ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এটিএম বুথে জালিয়াতিÑচীনা নাগরিক রিমান্ডে, পালিয়েছে ২ সহযোগী

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২০ মে ২০১৬

এটিএম বুথে জালিয়াতিÑচীনা নাগরিক রিমান্ডে, পালিয়েছে ২ সহযোগী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে জালিয়াতির মাধ্যমে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নেয়ার ঘটনায় রীতিমতো হৈচৈ পড়ে গেছে। খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকও হতবাক। কারণ ইতোপূর্বে এমন জালিয়াতির পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিটি ব্যাংককে এটিএম বুথে এ্যান্টি স্কিমিং ডিভাইস বসানোর নির্দেশ জারি করেছিল। দ্বিতীয় দফা জালিয়াতির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ বাস্তবায়ন নিয়ে স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে। বুধবার গ্রেফতারকৃত চীনা নাগরিককে একদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। পালিয়ে গেছেন আরও দুই বিদেশী, যারা জালিয়াতির মাধ্যমে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নেয়ার সঙ্গে জড়িত। এমন জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত আরও বিদেশী দেশে বা বিদেশে অবস্থান করছেন কি-না সে বিষয়ে রিমান্ডে চীনা নাগরিকের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ইতোপূর্বে পিটার নামে এক বিদেশী একই অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে। বুধবার রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে প্রাইম ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়ার সময় র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় চীনের নাগরিক জু উজং হুই (৩৫)। র‌্যাব জানায়, তিনি এগারোবার টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করেন। এর মধ্যে তিনি ৬৬ হাজার টাকা তুলে নেন। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, জালিয়াতির ওই মামলায় চীনের নাগরিককে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম আলমগীর কবিরের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন কলাবাগান থানার পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান। শুনানি শেষে আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এদিকে, বৃহস্পতিবার র‌্যাব-২-এর কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান গ্রেফতারকৃত চীনা নাগরিককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে জানান, গত ১৫ এপ্রিল গ্রেফতারকৃত উজং হুইসহ তিন চীনা বাংলাদেশে আসেন। তারা রাজধানীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের এক চীনার মালিকাধানী একটি বাসায় পেইং গেস্ট হিসেবে বসবাস করছিলেন। উত্তরার ২০ নম্বর রোডের ২২ নম্বর বাড়িতে তারা খাওয়া-দাওয়া করতেন। চলাফেরা করতেন তিনজনই একত্রেই। বুধবার উজং যখন এলিফ্যান্ট রোডের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলছিলেন, ঠিক একই সময়ে অপর দুই চীনা ফার্মগেট ও পান্থপথ থেকে ৫ লাখ ৯ হাজার টাকা তুলে নেন। উজং গ্রেফতার হলেও অপর দু’জনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। গ্রেফতারের পর উজংয়ের তথ্যমতে বৃহস্পতিবার উত্তরার ওই চীনার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু ততক্ষণে ওই দুই চীনা পালিয়ে যান। বাসার মালিক চীনের নাগরিক পেন জ্যু জানান, উজংয়ের সহযোগী দুই চীনা বৃহস্পতিবার সকালেই মালয়েশিয়ান এয়ারওয়েজের একটি বিমানে ঢাকা ত্যাগ করেন। কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান আরও জানান, গ্রেফতারকৃত চীনার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত কার্ড দুটি ব্যাংক অব রিয়াদের নকল কার্ড। তারা বাংলাদেশে প্রবেশের আগে সৌদি আরব ভ্রমণ করেছিলেন। সব মিলিয়ে তিন চীনা পৌনে ৬ লাখ টাকা বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে তুলে নিয়েছেন। গ্রেফতারকৃত উজং ও পলাতক দুই সহযোগী আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের সদস্য কি-না সে বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এটিএম বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকের এটিএম কার্ডের তথ্য চুরি করে। এর পর সে তথ্য অনুযায়ী এটিএম কার্ড বানিয়ে তা দিয়ে বিভিন্ন বুথ থেকে টাকা তুলে নেয়। ইতোপূর্বে গত ২১ ফেব্রুয়ারি জালিয়াতির মাধ্যমে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নেয়ার ঘটনায় গ্রেফতার হয় জার্মানির নাগরিক পিওটর স্কেজেফান মাজুরেক (৫০), বাংলাদেশের সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা মোকসেদ আলী মাকসুদ (৪৫), রেজাউল করিম শাহীন (৪০) ও রেফাত আহমেদ রনি (৪২)। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাজুরেক একটি আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের সদস্য। চক্রটি বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চক্রটি এটিএম বুথে কার্ড প্রবেশ করানোর ফাঁকে পাতলা স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে রাখে। এটিএম বুথে কার্ড প্রবেশ করানোমাত্র কার্ডের সমস্ত তথ্য ওই ডিভাইসে জমা হয়। এর পর ওই তথ্য দিয়ে কার্ড বানিয়ে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নেয় চক্রটি। এমন ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত এটিএম বুথগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে এক মাসের মধ্যে প্রতিটি এটিএম বুথে এ্যান্টি স্কিমিং ডিভাইস বসানোর নির্দেশ জারি করে। পাশাপাশি বুথগুলোতে নিরাপত্তা ডিভাইস বসানোর কথাও বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় এটিএম কার্ড ক্লোন করে একই পদ্ধতিতে প্রতারণার ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক রীতিমতো হতবাক। এটিএম বুথের নিরাপত্তা এবং বুথগুলোতে এ্যান্টি স্কিমিং ডিভাইস বসানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছিল, আরেক বিদেশী গ্রেফতারের ঘটনা তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি বলে প্রমাণ করে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্ত পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
×