ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মীর কাশেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ রায় শীঘ্রই

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২১ মে ২০১৬

মীর কাশেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ রায় শীঘ্রই

আরাফাত মুন্না ॥ কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদ- বহাল রেখে সুপ্রীমকোর্টের দেয়া রায় লেখা শেষ। শীঘ্রই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হচ্ছে। সুপ্রীমকোর্টের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জনকণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্রটি জানায়, রায় প্রদানকারী বেঞ্চের বিচারপতিরা অনুলিপিতে স্বাক্ষর করার পরই রায়টি প্রকাশ করা হবে। চলতি সপ্তাহেই রায়টি প্রকাশের সম্ভাবনা বেশি বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। গত ৮ মার্চ মীর কাশেম আলীর ফাঁসি বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর কুখ্যাত এই যুদ্ধাপরাধী রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করলে এর নিষ্পত্তির মাধ্যমে শেষ হবে মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ত্রাস এই যুদ্ধাপরাধীর মামলা। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর মীর কাশেম আলীকে মৃত্যুদ- দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৩০ নবেম্বর খালাস চেয়ে মীর কাশেম আলী সুপ্রীমকোর্টে আপীল করেন। ট্রাইব্যুনালে আটজনকে নির্যাতনের পর হত্যা ও মরদেহ গুম এবং ২৪ জনকে অপহরণের পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন নির্যাতন কেন্দ্রে আটকে রেখে নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী ১৪টি অভিযোগে অভিযুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াতের কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা ও ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক মীর কাশেম আলী। এই যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও। মীর কাশেমের বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণ হয়েছে। বাকি ৪টি অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি। ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি অর্থাৎ ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং ৪টি অর্থাৎ ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়। ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনসহ মোট ৮ জনকে হত্যার দায়ে কাশেমের মৃত্যুদ-াদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ১১ নম্বর অভিযোগে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনসহ ছয়জনকে ও ১২ নম্বর অভিযোগে রঞ্জিত দাস লাতু ও টুন্টু সেন রাজুকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। ১১ নম্বর অভিযোগে সর্বসম্মত ও ১২ নম্বর অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ফাঁসির রায় দেন বিচারপতিরা। ফাঁসি ছাড়াও প্রমাণিত অন্য ৮টি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে দ- দেয়া হয় চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল হোতা মীর কাশেম আলীকে। এর মধ্যে প্রমাণিত ফারুককে অপহরণ-নির্যাতনের দায়ে ২ নম্বর অভিযোগে ২০ বছর ও নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতনের ১৪ নম্বর অভিযোগের দায়ে ১০ বছরের কারাদ- পান তিনি। এছাড়া অপহরণ, আটক ও নির্যাতন সংক্রান্ত ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ৭ বছর করে কারাদ-াদেশ দেয়া হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে আপীল বিভাগের এক নম্বর বেঞ্চে ৭ কার্যদিবসে এ শুনানি শেষে চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের এ যুদ্ধাপরাধী নেতার আপীল মামলার রায় দেয়ার জন্য দিন ঠিক করে ৮ মার্চ। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান। ৮ মার্চ মীর কাশেমের আপীল আংশিক মঞ্জুর করে ৪, ৬ ও ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়। আর ২, ৩, ৭, ৯, ১০, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে আপীল নাকচ করে ট্রাইব্যুনালের রায়ই বহাল রাখা হয়। এর মধ্যে ১২ নম্বর অভিযোগে হত্যার দায় থেকে এই জামায়াত নেতা অব্যাহতি পেলেও ১১ নম্বর অভিযোগে সর্বোচ্চ সাজাই বহাল রাখা হয়েছে।
×