ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সন্তানের ভবিষ্যত

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ সংসারে ভাঙন- সন্তানের ভবিষ্যত

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ১৯ মে ২০১৬

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ সংসারে ভাঙন- সন্তানের ভবিষ্যত

মাসুম মীকাঈল সংসারটা শুরু হয় সানাইয়ের সুরে। পরস্পর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য উপভোগ করার আশায়। বৈধ সন্তান-সন্ততি বা ভবিষ্যত প্রজন্ম উৎপাদনের উদ্দেশ্যে। এখানে থাকে একটি প্রতিজ্ঞা পূরণের অঙ্গীকার আর এক যৌথ দায়িত্ব। থাকে পরস্পরের ভালবাসা, থাকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কিন্তু এসব কিছুই যখন পরস্পরের অন্তরায় হয়ে যায় তখন সৃষ্টি হয় ভাঙ্গন, সংসার ভাঙ্গন! দুই চাকা ছাড়া যেমন সাইকেল, চলে না তেমনি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে সেই সংসার সরল সোজা চলে না, ভঙ্গুর হয়ে যায়। সংসার জীবনে একজন কিংবা উভয়ের মধ্যে মাদকাসক্ত হলে, পরকীয়া সম্পর্কে লিপ্ত হলে, দুজনের জীবনযাপনে পার্থক্য উদ্ভব হলে, যৌতুক দাবি উপস্থাপন হলে, অবাধ্যতা এলে, সন্দেহ প্রবণতা বৃদ্ধি পেলে, স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ না পেলে, শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের শিকার হলে সংসার ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। ফলে কখনও কর্তী, কখন কর্তা পরস্পরের প্রতি নিষ্ঠুর হতে থাকে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য সংসারে প্রকট হয়। সংসার আর সংসারে অবস্থান করে না বিরাজ করে অশান্তি, অস্থিরতা। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ এখন তার রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করেই তার তাৎক্ষণিক বহির্প্রকাশ করছেন। মতের মিল না হওয়ায় এবং স্ত্রীর আর্থিক চাহিদা মেটাতে না পারায় অনেক পুরুষ স্বেচ্ছায় বিচ্ছেদমুখী হচ্ছে। একটি জরিপে দেখা যায়, দেশে নারীরাই বিবাহ বিচ্ছেদে শতকরা হারে এগিয়ে আছে। নারীরা শিক্ষায় এবং কর্মে আত্মনির্ভরশীল হওয়ায় এর প্রবণতা বাড়ছে। সংসার চালানোর ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা উভয় সামাল দিচ্ছে নারীরা যার ফলে সংসার ভাঙ্গন কিংবা তালাক দেয়াকে অভিশাপ মনে করছে না। কিন্তু এসবের কারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের সন্তানেরা। মা ও বাবার লালনে-পালনে সন্তান না থাকলে তারা ধীরে ধীরে অপরাধী হয়ে ওঠে। অভিভাবকহীন সন্তান বৈঠা ছাড়া নৌকার মতো। স্র্রোতের প্রবাহই তার ভবিষ্যত। মায়ের স্নেহ বাবার আদর প্রত্যেক শিশুর জন্মগত অধিকার। বিচ্ছিন্ন পরিবারে সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত কদাচিৎ সুসংবাদের আওয়াজ পায়। তাদের সন্তান হয়ে ওঠে আত্মকেন্দ্রিক। মানসিক বিকাশে হয় বাধাগ্রস্ত। তাদের একাকিত্ব তাদের কুরে কুরে খায়। সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। তারাই অবশেষে বেছে নেয় অন্যায়, অপরাধের পথ! এমন অবস্থা কখনই বাঞ্ছনীয় নয়। সংসারের সন্ধি বিচ্ছেদ এমন, সম্ যোগ সার। অর্থাৎ সংসারে উভয়কে হতে হয় সমান। ঠিক দ্বিচক্রযানের মতো। বিয়েটা এমন করে হয় না। অনেকে সারাজীবন সংসার করার পরও মনকে বুঝতে পারে না। তাই ছোটখাট ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে। যদি ছোটখাট ঝগড়া বিবাদ ভুলে থাকা যায়, সন্দেহ এড়িয়ে চলা যায়, যৌতুককে না বলা যায়, বিশ্বাস দৃঢ় করা যায়, মতের মিল রাখতে পারা যায়, ধর্মীয়ভাবে জীবনযাপন করতে পারা যায়, দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা যায়, পরস্পরকে বুঝতে পারা যায় ইত্যাদি সমঝোতামূলক ইতিবাচক কাজ করতে পারা যায় তবেই সংসার ভাঙ্গনের পরিণতি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। এতে করে সংসার হতে পারে অটুট। সন্তানের ভবিষ্যত হতে পারে আলোকিত। বিলাসপুর, জয়দেবপুর থেকে
×