ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

হাশেম খান-মুনতাসীর মামুন চাঁদপুরের সন্তান

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৮ মে ২০১৬

হাশেম খান-মুনতাসীর মামুন চাঁদপুরের সন্তান

লেখক, ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন জীবনের ৬৪ বছর দাপটের সঙ্গে হেঁটে হেঁটে ৬৫-তে পা রাখলেন মঙ্গলবার ২৪ মে ২০১৬। তবে এই অভিধা তার জন্য যথেষ্ট নয়। তিনি মূলত সামাজিক রাষ্ট্রিক দায়-সচেতন একজন মানুষ। তাও পুরোটা বলা হলো না, আসলে তিনি একজন বিপ্লবী। সমাজের কূপম-ূকতা, উগ্রবাদ, অনাচার, অবিচারের বিরুদ্ধে বিপ্লব করে চলেছেন সেই তারুণ্যের সময় থেকে। ক্লান্তিহীন, বিরতিহীন। তাঁর এই শুভ পদার্পণ উপলক্ষে মঙ্গলবারই বাংলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয় আনন্দানুষ্ঠান। তাঁর প্রিয় ছাত্র, সহকর্মী শিক্ষক, লেখক, কবি, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং সর্বোপরি সাধারণ পাঠকের শ্রদ্ধার্ঘ্য ফুলে ফুলে ঢেকে গিয়েছিল পুরো মঞ্চ। মাঝখানে বসে পুরোহিত্য করছিলেন তাঁরই মতো আরেক বিপ্লবী দেশবরেণ্য শিল্পী হাশেম খান। তিনিও যেমন ক্যানভাসে রংতুলি দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের চরিত্রগুলো এঁকে চলেছেন এবং বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মানসিক গঠনে ছড়ায়-গল্পে আগ্রহী হয়ে গড়ে ওঠার কাজ করে চলেছেন এবং এখানেই থেমে থাকেননি, মামুনের মতোই রাজপথের মিছিলে মিছিলে প্রায় ৫ দশক পার করে এখনও সদর্পে হেঁটে চলেছেন। তাঁরও জন্মদিন পালিত হলো গত ১৬ এপ্রিল ২০১৬। তাঁরা দু’জনই পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার ত্রিবেণী তীর্থ চাঁদপুরের সন্তান। জন্মদিনে তাঁদের যখন শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছিল মনে হচ্ছিল তার ভাগ আমিও পাচ্ছিলাম। এক একটি ফুলের পাপড়ি যেন আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছিল। কারণ আমার জন্মও তাঁদের জেলা চাঁদপুরে। হাশেম খানের সঙ্গে আমার রক্তের সম্পর্ক (চাচা), আর মুনতাসীর মামুন বন্ধু। এ এক অভাবনীয় অনুভূতি। হাশেম খান ’৭৫-এ পড়লেন, মামুন ৬৫-তে। ব্যবধান এক দশক। হলে কি হবে, বিপ্লবে একে অপরের বন্ধু সাথী। এই দুই ক্ষণজন্মা পুরুষের বর্ণাঢ্য জীবনের কথা আমার মতো সাধারণের পক্ষে সঠিকভাবে তুলে ধরা সম্ভব নয়। দু’জনই চাঁদপুর থেকে ঢাকা, ঢাকা থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে আছেন। শিল্পী হাশেম খানের জন্ম চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার সেকদী গ্রামে বনেদী খাঁ বাড়িতে। বাবা ইউসুফ খাঁ সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন এবং বড় ভাই ডাঃ সোলায়মান খান একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবী। গ্রাম ও চাঁদপুর থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা এসে চারুকলায় ভর্তি হন ১৯৬১ সালে। এখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনের পর এখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন। গত ৫৫ বছর ধরে ছবি এঁকে ও লিখে চলেছেন নিরন্তর। এ পর্যন্ত ১৭টি গ্রন্থ রচনা এবং কয়েক হাজার ছবি এঁকেছেন। এখনও এঁকে চলেছেন। তাঁর বড় অবদান তিনি শিশু-কিশোরদের কাছে আকর্ষণীয় করে অক্ষর ও অঙ্কনের এমন সম্মিলনী করে চলেছেন, যা দেশী-বিদেশী শিশু-কিশোরদের সহজেই আকৃষ্ট করে। সেই ষাটের দশকেই তিনি স্কুলে বাচ্চাদের ছবি আঁকা শেখানোর যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন