ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোয়ানু: সরিয়ে নেয়া হচ্ছে উপকূলবাসীদের

প্রকাশিত: ০২:৪১, ২০ মে ২০১৬

রোয়ানু: সরিয়ে নেয়া হচ্ছে উপকূলবাসীদের

অনলাইন ডেস্ক ॥ ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ক্ষতি মোকাবেলায় শুক্রবার রাত ৮টার মধ্যে উপকূলীয় এলাকার মানুষজনকে সরে যেতে বলেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এরই মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল। অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “রাত ৮টার মধ্যে তাদের সরিয়ে নিতে সারাদেশে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ১৮ জেলার সাড়ে ২১ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হবে।” জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও জানান সচিব। “ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে এমন ১৮টি জেলার ৩৮৫১টি আশ্রয়কেন্দ্রে এসব মানুষকে আনা হবে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” শাহ কামাল বলেন, ‘সারাদেশে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলে তারা সেটা তদারকি করছেন। শুক্রবার দুপুর থেকেই মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া শুরু হয়েছে।’ শুক্রবার চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারির পর মূলত উপকূলবাসীদের সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়। জেলা পর্যায়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার পাশাপাশি সকল উপজেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোলরুম। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে সব ধরণের পণ্য উঠানামা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এদিকে পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত চট্টগ্রামের সকল সরকারি ও আধা-সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবরকম ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সাগরে থাকা অধিকাংশ মাছ ধরার নৌযানগুলো উপকূলে ফিরেছে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনও। শুক্রবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছি। ঘূর্ণিঝড়টি বাঁশখালী-আনোয়ারা উপকূল দিয়ে আঘাত হানার সম্ভাবনা আছে। তাই সেখানকার বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। এই দুই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা পুরো বিষয়টি তদারকি করছেন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে উপজেলাগুলোর সকল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোকে। জেলা প্রশাসক জানান, জেলা কন্ট্রোলরুমের নম্বর হচ্ছে ৬১১৫৪৫। বাংলাদেশ বেতারে সতর্কতা সংকেত বারবার ঘোষণা করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে স্বেচ্ছাসেবকরা ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার কাজের জন্য চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে অবস্থান করছে। জেলা প্রশাসনের ভাণ্ডারে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। এছাড়া উপজেলা শুকনো খাবার পাঠানো হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দরে জরুরি সভায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু মোকাবেলায় কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থানরত সকল লাইটারেজ জাহাজকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বন্দরে অবস্থানরত সকল পণ্যবাহী জাহাজকে দুই ঘণ্টার নোটিশে বঙ্গোপসাগরের বর্হিনোঙ্গরে নোঙ্গর করতে বলা হয়েছে। এদিকে শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পূর্বে জারি করা এলার্ট-টু নামিয়ে এলার্ট-থ্রি জারি করেছে। বন্দর সূত্র জানায়, এলার্ট-থ্রি হল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা ধাপ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ৫, ৬ অথবা ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হলে বন্দরে এলার্ট-থ্রি জারি করা হয়। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস, আনসার ভিডিপি, রেড ক্রিসেন্ট, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বিদ্যুৎ, পরিবেশ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তরসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রোয়ানু চট্টগ্রামের দিকেই বেশি ঝুঁকে রয়েছে। তাই চট্টগ্রামে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। এটা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রামে হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দুপুর ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সাগর উত্তাল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ চট্টগ্রাম-নোয়াখালী অঞ্চলের ওপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের লোকবলের কথা জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে ৫৫ হাজার। এছাড়া রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রোভার স্কাউট ও আনসার ভিডিপিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিশাল কর্মীবাহিনী রয়েছে। এক্ষেত্রে তারা সবাই একযোগে কাজ করছে। সাধারণ মানুষকে নিরাপদ জায়গা আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকা নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা এবং বন্দর এলাকায় জাহাজ নিরাপদে সরিয়ে আনতে বলেছি।’ এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম ও তার আশপাশের জেলার উপকূলে সাত নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। মাঝারি ধরনের ঝড় হওয়ায় আমাদের আশা সতর্ক সংকেত ৭-ই থাকবে। তবে মংলা ও পায়রাবন্দর এলাকায় সতর্ক সংকেত ৫ থেকে ৭ হতে পারে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশ্লেষণ অনুযায়ী ঘুর্ণিঝড় শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
×