ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রেকর্ড পরিমাণে ঘাটতি বেসিক ব্যাংকের

প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ ৬ ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ১৯ মে ২০১৬

প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ ৬ ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংক খাতে খেলাপী ঋণ যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন ঘাটতি। তিন মাসের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬২ কোটি টাকা। এই সময়ে বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে ৬ ব্যাংক। গত মার্চের প্রান্তিক থেকে এ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে জনতা ও প্রিমিয়ার ব্যাংক। বাকিগুলোর মধ্যে আগের প্রান্তিকের চেয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি কমলেও বেড়েছে বেসিক, সোনালী ও কমার্স ব্যাংকের। ব্যাংকগুলোর মধ্যে গত তিন মাসে এক বেসিকেরই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টদের দাবি, খেলাপী ঋণ বাড়ার কারণে প্রয়োজনীয় প্রভিশনের পরিমাণ বাড়ছে, যে কারণে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর ঋণের ঝুঁকি বিবেচনা করে তার বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। খেলাপী ঋণ বাড়লে ব্যাংকের প্রভিশন রাখার প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। আর প্রভিশন ঘাটতি রেখে কোন ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। এক সময় কোন ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি থাকলে শুধু সতর্ক ও ঘাটতি মেটাতে দিকনির্দেশনা দিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে কোন ব্যাংকে টানা দু’বছর ঘাটতি থাকলে তার বড় অঙ্কের জরিমানাসহ লাইসেন্স বাতিলের কথা বলা হয়েছে। এসব কারণে নানা উপায়ে প্রভিশন ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করে ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে সামগ্রিকভাবে প্রভিশন ঘাটতি কিছুটা কমেছে। আলোচ্য সময়ে ৩৩ হাজার ৬১৫ কোটি ৬৭ হাজার কোটি টাকা প্রভিশনের বিপরীতে সংরক্ষণ করা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৯১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁিড়য়েছে প্রায় ৬ হাজার ৬২ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতের সামগ্রিক প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৪ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মার্চ শেষে সরকারী ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ৫ হাজার ৫৭১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এসব ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ৬৮৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা এবং জনতা ব্যাংকের ২৩০ কোটি ৬৬ টাকা ঘাটতি রয়েছে। বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে ১ হাজার ২০০ কোটি ১৬ লাখ টাকা প্রভিশন অতিরিক্ত রয়েছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে কমার্স ব্যাংকের ২৪৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৮৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ১৩৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। এই দুই ব্যাংকের মধ্যে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কমার্স ব্যাংকের ২২৩ কোটি ও ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৫৫ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল। প্রভিশন ঘাটতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তালিকায় নতুনভাবে যুক্ত হওয়া প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার ফজলে রশিদ বলেন, বিভিন্ন কারণে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়, এর মধ্যে একটি খেলাপী ঋণ। খেলাপী যত বাড়ে, প্রভিশন তত বেশি সংরক্ষণ করতে হয়। সবসময় এটা হয়ে ওঠে না। তিনি জানান, প্রভিশন ঘাটতি পূরণে প্রিমিয়ার ব্যাংককে তিন বছরের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছর থেকে এ সময় কার্যকর হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে আলোচিত বেসিক ব্যাংকে মার্চে এসে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৭৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আগের প্রান্তিক শেষে ঘাটতি ৩ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা। সামগ্রিক ব্যাংক খাতে খেলাপী ঋণ কমলেও বেসিক ব্যাংকের খেলাপী ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনে বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগরসহ কয়েকটি শাখা থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণে অনিয়মের তথ্য উঠে আসে। মূলত ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত এসব অনিয়ম হয়। অনিয়মের প্রভাবে ব্যাংকটির খেলাপী ঋণ অস্বাভাবিক হারে বাড়ার পাশাপাশি নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে ব্যাংকটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, বড় ধরনের ঋণ অনিয়মের পর বেসিক ব্যাংক এখনও ভাল অবস্থানে আসতে পারেনি। ব্যাংকটির খেলাপী ঋণ আগের প্রান্তিকের তুলনায় অনেক বেড়েছে। একই সময়ে প্রভিশন ঘাটতিও বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকির ফলে বেসিকসহ সব ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতি মেটানোর পাশাপাশি সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তিনি আশা করেন। প্রসঙ্গত, মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণ বেড়ে ৫৯ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা গিয়ে ঠেকেছে, যা মোট অনাদায়ী ঋণের ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।
×