ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাউফলে ৩০ ব্রিজ নির্মাণে ব্যপক অনিয়ম

প্রকাশিত: ০১:২৫, ২৫ জুন ২০১৬

বাউফলে ৩০ ব্রিজ নির্মাণে ব্যপক অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদিদাতা, বাউফল ॥ বাউফলে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ৩০টি ব্রিজ নির্মাণে ব্যপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এরমধ্যে ১৫টি ব্রিজের কোন টেন্ডারই হয়নি। জুন মাসকে কেন্দ্র করে তরিঘরি নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে রাতের আধাঁরে কোন প্রকার তদারকি ছাড়াই পানির মধ্যে চলছে কাজ। এ যেন ব্রিজর নামে হরিলুট। সরকারের উন্নয়ন কাজে সাধারন মানুষ খুশি হলেও দুর্নীতিপরায়ন সরকারি কর্মকর্তাদের দেখভাল না থাকায় সাধারন মানুষের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এসংক্রান্ত তথ্য জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাংবাদিকদের সাথে চরম অশালীন আচরণ করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপণা অধিদপ্তরের অর্থায়নে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় গ্রামীণ রাস্তায় সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে গত ৬ এপ্রিল ৩ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার ৩০০ টাকা ব্যয়ে ১৫টি সেতুর টেন্ডার অহবান করে ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেয়া হয়। একই দিন অনৈতিক সুবিধা নিয়ে গোপনে সমপরিমান অর্থের আরো ১৫টি ব্রিজের কাজ প্রভাবশালী কয়েকজনকে ভাগবাটোয়ারা করে দেয়া হয়। অর্থবছর শেষ হতে থাকায় ঠিকাদাররা নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী ও কোন প্রকার তদারকি ছাড়াই রাতের আধাঁরে পানির মধ্যেও ঢালাই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। শনিবার সকাল ১১টায় সরেজমিন মদনপুরা ইউনিয়নের রামলক্ষণ গ্রামে আবদুর রব গাজীর বাড়ির পাশের খালে নির্মাণাধিন একটি ব্রিজের কাজ দেখতে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিকরা কোমর সমান পানির মধ্যে নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে ঢালাই কাজ করছেন। সেখানে ঠিকাদার কিংবা পিআইও অফিসের কোন সুপারভাইজার নেই। শ্রমিকরা জানান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. শাহজাহান সিরাজ ব্রিজটির ঠিকাদার হিসেবে কাজ করাচ্ছেন। প্রায় ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধিন ওই ব্রিজটি টেন্ডারবিহীন ১৫টির মধ্যে একটি। কেশবপুর ইউনিয়নের তালতলি বাজারের পূর্বপাশে ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে টেন্ডারবিহীন অপর একটি ব্রিজ। ওই ইউনিয়নের অওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান ওরফে শামীম মুন্সি ব্রিজটির কাজ করাচ্ছেন। দ্বিপাশা বাজারের পশ্চিম পাশে খালেক হাওলাদার বাড়ির পাশে সাত রাস্তার মাথার খালে ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে টেন্ডারবিহীন অপর একটি ব্রিজ। ওই ব্রিজটির ঠিকাদারি করছেন উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল। একইভাবে ছাত্রলীগের (একাংশের) সভাপতি সাইদুর রহমান হাচান ও সাধারন সম্পাদক মহামুদ রাহাত জামসেদ যৌথ ভাবে ধুলিয়া ইউনিয়নে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ব্রিজের কাজ করছেন। ওই ব্রিজগুলোরও কাজের মান নিয়ে অনেক অভিযোগ উঠেছে। তবে ব্রিজের কাজ সঠিকভাবেই পেয়েছেন এবং সঠিকভাবেই নির্মাণ কাজ হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারগণ জানিয়েছেন। একটি সূত্র জানায়, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস অনৈতিক সুবিধা নিয়ে প্রভাবশালী এসব ব্যাক্তিদের টেন্ডার ছাড়াই কয়েক কোটি টাকার ১৫টি ব্রিজের কাজ ভাগবাটোয়ারা করে দিয়েছেন। ব্রিজ নির্মাণে ব্যপক অনিয়ম সম্পর্কে বাউফলের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. দেলোয়ার হোসেন তার মুঠোফোনে বলেন, ব্রিজ নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহবান থেকে শুরু করে কোন কাজেই অনিয়ম হয়নি। রাতের আধাঁরে নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে পানির মধ্যে ঢালাই দেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্ন করা হলে পিআইও বলেন, সারা দেশেই এমনটা হচ্ছে। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, একাজ বুঝতে হলে লেখাপড়া করে আসতে হয়। সাংবাদিকদের কোন কাজ নেই, শুধু ব্রিজ ব্রিজ করছেন। এমন মন্তব্যে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে পিআইও’র চরম বাকবিতন্ডা হয়। ব্রিজ নির্মাণ সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারন মানুষ জানান, সরকার দেশের উন্নয়ন করতে দৃঢ় পদক্ষেপ নিলেও কিছু কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে সরকারের সকল সুনাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
×