ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অসংরক্ষিত প্রতœ নিদর্শন ও স্থান সংরক্ষণের উদ্যোগ ঝুলে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১৮ মে ২০১৬

অসংরক্ষিত প্রতœ নিদর্শন ও স্থান সংরক্ষণের উদ্যোগ ঝুলে যাচ্ছে

নাজনীন আখতার ॥ সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংরক্ষিত প্রতœ নিদর্শন ও স্থানগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ ঝুলে যাচ্ছে জেলা প্রশাসকদের খামখেয়ালিপনায়। অসংরক্ষিত প্রতœ নির্দশন ও স্থানগুলোর তালিকা চেয়ে এক বছর আগে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর চিঠি দিলেও একটি ছাড়া আর কোন জেলা প্রশাসক এখন পর্যন্ত সাড়া দেননি। এ অবস্থায় আগামী মাসে আরও একবার সারাদেশের জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর। সম্প্রতি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সংসদীয় কমিটি দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের পুরাকীর্তির সংখ্যা ৪৫২টি ও জাদুঘরের সংখ্যা ১৯টি। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংরক্ষিত প্রতœ নিদর্শন ও স্থান রয়েছে। সেগুলোর তালিকা চেয়ে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত সেই তালিকা পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রতœ নিদর্শন ও স্থানগুলো চিহ্নিতকরণের কাজ শেষ হলে পুরাকীর্তি আইন ১৯৬৮ (সংশোধিত ১৯৭৬) অনুসারে ১০০ বছরের প্রাচীন এবং প্রতœতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্থাপনা গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে পুরাকীর্তি সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। সেক্ষেত্রে প্রতœতত্ত্ববিদ ও স্থানীয় জনগণের মতামত ও সুপারিশ নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে ভূমি তফসিল সংগ্রহ করা হবে। এ বিষয়ে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেন সোমবার জনকণ্ঠকে বলেন, এক বছর আগে অসংরক্ষিত প্রতœ নিদর্শন ও স্থানের তালিকা চেয়ে আমরা চিঠি পাঠিয়েছিলাম। এখন পর্যন্ত শুধু রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে চিঠির জবাব পাওয়া গেছে। আগামী মাসে অধিদফতর থেকে সারাদেশের জেলা প্রশাসকদের কাছে আবারও চিঠি পাঠানো হবে। তিনি বলেন, প্রতœ নির্দশন ও স্থান সংরক্ষণের কাজ দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। এটার প্রথম ধাপই হচ্ছে তালিকা তৈরি। জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে তালিকা আসার পরই বোঝা সম্ভব হবে, কোথায় কোথায় কী কী আছে। নিদর্শন মাটির ভেতরে না উপরে সেটাও জানতে হবে। মাটির ভেতরে হলে খনন করতে হবে। এছাড়া সংরক্ষণের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের মতামত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিদর্শনের স্থান কোন ব্যক্তির হতে পারে। অথবা জায়গাটি তার নিজের অথবা লিজ বা অর্পিত সম্পত্তি হতে পারে। তখন ওই ব্যক্তির মত নিতে হবে জায়গাটি অধিগ্রহণের জন্য। মহাপরিচালক আরও বলেন, জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে আমরা তালিকা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি। গত ২০ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গায় এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আশা করা যায়, কাজে দ্রুত অগ্রগতি হবে। এদিকে পুরাকীর্তি চিহ্নিত করাসহ এ সংক্রান্ত কাজে জনবল সঙ্কটের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে সংসদীয় কমিটির কাছে দেয়া প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, অধিদফতরের পুরাকীর্তির সংখ্যা ও কাজের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। সে অনুযায়ী জনবল বাড়ানো সম্ভব হয়নি। বর্তমানে রাজস্ব বাজেটে জনবলের সংখ্যা ৩৩৪ জন। মাঠপর্যায়ের কাজের জন্য পর্যাপ্ত গাড়ির স্বল্পতা রয়েছে। ফলে পুরাকীর্তি চিহ্নিতকরণের কাজ দ্রুত করা সম্ভব হচ্ছে না। কাজে স্থবিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। সংসদীয় কমিটিকে আরও জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের প্রাচীন কীর্তিগুলোর সংস্কার সংরক্ষণ, খনন ও উন্নয়নে ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল মেয়াদে ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে প্রক্রিয়াধীন।
×