ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

লিয়াকত আলী ও রজব আলীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৯ মে ২০১৬

লিয়াকত আলী ও রজব আলীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার রাজাকার কমান্ডার লিয়াকত আলী ও কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার আলবদর আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আগামী ২১ জুন মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। বুধবার একই মামলার ওই দুই আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন জানান প্রসিকিউটর শাহিদুর রহমান ও রেজিয়া সুলতানা চমন। শুনানি শেষে অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। একাত্তরে লাখাই থানার ফান্দাউক (বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা) ইউনিয়ন রাজাকার কমান্ডার সে সময়কার মুসলিম লীগ নেতা মোঃ লিয়াকত আলী ও অষ্টগ্রাম থানার আলবদর কমান্ডার রজব আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও লুটপাটের সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা দু’জনে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাশাপাশি তিন থানা হবিগঞ্জ জেলার লাখাই, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে এসব অপরাধ সংঘটিত করেন। এর মধ্যে রয়েছে লাখাইয়ের কৃষ্ণপুরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১২৭ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফান্দাউকে নিরীহ নারী-পুরুষকে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের অভিযোগ। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ওইদিনই এ তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তৈরি করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে প্রসিকিউশন। ৩১৩ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে ১৭৯ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণ, ৭২ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদন এবং ৬২ পৃষ্ঠার সাক্ষীদের জবানবন্দী রয়েছে। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ নূর হোসেন ২০১৪ সালের ৫ নবেম্বর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত তদন্তকাজ সম্পন্ন করেন। ঘটনার ২৭ জন ও জব্দ তালিকার ২ জনসহ মোট ২৯ জন সাক্ষী ২ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন দুই আসামির বিরুদ্ধে। ১৯৭১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের ছাত্র ও মুসলিম লীগের নেতা লিয়াকত আলী ফান্দাউক ইউনিয়নে রাজাকার কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন পালিয়ে ছিলেন তিনি। পরে এলাকায় ফিরে একসময় লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুড়াকরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানার আলীনগর গ্রামের রজব আলী ভৈরব হাজী হাসমত আলী কলেজে একাদশ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ইসলামী ছাত্রসংঘের কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভৈরবে পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে রজব আলী এলাকায় আলবদর বাহিনী গঠন করেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে দালাল আইনে তিনটি মামলা হয় এবং ওইসব মামলার বিচারে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। ১৯৮১ সালে রজব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন। এরপর তিনি ‘আমি আলবদর বলছি’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন।
×