ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাঞ্জাবি না হলেই নয়

ঈদ ফ্যাশনের প্রধান অনুষঙ্গ, জমজমাট কেনাকাটা

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৬ জুন ২০১৬

ঈদ ফ্যাশনের প্রধান অনুষঙ্গ, জমজমাট কেনাকাটা

মোরসালিন মিজান ॥ মহা ধুমধামের ঈদ। ব্যাপক কেনাকাটা চলছে। তবে ছেলেদের বেলায় আর সব কেনাকাটা গৌণ। মূল আকর্ষণ পাঞ্জাবিটা। ঈদের দিন নতুন পাঞ্জাবি গায়ে না দিলেই নয়। দীর্ঘকাল ধরেই পুরুষের ঈদ ফ্যাশনের প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে আছে পাঞ্জাবি। আর সব কেনাকাটা ঐচ্ছিক। কিনলে ভাল। না কিনলেও সমস্যা নেই। পাঞ্জাবি চাই। চাই-ই। ফলে সব মার্কেটে-শপিংমলে এখন পাঞ্জাবি কেনার ধুম। নিজের জন্য, আত্মীয়পরিজনকে উপহার দেয়ার জন্য এক্সক্লুসিভ পাঞ্জাবির খোঁজ করছেন সবাই। এক ঈদ শেষ হতে না হতেই অন্য ঈদের পাঞ্জাবির জন্য কাজ শুরু হয়ে যায়। নতুন ডিজাইন নিয়ে ভাবতে শুরু করে ফ্যাশন হাউসগুলো। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। গত কয়েকদিন ঢাকার বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, পাঞ্জাবির বিপুল সংগ্রহ। অন্য সময় পাঞ্জাবিগুলো সাধারণ দেখতে হয়। ঈদে তার বিপরীত চিত্র। আনন্দের উপলক্ষ সামনে রেখে পোশাকটি আকর্ষণীয় করার সব চেষ্টা করা হয়েছে। কাপড়ের রং, কাটিং, সেলাই দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। যার যেমন পছন্দ, খুঁজলেই পেয়ে যাবেন। পেয়ে যে যাবেন, এ ব্যাপারে সত্যি কোন সন্দেহ নেই। এবার বর্ষাকালে ঈদ হলেও অসহনীয় গরম। এ কারণে সুতি কাপড়ের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আছে সামু সিল্ক, ইন্ডিয়ান সিল্ক, ইন্ডিয়ান চিকেন, তসর, খাদি, মটকা, মহীশূর, এ্যান্ডি কটন, জাপানী ইউনিটিকা, ধুতিয়ান, জয়শ্রী সিল্কসহ নানা জাতের কাপড়। লিলেন ও জর্জেট কাপড় বিশেষ আরামদায়ক। বিভিন্ন মার্কেটে খুব দেখা যাচ্ছে। দেশী ফ্যাশন হাউসের পাঞ্জাবিগুলোতে ভারি কাজ করা হয়নি। প্রিন্টের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। তাতেই দারুণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে! ঈদ উৎসবে রঙ নির্বাচন জরুরী বিষয়। আবহাওয়া বিবেচনায় ফ্যাশন ডিজাইনাররা হাল্কা রং বেছে নিয়েছেন। সাদা, গোলাপি, নীল ইত্যাদি রঙের পাঞ্জাবিই বেশি। মাপের দিক থেকেও ভিন্নতা আছে। ঈদে বাজারে এসেছে লং, সেমি লং, এক্সট্রা লং পাঞ্জাবি। তরুণদের প্রথম পছন্দ আবার শর্ট পাঞ্জাবি। ঈদে দেশী পাঞ্জাবির বিশেষ কদর। প্রথমেই আসে আড়ংয়ের কথা। আড়ংয়ের পাঞ্জাবি ছাড়া ঈদ করার কথা অনেকে ভাবতেও পারেন না। কারণও আছে। আড়ংয়ের পাঞ্জাবি মান, ডিজাইন, রং সব মিলিয়ে স্পষ্ট এগিয়ে। শোরুমগুলোতে তাই উপচেপড়া ভিড়। গত কয়েকদিন গুলশান, সায়েন্সল্যাব ও আসাদগেট শোরুম ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ফ্লোরে উপচেপড়া ভিড়। সায়েন্সল্যাব আউটলেটের ব্যবস্থাপক নয়ন বড়ুয়া জানান, আড়ংয়ের পাঞ্জাবির নিয়মিত সব ডিজাইনই এখানে আছে। দাম সাতশ’ থেকে শুরু করে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত। ১৮শ’ থেকে ২৫শ’ টাকার মধ্যে পাঞ্জাবিগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে জানান তিনি। অঞ্জনস, কেক্র্যাফট, সাদা কালো, বাংলার মেলা, দেশাল, রঙ, বালুচর ইত্যাদি নামের ফ্যাশন হাউসও খুব জনপ্রিয়। এসব ফ্যাশন হাউসের পাঞ্জাবিতে দারুণ সব নকশা করা। কোন কোন ক্ষেত্রে সুন্দর হাতের কাজ। শহরের প্রায় সর্বত্রই আছে দেশী ফ্যাশনের পাঞ্জাবি। অঞ্জনসের কর্ণধার শাহীন বলেন, এক ঈদ শেষ হতে না