ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নারায়ণগঞ্জে শিক্ষককে অপমান করায় প্রতিবাদের ঝড়

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৮ মে ২০১৬

নারায়ণগঞ্জে শিক্ষককে অপমান করায় প্রতিবাদের ঝড়

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ নারায়ণগঞ্জে এক স্কুলশিক্ষককে কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল সারাদেশ। ন্যক্কারজন ওই ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে সমাজের সর্বত্র। কেউ কেউ স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের বিচার দাবি করেছেন। আর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, ‘যারা এ অপরাধে জড়িত তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।’ তবে শিক্ষকের পক্ষে দাঁড়িয়ে সমাজের সর্বত্র প্রতিবাদ অব্যাহত থাকলেও সেই শিক্ষককেই সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ। মঙ্গলবার শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে সাময়িক বরখাস্তের খবর ছড়িয়ে পড়লে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় আরও তীব্রতর হয়। কেউ কেউ ধারণা করছেন, শিক্ষককে বরখাস্তের পেছনেও রয়েছে সাংসদের হাত! আর ওই ঘটনায় কোন ফৌজদারি অপরাধ ঘটেনি দাবি করে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেছেন, তাই পুলিশের করার কিছু নেই। শুক্রবারের ওই ঘটনার পর থেকেই প্রতিবাদ চলছে, তবে মঙ্গলবার দুপুরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কান ধরে দাঁড়িয়ে’ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচী পালনের পর তা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। বিকেলে একই রকমের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হয় রাজধানীর শাহবাগেও। আর বুধবার বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ওই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। আর নারায়গঞ্জের ওই স্কুলশিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনায় সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। স্কুলশিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের ওপর নির্যাতনকারী সেলিম ওসমান ও তার সহযোগীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন ‘লেখক শিল্পী শিক্ষক শিক্ষার্থী সাংস্কৃতিক কর্মীবৃন্দ’। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গীতি আরা নাসরিন, ফাহমিদুল হক, গণসংগীতশিল্পী কফিল আহমেদ, উদীচীর সহ সাধারণ সম্পাদক জমশেদ আনোয়ার, নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবির, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়–য়া, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা ফিরোজ আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘ধর্ম রক্ষার নামে যেভাবে মানুষের অবমাননা হচ্ছে ও তাতে যে পর্যায়ের মানুষ যুক্ত হচ্ছেন তা আমাদের আতঙ্কিত করছে। নারায়ণগঞ্জে ও আরও কয়েকটি স্থানে যে ঘটনার বর্ণনা শুনেছি তাতে একথা বললে ভুল হবে না যে, বাংলাদেশে এখন চরম অনাচারের রাজত্ব চলছে। সংবিধান লঙ্ঘন করে, দেশের প্রচলিত আইন-কানুন রীতিনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কিছু মানুষ নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যেকোন ধরনের কাজ করতে নিয়োজিত রয়েছে, এতে তারা লজ্জিত বোধও করছে না। আমরা এই ধরনের সমাজের নেতা বা আইনপ্রণেতা চাই না, তাদের প্রত্যাখ্যান করি। এ সময় সুলতানা কামাল আরও বলেন, ওই নেতা দাবি করেছেন, তিনি শিক্ষককে জনরোষ থেকে বাঁচাতে এটা করেছেন। নেতার ব্যক্তিত্ব যদি এমনই হয়, তিনি জনগণকে তাঁর কথায় আশ্বস্ত করতে না পারেন, নিজে আরেকটা অন্যায় করেন, সেই নেতার চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। এই ঘটনার পেছনে ওই নেতারও উসকানি ছিল, এমনটা হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। মানববন্ধনে ‘ধর্ম অবমাননার গুজব তুলে স্বার্থ হাসিল বন্ধ কর’, ‘সকল ধর্ম ও মতের স্বাধীনতা নিশ্চিত কর’, ‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস রুখে দাঁড়াও’, ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’ এসব লেখা ফেস্টুন ব্যবহার করেন। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘শুধু একজন শিক্ষক নয়, কান ধরে উঠবস করছে বাংলাদেশ।’ ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–য়া বলেন, ‘আমার বাবাও স্কুল শিক্ষক। তাই শ্যামল স্যারকে কান ধরে উঠবস করানোর দৃশ্য দেখে আমার মনে হয়ে বাবাকেই যেন নিষ্ঠুরভাবে অপমান করা হচ্ছে। শ্যামল কান্তি ভক্ত যে স্কুলে ১৮ বছর ছাত্র পড়ালেন সেই স্কুলেই তাকে চরমভাবে অপমান করা হলো। এত বড় অন্যায়ের পরও কেউ এগিয়ে না আসায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন,‘ এই যদি হয় শিক্ষাগুরুর মর্যাদা তাহলে একদিন হয়তো এই দেশে শিক্ষকরা ছাত্র মানুষ করার স্বপ্নই দেখবেন না’। এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে সাম্প্রদায়িকতাকে ‘না’ বলার সাহস নিয়ে সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানান ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন। অন্যায়ের প্রতিবাদে সবার ঐক্য দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, “১৯৪৮ সালে জিন্নাহ’র উর্দু ভাষার প্রস্তাবে কয়েকটি ক্ষুদ্র কণ্ঠ পাকিস্তানী চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে ‘নো- নো’ বলে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। এখন সময় এসেছে আবারও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সেই ‘না’ বলা শুরু করার।” ফেসবুকে প্রতিবাদ, ক্ষোভ ও নিন্দা ॥ শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করানোর নিন্দা জানিয়ে ফেসবুকে চলছে প্রতিবাদ- ‘সরি স্যার’। অনেকে নিজেদের কান ধরা ছবি আপলোড দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পরিবর্তন করছেন নিজের প্রোফাইল ছবি। ইভেন্ট খুলেও ডাক দেওয়া হচ্ছে আন্দোলনের। হ্যাশট্যাগ দিয়ে কেউ কেউ লিখছেন ‘স্যরি স্যার’, ‘উই আর স্যরি স্যার’। সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গও নিজের কানে ধরা ছবি আপ দিচ্ছেন, এ যেন পুরো বাংলাদেশ কানে ধরে দাঁড়িয়ে। ‘শিক্ষক নয়, কানে ধরেছে পুরো বাংলাদেশ’ এ ঘটনাকে এমনক আখ্যাও দিচ্ছেন আনেকেই। অভিনেতা ইরেশ যাকের তার ফেসবুক প্রোফাইলে দিয়েছেন নিজের কানে ধরা ছবি। সংগীত শিল্পী কফিল আহমেদ লিখেছেন, ‘আমরা কি ভুলে গেছি শ্যামল কান্তি একজন মানুষ! শিক্ষক হবার চাইতে বড় কথা শ্যামল কান্তি অবশ্যই একজন মানুষ। এবং যে কোন মানুষের উপর এই বর্বরতা সহ্য করাবার কোন কারণ নাই।’ ফেসবুকে শুভ কামাল নামের একজন নিজের প্রোপিক বদলে নিজের কানে ধরার ছবি আপলোড দিয়ে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘আমার মা সাবেক শিক্ষিকা। শ্যামল চন্দ্র স্যারকে যখন কানে ধরানো হলো, স্যারকে যখন ভিডিওতে ধপ করে মাটিতে পড়ে যেতে দেখলাম আমার জানটাও ধক্ করে উঠলো। এইসব ম্যানেজিং কমিটির পলিটিক্স আমি খুব ভালই চিনি। সর্বোচ্চ শাস্তি চাই এ অন্যায়ের।’ সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী এফ এম শাহীন লিলেছেন, ‘ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে একজন সংখ্যালঘুর ওপর হামলার অপরাধে সেলিম ওসমানকে দ্রুত গ্রেফতার করা হোক। সেই সঙ্গে ওর মতো সাম্প্রদায়িক জঙ্গীকে সংসদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হোক।’ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচী ॥ নারায়ণগঞ্জে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগ তুলে স্কুলশিক্ষককে পিটিয়ে জখম করার পর স্থানীর সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কান ধরে দাঁড়িয়ে’ এক অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচী পালিত হয়। এ সময় শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘একজন শিক্ষকের সঙ্গে এরকম অন্যায় আচরণ অনেক কষ্টের, অনেক অপমানের। স্যারের এত বড় অপমানে আমরা লজ্জিত, আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ ॥ নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠবস করানোয় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছে, ‘একজন শিক্ষকের সঙ্গে এ ধরনের অসম্মানজনক ও নিন্দনীয় আচরণ একটি সভ্য সমাজে কাম্য নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিরপেক্ষভাবে ঘটনাটি খতিয়ে দেখে এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’ ন্যক্কারজনক ওই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। সংগঠনের দফতর সম্পাদক বিপ্লব দে স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অজুহাতে হিন্দু শিক্ষকদের উপর লাঞ্ছনা ও নিপীড়ন-নির্যাতনের প্রতিবাদে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে আজ বুধবার বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের প্রতি সমব্যথী হয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্থানীয় সাংসদ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই এই চূড়ান্ত অসভ্যতা, বর্বরতা ও বেআইনী ঘটনাটি ঘটেছে। আমাদের দাবি, শিক্ষা ও শিক্ষকের মর্যাদ সমুন্নত রাখতে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করা হোক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা এরূপ জঘন্য ঘটনায় জড়িত সাংসদসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনারও আহ্বান জানাই। এর অন্যথা হলে শিক্ষক সমাজ তা কোনভাবেই মেনে নেবে না।’ নারায়ণগঞ্জের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জ বন্দরের কল্যান্দী এলাকায় ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে গণপিটুনির শিকার ও কান ধরে উঠবস করানো পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের সেই প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে এবার সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ। একটি চিঠি মঙ্গলবার দুপুরে ওই প্রধান শিক্ষকের কাছে পৌঁছেছে। এদিকে ওই প্রধান শিক্ষককের কান ধরে উঠবস করানোর ভিডিও বন্দর এলাকার জনতার মোবাইলে ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার ১৩ মে ইসলাম ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত করে মন্তব্য করার অভিযোগে ও একছাত্রকে প্রহার করার ঘটনায় বন্দরের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত উত্তেজিত জনতার হাতে গণপিটুনিতে আহত হন। পরে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয়পার্টি দলীয় এমপি সেলিম ওসমান একই অভিযোগে তাকে কানে ধরে উঠবস করিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। ওই প্রধান শিক্ষক এখনও (মঙ্গলবার) নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরে ৩ শ’ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে গত ১৩ মে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ চারটি কারণ উল্লেখ করে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন। চারটি কারণ উল্লেখ করে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতি ওই বরখাস্তের চিঠিটি নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরে ৩ শ’ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন ওই প্রধান শিক্ষকের কাছে মঙ্গলবার দুপুরে পৌঁছে। চিঠিতে বরখাস্তের কারণ উল্লেখ্য করা হয়, আপনি ছাত্রদের উপর শারীরিক নির্যাতন করেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে চাকরি দেয়ার নাম করে অর্থ গ্রহণ করেছেন, ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন, বিদ্যালয়ের ছুটি ব্যতিরেকে অনুপস্থিত থাকেন এবং প্রায়ই দেরি করে বিদ্যালয়ে আসেন। চিঠিতে আরও উল্লেখ্য করেন, গত ১৩ মে ম্যানেজিং কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক আপনাকে (প্রধান শিক্ষককে) পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। অনুলিপি দেয়া হয়েছে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও বন্দর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, সেই দিন মসজিদের মাইকেও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কথা প্রচার করে জনতাকে উত্তেজিত করা হয়েছিল। মাইকে প্রচারের পর পর কয়েক হাজার জনতা স্কুল মাঠে জড়ো হয়। ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে এ ঘটনা ঘটলেও গণপিটুনির ঘটনার আগে ঘটনা জানতেন না পার্শ্ববর্তী কল্যান্দী বায়তুল আতিক জামে মসজিদের ইমাম মাহমুদুল হাসান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, সকাল ১০টার দিকে স্কুলের কয়েকজন ছাত্র এসে তার কাছে মসজিদের চাবি চায়। তিনি তাদের জানান, শুক্রবার মসজিদ খোলাই থাকে। চাবির প্রয়োজন নেই। এরপর ছাত্ররা গিয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়, ‘আল্লাহ, আল্লাহর রাসুল নিয়ে প্রধান শিক্ষক কটূক্তি করেছেন। স্কুলের উপর হামলা চলছে। আপনারা তাড়াতাড়ি সমাধান দেন। মাতব্বর সাহেবরা কে কোথায় আছেন। তাড়াতাড়ি আসুন। হেডমাস্টার কটূক্তি করার কারণে ছাত্ররা উত্তেজিত হয়েছে। স্কুল রক্ষা করুন।’ মাইকে কয়েকজন ছাত্রের কণ্ঠ আমি শুনেছি। এ সময় আমরা জানতে পারি তিনি ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন। এলাকার অনেকেই তা শুনেছে। বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মৌসুমী হাবিব জানান, ওইদিনেই (১৩ মে) বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ প্রধান শিক্ষক প্রধান শ্যামল কান্তি ভক্তকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে। বরখাস্ত করার চিঠির অনুলিপি আমি হাতে পেয়েছি। তিনি আরও জানান, শিক্ষকের বিষয়টি ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। আমার জানা মতে ওই প্রধান শিক্ষক এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
×