ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনায় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ

ষড়যন্ত্রকারীরা দেশ থেকে একদিন বিতাড়িত হবেই

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৮ মে ২০১৬

ষড়যন্ত্রকারীরা দেশ থেকে একদিন বিতাড়িত হবেই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছেন বলেই দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও দ- কার্যকর হচ্ছে। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে। তবে পরাজিত শক্তির দোসররা এখনও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে, যারা ষড়যন্ত্র করছে তারা একদিন দেশ থেকে বিতাড়িত হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশবিরোধী যে কোন ষড়যন্ত্র রুখে দিতে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ প্রস্তুত রয়েছে।’ মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩৫তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় দলের সিনিয়র নেতারা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসায় দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে। বিধ্বস্ত দেশ থেকে এখন বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। নেতৃবৃন্দ বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে বাংলাদেশকে পরিপূর্ণতা দিয়েছিলেন। গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে ফিরিয়ে এনেছেন। তিনি দেশে না ফিরলে এই দেশ ও দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটত না। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেনÑ শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান প্রমুখ। দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও অসীম কুমার উকিল সভা পরিচালনা করেন। এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। জাতির পিতার হত্যাকে সমগ্র জাতির আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা উল্লেখ করে আমির হোসেন আমু বলেন, একইভাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন শুধু একজন ব্যক্তির প্রত্যাবর্তন নয়, একটি জাতির প্রত্যাবর্তন। তিনি দেশে ফিরে দেশকে পূর্ণতা দিয়েছেন। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে বলেছিলেন, আপনারাই আমার আপনজন। আমি নেত্রী হতে আসিনি, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এসেছি। তিনি প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছেন জাতির কল্যাণে। সমুদ্র সীমানায় কোন অধিকার ছিল না। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুযায়ী তিনি সমুদ্রে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার নেতৃত্বে দেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নানান রকমের ষড়যন্ত্র চলছে। এদের বিরুদ্ধে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়। সে সময় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। আজকে তার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ শক্তিশালী। দেশও আজকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে। শেখ হাসিনা যদি দেশে না ফিরতেন তাহলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতো না। আজকে শেখ হাসিনা যদি প্রধানমন্ত্রী না থাকতেন যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্ভব হতো না। জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান খুনীদের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছেন। দেশকে কলঙ্কিত করেছেন। শেখ হাসিনা যুুদ্ধাপরাধী ও খুনীদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করছেন। তিনি বলেন, দেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারছি। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নের রোল মডেল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজকে উন্নয়নের মহাসড়কে। কিন্তু এ উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্রকারীরা নানা চক্রান্ত শুরু করেছে। আজকে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিএনপি নেতারা ইসরাইলের গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। তারা কঠিন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি বলেন, সেদিন শেখ হাসিনার হাতে আওয়ামী লীগের দায়িত্বভার দিয়ে আমরা আজকে ধন্য। তিনি জাতির আশা আকাক্সক্ষার প্রতীক। শেখ হাসিনা দেশে না ফিরলে এ দেশের মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মারা যেত উল্লেখ করে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, শেখ হাসিনা কঠোর হস্তে সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গীবাদ নির্মূল করছেন। এটা সারাবিশ্ব প্রশংসা করছেন। শত বাধা থাকার পরেও যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হচ্ছে। কিন্তু স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির দোসররা এখন ষড়যন্ত্র চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। যারা ষড়যন্ত্র করছে, তারা একদিন দেশ থেকে বিতাড়িত হবে। আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি না দিতে নিষেধ করছেন। আমরা পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ নিয়ে নাক গলাবেন না। এটা বরদাশত করা হবে না। বাংলাদেশ কারও কাছে মাথানত করে না। বঙ্গবন্ধুও কারও কাছে মাথানত করেনি, শেখ হাসিনাও করবে না। শেখ হাসিনা বাপের বেটি-ভাঙবেন তবুও মচকাবেন না। তিনি বলেন, দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন বলেই সব অসম্ভবকে সম্ভব করা যাচ্ছে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার সময় তাকে বলা হয়েছিলÑ তিনি ভারত হয়ে ফিরলে তাকে ‘ভারতের চর’ বলা হতে পারে। তিনি সেটি উপেক্ষা করেই ভারত হয়ে ফিরেছিলেন। একটি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে দেশে ফিরে তিনি দেশের হাল ধরেছিলেন। আজ দেখুন, দেশের কী অবস্থা! কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফেরার কারণেই আজ সহযোগিতা দেয়ার নামে বাংলাদেশকে হুমকি-ধমকি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তার নেতৃত্বেই দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এটি নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আরও কী কী সমস্যা আছে, খুঁজে বের করে সমাধান করতে হবে। আবেদ খান বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে জাতিকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তিনি দেশে না ফিরলে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হতো না। সভায় শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনসহ তার জীবন ও কর্ম এবং দেশ ও জাতির উন্নয়নে তার সরকার গৃহীত পদক্ষেপের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। দিনটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র চত্বরে শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে একটি চিত্রপ্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়।
×