তা আজ শহর ও গ্রাম-গ্রামান্তরে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে সমান আগ্রহে চর্চা করা হচ্ছে। হাশেম খানের রং-তুলিতে যেমন বাংলার নদ-নদী, কৃষক, শ্রমিক, পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া পাড়ের জেলেদের জীবন উঠে এসেছে তেমনি বাঙালীর আন্দোলনের দিনরাত্রি এসেছে। তাঁর দুটি স্মরণীয় অবদান হলো ১. আমাদের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে যে কালজয়ী সংবিধান রচিত হয় তার মূল কপির হস্তাক্ষর শিল্পী হাশেম খানের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে এতই পছন্দ করতেন যে, তাঁকে দিয়েই সংবিধানের মূল কপিতে লেখার কাজটি করান। ২. প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুনের সঙ্গে একসঙ্গে ধানম-ি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাসভবনে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরসহ দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন। মুনতাসীর মামুনের পারিবারিক নাম মুনতাসীর উদ্দিন খান মামুন, যেমন তাঁর বাবা মেজবাহ উদ্দিন খান, চাচা বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর বা মহীউদ্দীন খান আলমগীর। অর্থাৎ বনেদী খান পরিবার। সবাই লেখক, বুদ্ধিজীবী। তাঁর দাদা আশেক আলী খান চাঁদপুর জেলার প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট এবং সারাজীবন শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন। নিজে হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই শিক্ষকের সন্তানরাও একইভাবে মেধাবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। সবাই লেখকও। মামুনের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে জানতে পারলাম এ পর্যন্ত তিনি ৩০৮টি গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং সবই ইতিহাসনির্ভর গবেষণালব্ধ। বানানো গল্প ও চরিত্র সাজিয়ে গ্রন্থ রচনা নয়। মুনতাসীর মামুন লিখেছেন শত শত বছরের ইতিহাস কথা, ইতিহাসের অজানা তথ্য তুলেছেন। এত লেখা কি অবাক করার মতো ব্যাপার নয়? অনুষ্ঠানের সঞ্চালক কবি তারিক সুজাত বা বন্ধু শাহরিয়ার কবির বা আলী ইমাম যখন বলছিলেন তাঁর লেখক জীবনের কথা, সেই ৮ম শ্রেণীতে পড়াকালে গোটা পাকিস্তানে ছোট গল্প লিখে ফার্স্ট হয়ে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ করা থেকে আজ পর্যন্ত। এ যেন এক রূপকথা। কিন্তু না, রূপকথা নয়, মামুনের গ্রন্থগুলো সাজানো হলে কডোভা নগরীর মতো বড় ধরনের একটি লাইব্রেরি হবে। এক বিরল ঘটনা, একটি জীবন্ত ইতিহাস। শুনেছি তাঁর রচনাবলীর প্রকাশ শুরু হয়েছে। মামুন এখানেই থেমে থাকেননি, ইতিহাসচর্চা দিনে দিনে উঠে যাচ্ছিল দেখে ইতিহাসের প্রফেসর মুনতাসীর মামুন আহত হলেন। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে প্রতিষ্ঠা করলেন ইতিহাস সম্মিলনী। আজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সকল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ইতিহাস পাঠ বাধ্যতামূলক। কেবল সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে নয়, বিজ্ঞান এবং বাণিজ্যিক অনুষদেও। তবে এখনও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়নি, এটা তাঁর আক্ষেপ। শিল্পী হাশেম খান ও প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন তাঁদের বিশাল কর্মযজ্ঞের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদকসহ অনেক আন্তর্জাতিক পদক লাভ করে আমাদের চাঁদপুরবাসী তথা বাংলাদেশকে সম্মানিত করেছেন। সেটা