ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বৃক্ষসম্পদ

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ২০ মে ২০১৬

বৃক্ষসম্পদ

বৃক্ষ নিধনের সংবাদ সত্যিকারের কল্যাণকামী মানুষকে বিব্রত ও ব্যথিত করে। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে সচেতনভাবে হোক, আর সচেতনতার অভাবেই হোক বৃক্ষ নিধনের উৎসব চলে। এ ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য সময়ের অপেক্ষায় থাকে না অপরিণামদর্শী ব্যক্তিরা। যেকোন ঋতুতেই চলে এই জীবনবিরোধী অপতৎপরতা। নানা অজুহাত তুলে সরকারী বনাঞ্চলে গাছ কাটা হয়। এমনকি সড়ক উন্নয়নের নামেও গাছ কাটা হয়। একটি গাছ কাটলে দুটি গাছ লাগানোর কথা বলেন অভিজ্ঞজনরা। কেন বলা হয় সেটা আমরা খতিয়ে দেখি না। গাছ পরিবেশের জন্য কত জরুরী সেটা যেন আমরা বুঝেও বুঝতে চাই না। মানুষের মতো দুই হাত দুই পা আর চেহারা পেলেই কি মানবসন্তান মানব হতে পারে? তার ভেতরে চাই মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ। মানবজমিনে মানুষের সঙ্গে সহাবস্থান করে বৃক্ষ। এই বৃক্ষসমাজের প্রতি আমাদের আচরণ কীরূপ? তাদের প্রতি আমরা কতটুকু কর্তব্য পালন করি? অথচ মানবজীবনের সুস্থতার স্বার্থেই বৃক্ষসম্পদের সুরক্ষা জরুরী। এই বিষয়টি আমরা বুঝেও বুঝি না। পরিবেশ সংরক্ষণে গাছ বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিল্প, চিকিৎসা, পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণ, সর্বক্ষেত্রেই গাছের ভূমিকা অপরিসীম। তাই জীবনের প্রয়োজনে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। গাছ ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক। যার ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রাণিকুল আজীবন সর্বাংশে নির্ভরশীল। কোন দেশের পরিবেশ রক্ষায় ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে শতকরা ২৫ ভাগ বৃক্ষাবৃত্ত রাখা অপরিহার্য। দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বনভূমি আমাদের নেই। সরকারী হিসেবে ১৬ ভাগ হলেও বাস্তবে বনভূমির পরিমাণ মাত্র ৭.৭০%। আর ওয়ার্ল্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, মাত্র ৫ শতাংশ। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বনভূমির পরিমাণ মাত্র ৩.৫ শতাংশ। তাই সময়ের প্রয়োজনে গাছ লাগানো এখন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বৃক্ষের ব্যাপক আবশ্যকতা রয়েছে। মানব জীবনের সঙ্গে বৃক্ষের সম্পর্ক সুগভীর। তাই বৃক্ষকে মানব জীবনের ছায়াস্বরূপ বলা হয়। বৃক্ষ আমাদের নীরব বন্ধু। নিঃসন্দেহে বৃক্ষরোপণ একটি মহৎ প্রচেষ্টা। সংসার জীবনে প্রবেশের পর মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেকখানি বেড়ে যায়। পরিবারে সন্তান এলে তাকে লালন পালন করে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কঠিন ব্রতটিও সামনে চলে আসে। তাই সংসার জীবনে প্রবেশের জন্য বা বিয়ে করার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক হওয়াই একমাত্র শর্ত হতে পারে না। তাকে দায়িত্ব গ্রহণ ও দায়িত্ব পালনের উপযোগী হতে হয়। মানবসখা বৃক্ষের প্রতিও সেই মানবের দায়টুকু সে পূরণ করছে কিনাÑ এটাও একটা প্রশ্ন হয়ে ওঠা মোটেই অসমীচীন নয়। তাই মানুষকে তার পরিবেশ ও পরিপার্শ্ব সম্পর্কে সচেতন করার পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রসঙ্গত, রাজধানীর প্রধান সড়কসমূহের মাঝখানের আইল্যান্ডে এবং দুই পাশে এমন গাছ লাগানো ঠিক নয়, যার শেকড় দূরে ছড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। বরং এসব স্থানে ছোট গাছ, যেমন ফুলগাছ লাগানো যায়। এটা যে কেবল শোভা বাড়ানোর কাজ করবে তা নয়, পরিবেশেরও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাবে। তাই বৃক্ষরোপণ ও রক্ষার কাজটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।
×