মুক্তাগাছার মহারাজ শশীকান্ত আচার্য্য চৌধুরীর ময়মনসিংহ শহরের বাগানবাড়ি আলেকজান্দ্রার ক্যাসেল, বর্তমানে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, টাউন হল, আনন্দ মোহন কলেজ, বিদ্যাময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রাহ্মমন্দির, বতর্মানে ময়মনিসংহ ল’ কলেজ, ঈশ্বরগঞ্জের আঠারবাড়ি জমিদার বাড়িসহ গৌরীপুর ও মুক্তাগাছা শহর আজও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বহন করছে। ১৯২৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে ট্রেনে চেপে কবি সফর সঙ্গীদের নিয়ে ময়মনসিংহ আসেন বিকেলে। রেলস্টেশনে মহারাজ শশীকান্ত ও অভ্যর্ত্থনা কমিটির সদস্যরা কবিকে আন্তরিক অভ্যর্র্ত্থনা জানান। পরে রেলস্টেশন থেকে কবিকে নিয়ে আসা হয় মহারাজ শশীকান্তের অতিথিশালা আলেকজান্দ্রার ক্যাসেলে। এখানে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে কবি সন্ধ্যায় যোগ দেন টাউন হলের নাগরিক সংবর্ধনায়। জীবনের শেষ বেলায় তিনি ময়মনসিংহ এসেছেন বলে তাঁর আক্ষেপের শেষ ছিল না। কবি ময়মনসিংহে ব্যস্ত সময় কাটান। সময়ের তুলনায় আমন্ত্রণের চাপ ছিল বেশি। এর মধ্যে কবি যতটা সম্ভব বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের আমন্ত্রণ রক্ষা করেছেন।
মহারাজ শশীকান্তের আমন্ত্রণে রবি ঠাকুরের এটিই ছিল ময়মনসিংহে প্রথম ও শেষ সফর। তিন দিনের সফরে কবি ছিলেন শশীকান্তের বাগান বাড়ি আলেজান্দ্রার ক্যাসেলে মহারাজার অতিথি হয়ে। প্রয়াত আহমদ রফিকের ‘ময়মনসিংহে রবীন্দ্রনাথ’ প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, কবি ময়মনসিংহ ছিলেন ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল পর্যন্ত। ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কবি যোগ দেন আনন্দ মোহন কলেজের সংবর্ধনায়। কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আন্তরিক উৎসাহ ও উদ্দীপনায় কবিকে অভ্যর্ত্থনা জানান। এ সময় বিশ্বভারতীর আদর্শ ও কর্মসূচীর প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন ৬২৫ টাকার তোড়া প্রদান করা হয় কলেজের পক্ষ থেকে। সংবর্ধনায় সভায় সভাপতি ছিলেন আনন্দ মোহন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ জে কে ঘোষ।
১৭ ফেব্রুয়ারি কবি যোগ দেন মুক্তাগাছার সাহিত্য সংসদ ত্রয়োদশী সম্মিলনে। বিশ্বভারতীর সাহায্যার্থে কবিকে দেড় হাজার টাকা এবং অভিনন্দনপত্র দেয়া হয় এ সময়। ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিদ্যাময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সন্ধ্যায় সিটি স্কুলে মহিলা সমিতি আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেন কবি। ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে শান্তি নিকেতনের প্রাক্তন ছাত্র জমিদার প্রমোদ চন্দ্র রায় চৌধুরীর আমন্ত্রণে কবি ঈশ্বরগঞ্জের আঠারবাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। সেদিন কবির সঙ্গে ছিলেন পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী, নাতনি নন্দিনী, ভ্রাতুষ্পুত্র দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কালিমোহন ঘোষ ও ব্যক্তিগত সচিব মি. হিরজাই মরিস। রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে রবীন্দ্র পর্ষদের উদ্যোগে প্রকাশিত এক দশক পূর্তি স্মারক-১৪১৫ থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ শেষবার ঢাকায় এসেছিলেন ১৯২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। ময়মনসিংহের তিন শহর মেতে উঠেছিল রবীন্দ্র উৎসবে।
Ñবাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: