ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এখনও খোলাসা হয়নি লন্ডন বৈঠকের মি. রহমান কে?

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৮ মে ২০১৬

এখনও খোলাসা হয়নি লন্ডন বৈঠকের মি. রহমান কে?

শংকর কুমার দে ॥ ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সদস্য মেনদি এন সাফাদি ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব আসলাম চৌধুরীর দিল্লী বৈঠকের নেপথ্যে রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। ইসরাইলের মেনদি এন সাফাদি লন্ডনে মি. রহমান নামে যার সঙ্গে বৈঠকের কথা বলেছেন তিনিই বিএনপির হাইকমান্ড কিনা- সে বিষয়ে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে আসলাম চৌধুরী দিল্লীতে যাওয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে একেকবার একেক কথা বলছেন। একবার বলছেন, ব্যবসায়িক কাজে, আবার বলছেন চিকিৎসার জন্য, আরেকবার বলছেন যুব সম্মেলনে যোগদানের জন্য দিল্লীতে গিয়েছিলেন তিনি। দিল্লীতে মেনদি এন সাফাদির সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর দেখা সাক্ষাত হওয়ার আগেই তারা একসঙ্গে আগ্রায় পর্যটন কেন্দ্রে ঘোরাফেরা, রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া, আলাপ-আলোচনা করেছেন বলে তথ্য পেয়েছে ডিবি। বাংলাদেশ সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের গোপন বৈঠকের খবর ফাঁস হওয়ার আগে থেকেই এই মেনদি এন সাফাদির মাধ্যমে ইসরাইলের সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের কাল্পনিক সংখ্যালঘু নির্যাতনের সচিত্র প্রতিবেদন ছাপানোর ব্যবস্থা করেন আসলাম চৌধুরী। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ২০০১ সালে বাংলাদেশে যে নির্বিচারে সংখ্যালঘু নির্যাতন করা হয়েছে এবং তার ছবি ছাপা হয়েছে সেটাই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঘটেছে বলে সচিত্র প্রতিবেদন তাদের হাতে তুলে দিয়েছে আসলাম চৌধুরী। দিল্লীতে বাংলাদেশ সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের ছঁক কষা হয়েছে লন্ডনে এবং লন্ডনে অবস্থানরত মি. রহমানই তার নেপথ্যের প্রধান হোতা। লন্ডনের মি. রহমানের সঙ্গে মেনদি এন সাফাদির বৈঠক হয়েছে কিনা সে বিষয়েও আসলাম চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিবি। মেনদি এন সাফাদিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতের জন্য লন্ডনে যে নীলনক্সা তৈরি করা হয়েছে সেই সঙ্গে বাংলাদেশের আর কে কে জড়িতÑ সে বিষয়ে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের হয়ে আসত। এ খবর দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, ইসলামপন্থী দলগুলোর সমন্বয়ে ২০ দলীয় জোট গঠন করে ধর্মের নামে রাজনীতি করলেওÑ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ইহুদী-নাছারাদের রাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে বৈঠক করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার ঘটনায় বেকায়দায় পড়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য এখন নানা ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত বিএনপি। ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেনদি এন সাফাদি ইসরাইলের একটি পত্রিকার সাক্ষাতকারে স্বীকার করেছেন, তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের বিষয়ে বৈঠক করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আসলাম চৌধুরী সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন কিনাÑ সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে আসলাম চৌধুরীকে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, এ ঘটনা যে ফাঁস হয়ে এতটা বড় হয়ে যাবে সে বিষয়ে তিনি বুঝতে পারেননি। ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সদস্য মেনদি এন সাফাদি ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে দিল্লীর বৈঠকে বাংলাদেশ সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার প্রস্তুতিও সম্পন্ন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আদালতে শুনানির সময় আসলাম চৌধুরীর আইনজীবী বলেছেন, ব্যবসায়িক কাজে বিভিন্ন সময় তিনি ভারতে যান। ভারতের সঙ্গেই তার ব্যবসা বেশি। ওই ব্যবসায়িক কাজে গিয়েই তিনি একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানেই মেনদি এন সাফাদির সঙ্গে তার পরিচয়। ডিবির কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেনÑ ভারতের সঙ্গে তার কী ধরনের ব্যবসা? মেনদি এন সাফাদির সঙ্গে দিল্লী বৈঠকের আগে যদি তার পরিচয় নাই থাকে তাহলে দিল্লীতে বৈঠকের আগেই আগ্রায় গিয়ে মেনদি এন সাফাদির সঙ্গে পর্যটন ক্ষেন্দ্রে ঘুরাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, আলাপ-আলোচনা করেছেন কিভাবে? তাহলে সেটা কী? যদি পূর্ব পরিচয় নাই থাকে তবে মেনদি এন সাফাদি বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাতকারে কিভাবে বলেছেন যে, আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাত হয়েছে, বৈঠক হয়নি। বৈঠক হওয়ার কথা স্বীকার না করলেও দেখা সাক্ষাতের কথা স্বীকার করার মধ্য দিয়ে পূর্ব পরিচয় আছেÑ সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে আসলাম চৌধুরীকে। এ কথার মধ্য দিয়ে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী ইসরাইলের নেতা ও মোসাদের সঙ্গে বৈঠক বা দেখা সাক্ষাতের কথা স্বীকার করেছেন। এ কথা স্বীকার করার পর বিএনপি এখন ফেঁসে যাচ্ছে। আর এ কারণেই তারা প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করলেও অনেক তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে আসলাম চৌধুরী বলেছেন, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা আছে, তবে ষড়যন্ত্রের কথা স্বীকার করেননি। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেত্রী থাকার সময়ে তাকে হত্যা চেষ্টার ষড়যন্ত্র, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয়ে জড়িত থাকার বিষয়গুলোও এখন গোয়েন্দা তদন্তে সামনে চলে এসেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার কারণেই সম্প্রতি বিএনপির যুগ্মমহাসচিব পদটি পেয়েছেন আসলাম চৌধুরী। আর তিনি ব্যবসায়িক হওয়ার কারণে অনেক টাকা বিএনপি ও তারেক রহমানের কোষাগারে জমা দিয়েছেন। এ কারণেই তারেক রহমান তাকে সম্প্রতি দলে যুগ্মমহাসচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে এ্যাসাইনমেন্ট দিয়েই ইসরাইলের মেনদি এন সাফাদির সঙ্গে দিল্লী বৈঠকে পাঠিয়েছেন কিনাÑ সে বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাকে। আসলাম চৌধুরী ভারতের দিল্লীতে গেছেন, সেখানে তিনি ইসরাইলের রাজনীতিক মেনদি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন, সংবর্ধনা গ্রহণ করেছেন, মালা নিয়েছেন, আতিথেয়তা গ্রহণ করেছেন। তার পাশে নারীর ছবি দেখা যাচ্ছে, ছবি তোলা হয়েছে, তা ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, এতসব ঘটনা একদিনে হঠাৎ করেই হয়নি, যা বলে দেয় সবটাই পূর্বপরিকল্পিত। গোয়েন্দারা আসলাম চৌধুরীকে প্রশ্ন করেছেন, তিনি গেছেন ব্যবসার জন্য নয়ত চিকিৎসার জন্য। আবার বলছেন, ক্ষমতাসীন দল বিজেপির যুব শাখার আমন্ত্রণে এক অনুষ্ঠানে। তাহলে কোনটা সত্যি? তাহলে সংবর্ধনা দেয়া হলো কিভাবে? পর্যটন কেন্দ্রেই বা ইসরাইলের মেনদি এন সাফাদির সঙ্গে একত্রে ঘোরাফেরা করলেন কিভাবে? সবকিছু মিলিয়ে দেখলেই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে না? আসলাম চৌধুরী জিজ্ঞাসাবাদে জানান, আগ্রার এক অনুষ্ঠানে সাফাদির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তাতে আমন্ত্রণ জানান ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির যুব শাখা। রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে আসলাম চৌধুরীও সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন। আসলাম চৌধুরী জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ইসরাইলের মেনদি এন সাফাদি ইসরাইলের বর্তমান সরকারের উপমন্ত্রী এম কে আয়ুব কারার একজন সাবেক উপদেষ্টা। তিনি নিজের নামে মেনদি এন সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি এ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস প্রতিষ্ঠানটি চালান। মেনদি এন সাফাদির মাধ্যমে ইসরাইলের গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, শীঘ্রই সবক্ষেত্রে বাংলাদেশের দরজা ইসরাইলীদের জন্য খুলে দিতে কাজ করছেন তিনি। এজন্য তিনি বাংলাদেশের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছেন, যাতে ইসরাইলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে রাজি আছে এমন একটি নতুন সরকার বসানো যায়। