ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার উৎখাতে বিএনপি জামায়াত ইসরাইলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৯ মে ২০১৬

সরকার উৎখাতে বিএনপি জামায়াত ইসরাইলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট বর্তমান সরকারকে উৎখাতে ইসরাইলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তিনি দেশের জনগণকে এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত এখন এতটাই বেপরোয়া যে, তারা সকলে মিলে এখন আমাকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করছে। সত্য কোনদিন চাপা থাকে না। বিএনপি-জামায়াত যাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তারা প্রতিনিয়তই ফিলিস্তিনে নারী ও শিশু হত্যা করে যাচ্ছে।’ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বাংলা প্রবাদ উদ্বৃত করে বলেন, ‘রতনে রতন চেনে।’ প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লন্ডনের সেন্ট জেমস কোর্ট হোটেলে অবস্থানকালে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। খবর বাসসর। ইসরাইলের রাজনৈতিক এবং গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সরকার উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পুলিশের হাতে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরী গ্রেফতার হওয়ার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরিফের সভাপতিত্বে আয়োজিত আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান খান। সর্বইউরোপীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি অনিল দাশগুপ্ত এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শামসুদ্দিন খান এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। ষড়যন্ত্রকারীদের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশের বিরুদ্ধে যেমন ষড়যন্ত্র করে চলেছে তেমনি ইসলামের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কুচক্রী এবং ঘাতকচক্র দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, ইসলামের বিরুদ্ধেও তাদের ষড়যন্ত্র চলছে। তারা আসলে বাংলাদেশ চায় না এবং তারা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বোঝে না।’ শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতে অসংখ্য মানুষ হত্যা এবং সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটতরাজ করেছে। এখনও তাদের সে চরিত্রের কোন পরিবর্তন হয়নি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল এবং সরকার উৎখাতের জন্য গত বছরের প্রথম তিন মাসে বিএনপি-জামায়াতের মানুষ হত্যা ও নৈরাজ্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পোড়া মানুষের লাশের ওপর দিয়ে তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল।’ তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ঘোষণা দিয়েছিলেন- সরকার উৎখাত না করে ঘরে ফিরবেন না এবং তার আন্দোলন ছিল মানুষ হত্যার আন্দোলন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য থেকে সে সময় সাধারণ মানুষ এমনকি নারী, শিশু, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পর্যন্ত রেহাই পায়নি। সে দুঃসহ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য বেগম জিয়া আজ পর্যন্ত দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি।’ শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণ জনগণ বিএনপি-জামায়াতের ওই জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তিনি বলেন, সাধারণের প্রতিরোধের মুখে বিএনপি-জামায়াত তাদের সন্ত্রাস বন্ধ করে লেজ গুটিয়ে পালাতে বাধ্য হয়। পাপ বাপকেও ছাড়ে না, বলেন প্রধানমন্ত্রী। বিএনপি-জামায়াত অপরাধীচক্র ২০১৩ ও ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসে সারাদেশে প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষ হত্যা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ কিন্তু এসব হত্যাকা- সমর্থন করেনি এমনকি আন্তর্জাতিক মহলও না। দেশের সাস্প্রতিক কিছু গুপ্তহত্যা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তারা মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, গির্জার পাদ্রি এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেছে বেছে খুন করছে।’ তিনি বলেন, ‘তারা সম্প্রতি ইউএসএআইডির কর্মকর্তা এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির কাজিনকে হত্যা করেছে এবং ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করেছে।’ বিএনপি-জামায়াত মানুষ হত্যা ছাড়া আর কিছুই বোঝে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলায় এবং একের পর এক রায়ে তাদের ফাঁসি কার্যকর হতে থাকায় একাত্তরের পরাজিত শক্তি মোটেও স্বস্তিতে নেই বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে এবং গণহত্যা চালায় তারাই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আদালতে চিহ্নিত হয়েছে এবং বিচারের রায়ে তাদেরই ফাঁসির দ- কার্যকর করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিএনপি-জামায়াতের মন্ত্রিত্ব প্রদান সম্পর্কে তিনি বলেন, যারা আমাদের রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা এসব মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের হাতে তুলে দিয়েছিল তাদেরও বিচার করা হবে। তারাও সমান অপরাধে অপরাধী। আমাদের রক্তস্নাত জাতীয় পতাকাকে পরাজিত শক্তির হাতে তুলে দেয়া চক্রকে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির ঘৃণা করা উচিত উল্লেখ করে এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা এমনভাবে হওয়া উচিত যেন পরাজিত শক্তি এ ঘৃণাটা উপলব্ধি করতে পারে।’ ১৯৮১ সালের এই দিনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দীর্ঘ প্রবাসজীবন কাটিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সে সময় বিদেশে অবস্থানকালীন পরিবারের দুজন মাত্র জীবিত সদস্য বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা এবং ছোট মেয়ে শেখ রেহানাকে আর দেশে ফিরতে দেয়া হয়নি। উভয়েই ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক অধ্যায় সংঘটনের সময় জার্মানিতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর তাঁর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী জাতীয় চার নেতাকে কারাগারের অভ্যন্তরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সে সময় আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিঃশেষ করার জন্য দলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘ছয় বছর প্রবাসে কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ দিনে আমি দেশে ফিরে আসি। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ, দলীয় নেতাকর্মী আমাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানায়।’ শূন্যহাতে তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন দলীয় নেতাকর্মীদের সাহস এবং প্রেরণা ব্যতীত কোন সম্পদ ছিল না তাঁর কাছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন দেশে ফিরে এলাম, লাখ লাখ মানুষের ভালবাসা আমাকে সিক্ত করল কিন্তু আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি যাঁর ভালবাসাই সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশিত ছিল- তিনি সেখানে ছিলেন না।’ জাতির পিতা এবং পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শহীদ, পরিবারের ভাগ্যাহত সদস্যদের স্মরণ করে এ কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশী, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি, বুদ্ধিজীবী এবং দেশের সাধারণ জনগণকে তাঁর পরিবার এবং দলের দুঃসময়ে পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ‘এটা আপনাদের সাহস ও ভালবাসারই ফল, যে কারণে আজ আমরা এতদূর আসতে পেরেছি।’ পঁচাত্তরপরবর্তী স্বৈরশাসকদের ইতিহাস বিকৃতির ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরপরবর্তী সময়ে তারা পরাজিত শক্তির সঙ্গে মিলে দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধূলিস্যাত করার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে।’ প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় সরকারের নানাবিধ সাফল্যের তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশকে এখন আর কেউ অবহেলার চোখে দেখে না।’
×