ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিশন শুরু বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফের

কোচ ক্রুইফের নতুন স্বপ্ন, নতুন চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৮ মে ২০১৬

কোচ ক্রুইফের নতুন স্বপ্ন, নতুন চ্যালেঞ্জ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিতে মঙ্গলবার ভোরে ঢাকায় এসেছেন লোডভিক ডি ক্রুইফ। তাজিকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের প্লে অফ ম্যাচের আগে একমাসের জন্য তাকে জাতীয় দলের দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এর আগেও বাংলাদেশের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জাতীয় দল সাফল্য পেলেও (বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে রানার্সআপ, ২০১৫ সালে) বাফুফের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করার কারণে বেশ বিতর্কিত হন এই ডাচ কোচ। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ক্রুইফের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ করার পর তা আর বৃদ্ধি করেনি বাফুফে। তবে নতুন মেয়াদে কাজী মোঃ সালাউদ্দিন বাফুফের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর আপাতত আবারও স্বল্প মেয়াদের জন্য ফিরিয়ে আনা হলো তাকে। মঙ্গলবার সকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান ক্রুইফ। সেখানে তাজিকদের বিপক্ষে ম্যাচে দলের ভুল-ত্রুটিগুলো শুধরে দেয়াটাই এই মুহূর্তে তার প্রধান কাজ বলে জানান তিনি। বিকেলে দলের ফুটবলারদের নিয়ে তিনি অনুশীলনের জন্য হাজির হন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। সেখানে তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘প্রথমে আমি অভিনন্দন জানাই বাফুফের পুনঃনির্বাচিত সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনকে। কারণ তার পুনঃনির্বাচনের সাথে আমার ফিরে আসাটাও জড়িয়ে ছিল। তিনি নির্বাচিত হয়েছেন বলেই আমাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে, আমি আবারও বাংলাদেশে ফিরে এসেছি। এখানে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশের ফুটবলকে ঘিরে উন্নয়নের জন্য যে চিন্তাধারা আমার মাঝে কাজ করে সালাউদ্দিনও একই ধারায় সেই চিন্তা করেন।’ যে সময়টায় বাংলাদেশে ছিলেন না, সে সময়টাতে নিজ দেশের ডি ডুনো ক্লাবের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। সেই সঙ্গে এদেশের ফুটবল সম্পর্কে ঠিকই খোঁজ-খবর নিয়েছেন বলে দাবি করেন ক্রুইফ, ‘আমি দেখেছি, বিগত কয়েক মাসে বাংলাদেশের ফুটবল সঠিক পথে ছিল না। নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। দলের রেজাল্টে কেউ খুশি ছিল না। এক বছরের বেশি সময় আমি বাংলাদেশে অনুপস্থিত ছিলাম। কিন্তু এ জন্য আমি ভীত নই। আমি আমার খেলোয়াড়দের চিনি এবং আমি জানি কিভাবে তাদের আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য তৈরি করতে হয়। আমি এসেছি একমাসের জন্য। ৭ জুন হোম ম্যাচ শেষে ৯ অথবা ১০ জুন ফিরে যাব। এর মাঝে আমি এতটুকুই করতে চাই, বাংলাদেশের ফুটবলের যে নিম্নমুখী ধারা, তা থেকে একে টেনে তুলতে। আমি চাই বাংলাদেশের মানুষ ফুটবল নিয়ে অনুভব করুক একটু আনন্দমুখর সময়। ফিরিয়ে আনতে চাই ফুটবলের কিছু সাফল্য। আমার জন্য এই কাজ অনেকটাই সহজ। কারণ আমি বাংলাদেশের ফুটবলের পারিপার্শ্বিকতাকে জানি। আমি দেখলাম আবাহনীর হয়ে ফিরে আসছেন জর্জ কোটান। এটিই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের ফুটবলে একজন বিদেশী কোচের পক্ষে টিকে থাকাটা কতটা কঠিন। এখানে অনেক কিছুই বুঝতে হয় এবং সে অনুযায়ী চলতে হয়।’ আগামী ২ ও ৭ জুন এএফসি এশিয়ান কাপের প্লে অফ ম্যাচে তাজিকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচ প্রসঙ্গে ক্রুইফ বলেন, ‘তাজিকিস্তানের বিপক্ষে এই মাঠে ১-১ গোলে ড্রয়ের ম্যাচটা আমার স্মৃতিপটে উজ্জ্বল। ওদের একজন খেলোয়াড় লালকার্ড দেখেছিল এবং ৮৩ মিনিটে আত্মঘাতী গোল খেয়ে সে ম্যাচটি ড্র করি! অনেকগুলো সুযোগ নষ্ট করেছিলাম আমরা। সে ম্যাচটি হতে পারে এবারকার চ্যালেঞ্জে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। দুশানবেতে ০-৫ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। আমি সে ম্যাচে ছিলাম না। ইউটিউবে সে ম্যাচের অংশবিশেষ দেখেছি। বাংলাদেশ সে ম্যাচে ভাল খেলেনি। এই দুটি ম্যাচের নিরিখে বলতে চাই, ২ জুন দুশানবেতে যদি আমরা একটি ড্র করে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে নিজ মাঠে বাংলাদেশের পক্ষে এই ম্যাচটি জেতা সম্ভব।’ গত আট মাসে বাংলাদেশ তিনজন কোচ বদল করেছে (ফ্যাবিও লোপেজ, মারুফুল হক এবং গঞ্জালো সানচেজ মোরেনো)। এ বিষয়ে ৪৬ বছর বয়সী ক্রুইফ বাফুফের সমালোচনা করে বলেন, ‘এটা কখনও সুস্থ ধারা হতে পারে না। দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি ছাড়া কোন কোচই কোন দলকে স্থায়ী সাফল্য এনে দিতে পারবে না। ভাল কোচ আনতে গেলে তার সিভি ভালমতো চেক করে আনা উচিত। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ নিষিদ্ধ চার ফুটবলারের মধ্যে দলে ফিরেছেন দুজন (মামুনুল ও সোহেল রানা), তাদের প্রসঙ্গে ক্রুইফের মূল্যায়ন, ‘আমি বাফুফে সভাপতির কাছে প্রথমেই মামুনুল এবং সোহেল রানাকে চেয়েছি, কারণ তারা আমার খেলার যে ধারা তার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। মামুনুল আমার নির্দেশনা খুব ভাল বোঝে এবং তা মাঠে প্রয়োগও করতে পারে। সোহেল তার বাঁ পাটাকে খুব ভাল ব্যবহার করতে পারে। বিশে^ যে কোন দলেই বাঁ পায়ের ফুটবলারের কদর বেশি।’ জাহিদ এবং ইয়াসিনের ব্যাপারে ক্রুইফ বলেন, ‘তাদের দু’জনকেই বেশ ভাল করেই চিনি-জানি। আমি বলব, তাদের স্বল্প সময়ে ফিরিয়ে আনা কষ্টকর। খেলোয়াড়রা একটি টুর্নামেন্ট খেলেছে। ভাল ফিটই রয়েছে। তাই এসব ব্যাপারে খুব একটা উদ্বিগ্ন নই। এরা সবাই দলের সেরা খেলোয়াড়। এখন তাদের যদি দল থেকে ছুড়ে ফেলা হয়, তাহলে এটা পাগলামি ছাড়া আর কিছুই নয়!’ দুশানবেতে ২ জুন বাংলাদেশের এ্যাওয়ে ম্যাচ প্রসঙ্গে ক্রুইফের ভাষ্য, ‘আমার হাতে সময় স্বল্প। এটা অবশ্য জাতীয় দলের যে কোন কোচেরই সমস্যা। তারপরও ওই ম্যাচে আশাকরি ছেলেরা কৌশলগত দিক দিয়ে ভাল ফুটবল খেলবে। আমি খুশি যে আমার অনুপস্থিতিতেও দলটা ভাল অবস্থায় আছে। এখন তারা মাঠে সবকিছু ঠিকঠাক করতে পারলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিশ্বাস করি।
×