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে মাথা নিচু করে নিরুত্তর থাকেন তিনি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে চট্টগ্রামে যে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে সে বিষয়ে আসলাম চৌধুরীর একটা বিরাট ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও তিনি কিভাবে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ইসরাইলের মেনদি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন? এ প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেননি তিনি। বাংলাদেশে যেকোন হত্যাকা-ের পর কথিত জিহাদীদের প্রচারণামূলক ওয়েবসাইট ‘সাইট ইন্টেলিজেন্সে’ তা প্রকাশ নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীকে। গোয়েন্দাদের জেরার মুখে আসলাম চৌধুরী অনেক অজানা তথ্য দিয়েছেন। বলেছেন, তিনি বাহকমাত্র। বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের আরও অনেক নেতা এ বিষয়ে ভাল জানেন। মেনদির সঙ্গে যোগাযোগে এক সাংবাদিক ও এক যুবদল নেতার ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আসলাম চৌধুরী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত দুই মাস ধরে বলে আসছেন এই দায় স্বীকারের পেছনে দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্র রয়েছে। সাইটের কর্ণধার রিতা কাৎজ একজন ইহুদী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করলেও ইসরাইলের সঙ্গে একত্র হয়েই গোয়েন্দাগিরি করেন। সন্ত্রাসবাদ ও জিহাদীসংক্রান্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন। তাকে ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের চর বলা হয়। তার আছে ‘সার্চ ফর ইন্টারন্যাশনাল টেরোরিস্ট এন্টাইটিস (এসআইটিই)’ নামের একটি ওয়েবসাইট। এটি ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগী প্রতিষ্ঠান। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ট্যাগ এবং গোপন বার্তা ও ভিডিও প্রচার করে আলোচিত সাইটটি। মোসাদের সঙ্গে আসলামের এমন বৈঠক ও ছবি দেখে তাই গোয়েন্দাদের সন্দেহ, বাংলাদেশে হত্যার পর সাইটে জঙ্গী সংগঠনের নামে যে দায় স্বীকার করে তার নেপথ্যে আসলামের হাত থাকতে পারে। প্রসঙ্গত, গত ১৫ মে রবিবার বিকেল সাড়ে ছয়টার দিকে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে গ্রেফতার হন বিএনপির যুগ্মমহাসচিব আসলাম চৌধুরী। তার এক সহকারী ও চালককেও আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দফতরে আনার পর ৭ দিনের রিমান্ডে এনে গোয়েন্দা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে আসলাম চৌধুরীকে। দেশের বাইরে অন্য কোন রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সরকার উৎখাতের অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। গোয়েন্দাদের দাবিÑ মোসাদের সঙ্গে বৈঠকের খবর আসার পর থেকে বিএনপির এই নেতা নজরদারিতে ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার পর তিনি গা ঢাকা দেন। তবে তার গতিবিধি সবসময় গোয়েন্দা নজরদারিতে ছিল। মোসাদের এজেন্টের (লিকুদ নেতা) সঙ্গে বৈঠকের খবর প্রকাশ হওয়াকে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে প্রশাসন। তার ওই বৈঠকের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এরপর তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। গ্রেফতারের পর ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে আসলাম চৌধুরীকে।
×