বড় কথা নয়, তাঁরা দু’জনই তাঁদের সামাজিক-রাষ্ট্রিক দায়বদ্ধতা থেকে অনেক বড় বড় পলিটিশিয়ানের মাথা হেঁট করা কাজ করেছেন। তার মধ্যে যেটি সবচেয়ে বড় তা হলো এই চাঁদপুরের (তাঁরা দু’জনই বাংলাদেশের সম্পদ, তবু চাঁদপুরবাসী বলে তুলে ধরার পেছনে আমার একটি অহংকারের ব্যাপার হলো আমিও চাঁদপুর জেলার সন্তান এবং তাঁদের সঙ্গে কিছু সামাজিক ও রাষ্ট্রিক দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেয়েছি। আমি দু’জনের কাছেই ঋণী)। দুই ক্ষণজন্মা সন্তান যেমন মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন তেমনি ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর রুখে দাঁড়িয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সশস্ত্র বিরোধিতাকারী গোলাম আযম-নিজামীসহ রাজাকার আলবদর ও জামায়াতকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর ছিলেন। পরে ‘ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন সমন্বয় কমিটির’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন। নেপথ্যে শেখ হাসিনা ও প্রকাশ্যে সর্বজন শ্রদ্ধেয় কবি বেগম সুফিয়া কামাল, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, কবি শামসুর রাহমান, প্রফেসর খান সারওয়ার মুরশীদ, ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, শাহরিয়ার কবির, সৈয়দ শামসুল হকসহ দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণআদালত বসিয়ে হাজার হাজার মানুষের সামনে গোলাম আযমসহ যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী বিচার করে আন্দোলন শুরু করেন। যার ফলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের সঙ্গে সঙ্গে একে একে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দ- কার্যকর করে চলেছেন। আগেই বলেছি শিল্পী হাশেম খানের সঙ্গে আমার রক্তের সম্পর্ক আর বন্ধু মামুনের সঙ্গে পরিচয় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। যদিও তাঁদের তুলনায় আমি একেবারেই নগণ্য, তবু সম্পর্কটা এখনও টিকে আছে। দু’জনের কাছে আমি ঋণী। প্রথমত হাশেম চাচার কাছে। চাঁদপুর কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য দরখাস্ত করি। কিন্তু দরখাস্ত আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সম্ভবত এ কারণে যে, আমি প্রথমে আলিয়া থেকে কামিল পাস করে (এটা আমাদের পারিবারিক পরম্পরা) চাঁদপুর কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হই। রেজাল্টও আহামরি কিছু ছিল না। সম্ভবত এ কারণেই ইংরেজী শিক্ষকগণ আমার ওপর ভরসা করতে পারেননি। ইংরেজীতেই পড়তে হবে তাই পশ্চিম পাকিস্তানের বিমানের টিকেট বুক করে হাশেম চাচাদের গোপীবাগের বাসায় যাই। হাশেম চাচা জিজ্ঞেস করেন সিলেক্ট হয়েছি কিনা? বললাম না, আমার ইন্টারভিউ নেয়নি। বললেন, আর কোন সাবজেক্ট? বললাম, বাংলায় পরীক্ষা দিয়েছি, সিলেক্টেড হয়েছি। বললেন, তুমি বাংলায় ভর্তি হও, ঠকবে না, ইংরেজীটা ঘরে বসে শিখে নিও। বাংলায় ভর্তি হলাম। প্রথম দিন পরিচিতি ক্লাস নিলেন প্রফেসর আবদুল হাই স্যার এবং ক্লাসে সহপাঠী হিসেবে দেখলাম শেখ হাসিনা (হাসিনা শেখ), কবি নির্মলেন্দু গুণ, আখতারুন্নবীসহ নাম শোনা অনেককে। মনের গ্লানিও দূর হয়ে গেল। আজ মনে হচ্ছে হাশেম চাচার কথাই সঠিক, ঠকিনি। তবে শহীদ ডাঃ সোলায়মান খান দুদু চাচার কথা খুব মনে পড়ছে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেই- প্রথমে সংগঠন ও পরে ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতি। একদিন গ্রামের চান্দ্রা