। এই ঘটনায় শুধু বাংলাদেশ নয়, ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কা আলাদাভাবে তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক তদন্তে জড়িত একাধিক দেশের ব্যাংক, জুয়াড়ি চক্র ও ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নাম বেরিয়ে এসেছে। বাকি রইল হ্যাকার গ্রুপের নাম। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক তদন্তকারীরা তিনটি হ্যাকার গ্রুপের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পেয়েছেন। বাংলাদেশ নিয়োজিত সিলিকন ভ্যালির সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ফায়ারআই’র ফরেনসিক পরীক্ষা শেষে বলা হয়েছে, রিজার্ভ জালিয়াতির ঘটনায় পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার হ্যাকার গ্রুপ জড়িত। তবে তৃতীয় গ্রুপটি এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি ফায়ারআই’র তদন্তকারীরা। হ্যাকাররা রিজার্ভ চুরির ক্ষেত্রে সুইফটের ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার ‘এ্যালায়েন্স একসেস’ থেকে ভুয়া মেসেজ পাঠানোর পর তার ট্র্যাক মুছে ফেলতে যে ম্যালওয়্যার ব্যবহার করেছিল, তা পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে যে কোন একটি দেশে তৈরি হয়েছে বলে রবিবার দাবি করেন সরকারের তদন্ত কমিটি প্রধান ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তবে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরির ঘটনা তদন্তে ব্যাংকটির কম্পিউটার সিস্টেমে সন্দেহজনক যে ম্যালওয়্যার পাওয়া গেছে, তার মাধ্যমে মিসরে তথ্য পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনা তদন্তকারী দলের প্রতিনিধি সিআইডির এ্যাডিশনাল ডিআইজি শাহ আলম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মেইন সার্ভারে সদ্য আবিষ্কৃত ওই ম্যালওয়্যার, অর্থ চুরির ঘটনার আগে সাত ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে মেইলের মাধ্যমে মিসরে তথ্য পাঠিয়েছে। তিনি আরও বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মিসরের কায়রোর একটি আইপির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এরই মধ্যে সেখানকার এক নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও বেশকিছু কম্পিউটার সরঞ্জাম জব্দ করেছে মিসরীয় পুলিশ। সেসব কম্পিউটার সরঞ্জামের ফরেনসিক বিশ্লেষণ করতে ইন্টারপোল ও এফবিআইয়ের সহায়তায় মিসরে যাওয়ার কথা ভাবছে সিআইডি। তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় কে ওই মেইল ব্যবহার করেছেন, তাকে শনাক্ত করতে মিসরের পক্ষ থেকে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। আমরা ধারণা করছি তৃতীয় হ্যাকার গ্রুপটি মিসর হবে। এদিকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ চুরি করে ফিলিপিন্সে নেয়ার ঘটনায় ব্যাংকিং লেনদেনের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক সুইফটকেই দায়ী করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রধান মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। এ পেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনায় সুইফটের ৫ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। এ জন্য এরই মধ্যে সিআইডি বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সুইফটের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সিআইডি বলছে, রিজার্ভ চুরির ৩ মাস আগে সুইফটের প্রকৌশলীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট ম্যাসেঞ্জিং প্লাটফর্মের সঙ্গে নতুন যে ট্রানজেকশন সিস্টেমের সংযোজন করেছিলেন তার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আন্তর্জাতিক নিরাপদ লেনদেন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সুইফট। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ৩ মাস আগে সুইফটের প্রকৌশলীরা ব্যাংকটির সুইফট ম্যাসেঞ্জিং প্লাটফর্মের সঙ্গে নতুন একটি ট্রানজেকশন সিস্টেম সংযোজন করেন। সিআইডির অনুসন্ধান বলছে, এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংক ও সুইফটের মধ্যে যে বোঝাপড়া ছিল তার বাইরেও কিছু কাজ করেছেন প্রকৌশলীরা। তারা প্রথমবারের মতো রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট সিস্টেমের সঙ্গে সুইফটের নেটওয়ার্ক সংযুক্ত করে যায়। এ তৎপরতাকে অপরাধমূলক মনে করেই সুইফটের ৫ প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে সিআইডি। সিআইডির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক মোঃ শাহ আলম বলেন, ক্রিমিনাল ইনটেনশনের বিষয়ে প্রশ্ন করার মতো যথেষ্ট উপাত্ত আমাদের কাছে আছে। ইনডিভিজুয়াল দায়-দায়িত্ব নির্ধারণের যে ব্যাপারটি আসবে- কে কতটুকু জড়িত। আমরা ৫ জনের একটি নামের তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে দিয়েছি। অন্যদিকে প্রায় এক মাস পর আজ মঙ্গলবার ফিলিপিন্সের সিনেট ব্লু-রিবন কমিটির ৭ম দফা শুনানি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শুনানিতে টাকা চুরিতে জড়িত সব পক্ষকেই ডেকেছে সিনেট কমিটি।
×