অর্পিতা সুলতানা
বর্তমান সমাজে যে বিষয়টা খুব বেশি পরিলক্ষিত হয় তা হলো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি। সন্দেহপ্রবণতা আর্থিক জটিলতা স্ত্রীর চাকরির ক্ষেত্রে স্বামীসহ পরিবারে অন্য সদস্যদের দৃষ্টিভঙ্গি- যা থেকে সৃষ্টি হচ্ছে সংসারের ভাঙ্গন। সংসারের এই ভাঙ্গনের মাঝামাঝি পড়ে কোমলমতি সন্তানেরা। বাবা-মা নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে কোমলমতি বাচ্চারা যে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয় সে কথা খেয়ালই থাকে না তাদের।
স্বামী-স্ত্রীর ডিভোর্সের পর সন্তান বাবার কাছে থাকে অথবা মায়ের কাছে থাক না কেন তারা কিন্তু একজনের আদর-স্নেহ, ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়। তাছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় মা-বাবা ডিভোর্সের পর অন্যত্র বিবাহ করেন। একজন সন্তান মায়ের অথবা বাবার দ্বিতীয় বিবাহের কারণে এক ধরনের হীনম্মন্যতায় ভোগে। স্কুলের সহপাঠীদের কাছে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে সৎ বাবা-মায়ের প্রসঙ্গ চলে আসে, অনেকে ব্যঙ্গ করে তখন বাবা মায়ের প্রতি প্রচ- রাগ হয়।
বাবা মায়ের ডিভোর্সের পেছনে যে কারণই থাক না কেন তা কোমলমতি শিশুমন অনুসন্ধান করতে যায় না। অনেক সময় শিশু হিনম্মন্যতা থেকে অপরাধপ্রবণতার দিকে ঝুঁকে পড়ে। লেখাপড়া থেকে একটু একটু করে সরে বিপথে ধাবিত হয়। অনেক সময় মানসিক কষ্টের কারণে শিশুর সুষ্ঠু বিকাশ সম্ভব হয় না। যে শিশুটি হতে পারত একটা সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল ভবিষ্যত সেই শিশুটিই বাবা-মার বিচ্ছেদের বলি হয়ে সারাটা জীবন অসুস্থ-অস্বাভাবিক জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়।
তাই সন্তান জন্মানোর পর যদি কোন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয় তাহলে দু’জনের অবস্থান ধরে রাখার জন্য ডিভোর্সের মতো হটকারী সিদ্ধান্ত না নিয়ে সন্তানের কথা ভেবে সমঝোতায় আসা উচিত। নিজেদের ভাল লাগা, খারাপ লাগাকে অধিকতর গুরুত্ব না দিয়ে সন্তানকে গুরুত্ব দেয়া। এক্ষেত্রে সামাজিক মাধ্যমগুলোর কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে। সন্তানের জন্য বাবা মায়ের বিচ্ছেদ কতটা ক্ষতিকর সন্তানের ভবিষ্যত কতটা ঝুঁকিপূর্ণ সে সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা। যেমনÑ সচেতনতামূলক নাটক, গল্প, সামাজিক মূল্যবোধ, সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে পারিবারিক বন্ধন বা ভিত মজবুত করার মধ্য দিয়ে ভাঙ্গন থেকে সংসারকে মুক্ত রাখা সম্ভব। সংসারের অন্য সদস্যদেরও পালন করতে হবে কার্যকরী ভূমিকা।
হীরাডাঙ্গা, ঝিনাইদহ থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: