ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কলেজ ছাত্রীকে জবাইয়ের পর আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২২ মে ২০১৬

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কলেজ ছাত্রীকে জবাইয়ের পর আত্মহত্যা

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ প্রেমে ব্যর্থ হয়ে লিজা আক্তার (১৮) নামের এক কলেজছাত্রীকে জবাই করে হত্যার পর একই ধারালো অস্ত্র নিজের বুকে হেনে ও গলা কেটে আত্মহত্যা করেছে এক সন্তানের জনক রবিউল ইসলাম নয়ন (৩০) নামের এক গাড়িচালক। প্রকাশ্য দিবালোকে নীলফামারী উপশহর জেলখানা সড়কের আনন্দ স্কুলের সামনে শনিবার সকাল নয়টার দিকে এ অঘটন ঘটে। রবিউল ইসলাম নয়ন উত্তরা ইপিজেডের পুতুল প্রস্তুতকারী সনিক কারখানার গাড়িচালক এবং সদর উপজেলার গোড়গ্রাম ইউনিয়নের নগরবন্দ কির্ত্তনীয়াপাড়া গ্রামের জয়েদ আলীর ছেলে। সে উত্তরা ইপিজেডের কোয়ার্টারে স্ত্রী ও মেয়ে নিয়ে বসবাস করত। অপরদিকে নিহত লিজা আক্তার নীলফামারী মশিউর রহমান ডিগ্রী কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং পৌর এলাকার পূর্ব কুখাপাড়া মহল্লার জহুরুল ইসলামের মেয়ে। লিজার বাবা নীলফামারী পল্লী বিদ্যুত সমিতি অফিসের সামনের মুদি দোকানদার। হত্যার শিকার লিজা আক্তারের মা রেহানা বেগম বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় সকাল সাতটার দিকে বাড়ি থেকে জেলা কারাগার সংলগ্ন পাঁচমাথা মোড়ে প্রাইভেট পড়তে যায় লিজা। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লোকমুখে জানতে পারি তার মেয়েকে জবাই করে হত্যা করেছে গাড়িচালক নয়ন। হত্যার শিকার কলেজছাত্রী লিজা আক্তারের বান্ধবী ইটাখোলা ইউনিয়নের কানিয়ালখাতা গ্রামের অনিল চন্দ্র রায়ের মেয়ে প্রত্যক্ষদর্শী সবিতা রানী রায় বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনের ন্যায় লিজাসহ তিন বান্ধবী শহরের পাঁচমাথা এলাকার আনোয়ার হোসেন ওরফে সংগ্রাম স্যারের বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে যাই। ঘটনার দিন প্রাইভেট শেষে সকাল ৯টার দিকে হেঁটে তিনজনই বাড়িতে ফিরছিলাম। এ সময় জেলখানা সড়কের আনন্দ স্কুলের সামনে আসলে হঠাৎ করে পেছন থেকে রিক্সায় এসে ধারালো ছোরা নিয়ে লিজাকে আক্রমণ করে লিজার গলা কেটে দেয় গাড়িচালক নয়ন। অপর প্রত্যক্ষদর্শী বান্ধবী একই গ্রামের কলেজছাত্রী পদ্মলোচন অধিকারীর মেয়ে শম্পা রানী অধিকারী বলেন, ‘গলাকাটা অবস্থায় লিজা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলেও ৫০ গজ দূরে গিয়ে সড়কের ধারে উল্টে ঘটনাস্থলে মারা যায়। এরপর পেছন ফিরে দেখি লিজাকে হত্যাকারী লোকটি ছোরা নিয়ে নিজের বুকে হানার পর নিজের গলা কাটছিল। আমাদের চিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে আসে। লিজার বান্ধবীদের অভিযোগ ‘গত ছয় মাস ধরে কলেজ ও প্রাইভেট পড়তে যাওয়া-আসার পথে লিজাকে প্রেম ও বিয়ের জন্য উত্ত্যক্ত করে আসছিল নয়ন। লিজার ভাই জাকির হোসেন বলেন, লিজা আক্তার মশিউর রহমান ডিগ্রী কলেজে একাদশ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। অন্যান্য দিনের মতো সকাল সাতটার দিকে লিজা আক্তার বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে পাঁচমাথায় প্রাইভেট পড়তে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে জেলখানা সড়কের আনন্দ স্কুলের সামনের রাস্তায় হত্যার শিকার হয় লিজা। তিনি আরও জানান, গাড়িচালক নয়ন প্রায় সময় কলেজ ও প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে লিজাকে উত্ত্যক্ত করত। এর মধ্যে এক রাতে লিজার বাবা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে লিজাকে অপহরণের জন্য দুটি মোটরসাইকেল ও দুটি অটো নিয়ে গাড়িচালক নয়ন লোকজন নিয়ে এসেছিল। কিন্তু সে যাত্রায় লিজা রক্ষা পায়। লিজার ভাই আরও জানায়, গাড়িচালক নয়ন বিবাহিত আমরা জানতাম। এরপর আমরা ঘটনাটি নয়নের স্ত্রীকে অবগত করলে নয়ন আর লিজাকে বিরক্ত করত না। কিন্তু নয়ন যে লিজাকে খুন করবে এটি কারও চিন্তায় আসেনি। গাড়িচালক নয়নের বড়ভাই সহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। লোকমুখে জানতে পারি ঘটনার বিষয়। নয়ন গ্রামের বাড়ি ছেড়ে উত্তরা ইপিজেডের একটি কোম্পানির গাড়ি চালাত এবং ইডিজেডের ভেতরের কোয়াটারে স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করত। নীলফামারী সদর থানার ওসি শাহজাহান পাশা বলেন, ঘটনাস্থল থেকে লাশ দুটিসহ ধারালো অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।
×