হতেই আমরা আরেক ঈদের কথা ভাবতে শুরু করি। পাঞ্জাবির ক্ষেত্রে খুব কিছু পরিবর্তনের সুযোগ থাকে না। এর পরও আমরা অর্ধশতাধিক ডিজাইন উপহার দিই। এবারও তাই করা হয়েছে। কাপড় ও ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রায় একই তথ্য দিয়ে কেক্রাফটের বসুন্ধরা শাখার ম্যানেজার আমানুল্লাহ খান বাবুল বলেন, পাঞ্জাবি আমাদের অন্যতম প্রধান প্রোডাক্ট। কাজটি অনেক যতেœর সঙ্গে করা হয়। দেশী ঐতিহ্য ও আধুনিক রুচির একটি সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করি আমরা। এ কারণেই চাহিদা এত বেশি বলে জানান তিনি। আজিজ সুপার মার্কেটও পাঞ্জাবির বড় সংগ্রহ। এখানে পাঞ্জাবির বেলায় কটন, লিলেন ও জর্জেট কাপড়ের ব্যবহার চোখে পড়ছে। প্রাধান্য পেয়েছে প্রিন্টের কাজ। গরমের কথা মাথায় রেখেই হয়ত ডিজাইনাররা হাল্কা রং বেছে নিয়েছেন। সাদা নীল আকাশি পেস্ট হাল্কা গোলাপি রঙের পাঞ্জাবি দেখা যায় বিভিন্ন শোরুমে। পাঞ্জাবির জন্য বেশ সুখ্যাতি বালুচরের। এই একটি ফ্যাশন হাউস সারা বছর আর কোন পোশাক নিয়ে এমনকি ভাবেও না। কেবল পাঞ্জাবি নিয়ে কাজ করে। ঈদ উপলক্ষে বালুচর এনেছে এক্সক্লুসিভ ৫০টি ডিজাইন। এখানে তারুণ্যের পছন্দ সিøমফিট পাঞ্জাবি। সেমি লং পাঞ্জাবিতে খুব বেশি কাজ নেই। কটন লিলেন জর্জেট কাপড়ে আকর্ষণীয় রং কথা বলছে। কলার ও প্লেটে সামান্য পরিবর্তন আনার চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়। সামান্য পরিবর্তন। তবে চোখ আটকে যায়! ফ্যাশন হাউসের কর্ণধার শাহীন চৌধুরী শোরুমেই ছিলেন। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আমাদের পাঞ্জাবি নিয়েই কাজ। এই কাজ আরও কত ভাল করা যায়, আমরা সারা বছর চিন্তা করি। ঈদে সেসব চিন্তার প্রকাশ ঘটানোর একটি চেষ্টা করেছি। এই যেমন এবারই প্রথম বালুচর জামদানি মোটিফ নিয়ে কাজ করেছে। আরও বেশ কিছু ডিজাইন আজকালের মধ্যে শোরুমে আসবে বলে জানান তিনি। ঈদে ভারত থেকেও এসেছে প্রচুর পাঞ্জাবি। এসবে জড়ি পুঁথি পাথর বসানো। সহজেই নজর কাড়ে। দাম অনেক বেশি। তবে কেনাকাটা থেমে নেই। বসুন্ধরা সিটির ‘লুবনান’র একটি ছোট্ট শোরুমে গিয়ে দেখা গেল, মানুষ আর মানুষ। দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া মুশকিল। এ অবস্থায়ই চলছিল পাঞ্জাবি পছন্দের কাজ। এখানে শীত-গরম মুখ্য নয়। ভারি কাজের গর্জিয়াস পাঞ্জাবি দিয়ে সাজানো। অনেক পাঞ্জাবি ঠিক পাঞ্জাবি নয়, শেরওয়ানির মতো দেখতে। সীমিত ডিজাইন থেকে যে যার মতো করে কিনছিলেন। পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে পাকিস্তানী কাবুলি সেট। পাঞ্জাবিতে আরও আছে ওয়েস্টার্ন ডিজাইন। এগুলো জিন্সের সঙ্গে পরা যায়। এক্সটেসি, ইনফিনিটি, ক্যাটস আই, মেনজক্লাব, স্মার্টেক্স, দর্জিবাড়ি ইত্যাদি শোরুমে তাই পা ফেলার জায়গা খুঁজে নিতে হচ্ছে। নিউ মার্কেট, মালিবাগ, মৌচাক, গুলিস্তান মিরপুরের বিভিন্ন দোকানেও এখন পাঞ্জাবির বিশেষ প্রদর্শনী। শনিবার আড়ংয়ের আসাদ গেট আউটলেটে পাঞ্জাবি দেখছিলেন আবিদ। বয়সে তরুণ। বললেন, পাঞ্জাবি আমার অত পরা হয় না। তবে ঈদে তো পাঞ্জাবি ছাড়া কিছু কল্পনাও করতে পারি না। এ সময় পাঞ্জাবির জন্য একটা আলাদা প্রেম জন্মে যায়। নিজের পছন্দের পাঞ্জবি খুঁজতে গোটা শহর চষে বেড়াতে রাজি বলে জানান তিনি। আজিজ মার্কেটে পাঞ্জাবি কিনতে আসা মাসুদ বললেন, সারা বছর তো শার্ট-প্যান্ট পরি। জিন্স টি-শার্ট না হলে চলে না। কিন্তু ঈদে পাঞ্জাবির কোন বিকল্প নেই। পাঞ্জাবি-পাজামাই একমাত্র ফ্যাশন। এ কারণে পাঞ্জাবি কিনতে সবচেয়ে বেশি সময় দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
×