বাজারে দুদু চাচা এলেন, বললেন আমি তো ডাক্তার, আমি তোমাদের কাজে লাগতে পারি। কিন্তু তার আগে কিছু সার্জারি এপারেটাস আর ওষুধ আনার জন্য ঢাকা যেতে হবে। বললাম, এর মধ্যে ঢাকা যাওয়া কি ঠিক হবে? বললেন, আমি ডাক্তার, কিছু বলবে না। এপারেটাস নিয়ে ফিরেও এসেছিলেন; কিন্তু রাজাকার-ডাকাত এক হয়ে তাঁকে হত্যা করল। সেদিন হাশেম খান, তাঁর মা ও এক ভাগ্নিও আহত হয়েছিলেন। প্রফেসর মুনতাসীর মামুনের কাছে আমার ঋণ হলো ২০০১-এ নেত্রীর নির্দেশে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ নির্বাচন করলেও ব্যর্থ হই। দৈনিক ইত্তেফাকে ভাল চাকরিটাও ছেড়ে দিয়েছি। দু’তিন বছর পর একদিন মামুনের সঙ্গে দেখা। বলল, কি করছো? বললাম, চাকরি তো অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। মাঝে-মধ্যে ভোরের কাগজে কলাম লিখি। বলল, জনকণ্ঠে লেখা শুরু কর, সেখানে স্বদেশ রায় আছে। প্রতি শনিবার লেখা শুরু করলাম এবং এরই মধ্যে আমারও কিছু পাঠক সৃষ্টি হয়েছে। সেই সুবাদে মাঝে-মধ্যে বাইরেও লিখছি। মামুনের সঙ্গে কিছু অমলিন স্মৃতি আছে। তার একটি হলো ভারতের উত্তর প্রদেশে উগ্র হিন্দুরা শত শত বছরের পুরনো বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে দিয়েছে। ঢাকায় একজন বিএনপিপন্থী সাংবাদিক নেতা ঠঙঅ (ভয়েস অব আমেরিকায়) খবর পাঠালেন ঢাকায় হিন্দুরা মিষ্টি বিতরণ করছে। ব্যস, উগ্র মুসলমানরা দাঙ্গা শুরু করল। তাদের আক্রমণের টার্গেট হিন্দুদের মন্দির। মনটা খারাপ হয়ে গেল। কেউ তখনও দাঙ্গা প্রতিরোধে নামছে না। রাত ৪টার দিকে মামুন টেলিফোন করল, কিছু একটা করা দরকার। বললাম, প্রায় ভোর হয়ে এলো, আমরা পথে নামতে পারি। মামুন এরই মধ্যে কবীর স্যারসহ অনেককে টেলিফোন করল। ঠিক সকাল ৯টার দিকে একে একে বেগম সুফিয়া কামাল, কবীর স্যার, ড. কামাল হোসেন, ফয়েজ আহমেদ প্রমুখ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে একত্রিত হয়ে পুরনো ঢাকায় মিছিল নিয়ে বের হলাম। সুফিয়া খালাম্মাকে রিকশায় তুলে দিয়ে আমরা ইসলামপুর সদরঘাট হয়ে প্রেসক্লাবের লাউঞ্জ+টিভি কক্ষে বসে যৌথ স্বাক্ষরে বিবৃতি দিলাম। বিবৃতিতে সবার পক্ষে স্বাক্ষর করেন ফয়েজ আহমেদ। পরদিন আমাদের একই জায়গায় মিলিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রেসক্লাবের তৎকালীন জামায়াত-বিএনপিপন্থী ম্যানেজিং কমিটি কক্ষটিই বন্ধ করে দিল। তবে আমাদের উদ্দেশ্য সফল হলো। আমাদের দেখাদেখি আওয়ামী লীগসহ স্বাধীনতার পক্ষের দল বিকেলে রাজপথে নামে, বিবৃতি দেয়, দাঙ্গা বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয় স্মৃতিÑ ১৯৯৬ সালের মার্চের তোপখানা রোডের জনতার মঞ্চের আন্দোলনে খালেদা জিয়ার সরকারের পতন ঘটে। এই জনতার মঞ্চের শুরুটা করি আমরা কয়েকজনÑ মামুন, শাহরিয়ার কবির, তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরী। প্রথমে আমরা ৭ মার্চ শহীদ মিনারে সমাবেশ ও শেষে মিছিল নিয়ে তোপখানা রোড ঘুরে আবার শহীদ মিনারে শেষ করি। প্রথম দিনের মিছিলের পর তৎকালীন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, খ.ম. জাহাঙ্গীর, মৃণাল কান্তি দাশ আমাদের বললেন সমাবেশ ও মিছিল চালিয়ে যেতে। সেই থেকে প্রতি অল্টার্নেটিভ ডে-তে আমরা সমাবেশ-মিছিল করি। ১৯ মার্চ তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ পুরো কর্মসূচীর দায়িত্ব নেন এবং প্রেসক্লাবের সামনে জনতার মঞ্চে দিনে দিনে লোক বাড়তে থাকে। ৩০ মার্চ খালেদা সরকারের পতন ঘটে। ঢাকা ॥ ২৭ মে ২০১৬ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব
×