ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৯ মে ২০১৬

প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করে তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম অগ্রসর হতে যাচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারসহ শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদদের উপস্থিতিতে বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নসংক্রান্ত সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমরা ২০১০ সালের শিক্ষানীতির আলোকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পুরো ইতিহাসে এ ধরনের সিদ্ধান্ত এই প্রথম। শিক্ষামন্ত্রী জানান, শিক্ষানীতি বাস্তবায়নসংক্রান্ত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সকল শিক্ষা কার্যক্রম প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যাবে। এরপরে একটু আনুষ্ঠানিকতা আছে। এখন একটা সারমর্ম প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে অনুশাসন নিয়ে আসতে হয়। প্রয়োজনে মন্ত্রিসভার অনুমোদন করতে হবে পরে। সেটা আনুষ্ঠানিকতা। শিক্ষা নীতির আলোকে এই সিদ্ধান্ত নিতে আমরা ক্ষমতাবান। দুই মন্ত্রণালয় মিলে ঠিক করে নিয়েছি, এতে কেউ দ্বিমত করবে না। যা কিছু বদলাবে ॥ প্রাথমিক শিক্ষা হবে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষা কার্যক্রম দেখভাল করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরিবর্তন আসবে তদারকি পর্যায়ে অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। যেসব স্কুল এখন পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ায়, আপাতত সেগুলো অষ্টম পর্যন্ত হবে না। সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীও খোলা হবে না। পঞ্চম শ্রেণীর বদলে অষ্টম শ্রেণী ধরা হবে প্রাথমিকের সমাপনী কাল। এখনকার মতো প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা থাকবে কিনা, থাকলে তা কিভাবে, সে সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় পরে জানাবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, নতুন ব্যবস্থায় সমাপনী পরীক্ষা এবং বিদ্যালয় পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কারিকুলাম ও প্রশ্নের জন্য আলাদা কমিটি হবে। তিনি বলেন, অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত যে যেখানে যেভাবে আছে, সেভাবেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যাবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এ প্রসঙ্গে বলেন, শিক্ষানীতি হওয়ার পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা হলে হয়ত সব প্রাইমারী স্কুলে ক্লাস এইট পর্যন্ত খোলা হবে, যদিও তা সঠিক নয়। আমাদের দেশের প্রায় সব ইউনিয়নেই নিম্ন এবং মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা অনেক। কোথাও ৫-৭টাও আছে। সব প্রাইমারীতে যদি হাই স্কুল খোলা হয়, সব হাইস্কুলেই যদি একাদশ দ্বাদশ খোলা হয়, তাহলে বড় ধরনের ম্যাসাকারের মতো ব্যাপার হবে। কোন ছাত্রই কেউ পাবে না। এসব কিছু মাথায় রেখে সব স্কুলে আর ক্লাস এইট খোলা যাবে না, দরকার নাই। যেখানে যেভাবে আছে, সেভাবেই শিক্ষা নীতির আলোকে আমরা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাস্তবায়ন করব। লক্ষ্যপূরণ আগেই ॥ শিক্ষানীতিতে ২০১৮ সালের মধ্যে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা হিসেবে বিবেচনার কথা বলা হয়েছিল জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালেই সে লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে এর পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া সম্ভব হবে। এ সিদ্ধান্তের ফলে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রমে বড় পরিবর্তন আসবে। পাঠ্যক্রম, কাঠামো, শিক্ষক, প্রশিক্ষণ, আয়োজন, জনবল, ব্যবস্থাপনাÑ সব কিছুই নতুন করে সাজাতে হবে। সবার সহযোগিতা নিয়েই এ বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যার যার মন্ত্রণালয়ের কাজগুলো স্থির করুন। কার কী সহযোগিতা দরকার সেটা বলুন, আমরা বলছি, আমাদের এই বড় পরিবর্তনে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা দিয়ে যাব। মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, অনেক কিছু বাকি। এর তদারকি যা করা দরকার সেটা আমরা করব। এই ঐতিহাসিক দিনে এই সিদ্ধান্তটা আমরা নিলাম। কোথায় পড়ছে, কী পড়ছে, বেসরকারী নাকি মাদরাসায়Ñ এসব না, অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত যে ডিগ্রী হবে, সেটা হবে প্রাথমিক শিক্ষার। অন্যদের মধ্যে শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোঃ আখতারুজ্জামান শিক্ষানীতি বাস্তবায়নসংক্রান্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন।
×