ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তদন্ত কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে

আলাউদ্দিন টাওয়ারের লিফট ছেঁড়ার কারণ এখনও অজানা

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৬ জুন ২০১৬

আলাউদ্দিন টাওয়ারের লিফট ছেঁড়ার কারণ এখনও অজানা

আজাদ সুলায়মান ॥ উত্তরায় আলাউদ্দিন টাওয়ারের লিফট ছিঁড়ে আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে পুলিশ ও দমকল বাহিনী এখনও নিশ্চিত হতে পারছে না। লিফট ছেঁড়ার কারণ আগুন নাকি গ্যাস বিস্ফোরণ সেটাই খতিয়ে দেখছেন তিতাস গ্যাস, সিটি কর্পোরেশন, বুয়েট ও রাজউক বিশেষজ্ঞরা। শনিবার তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। এখানকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এখন ওই ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে আতঙ্কে রয়েছেন। এদিকে এ ঘটনায় আহত আরও একজনের মৃত্যু ঘটেছে। অগ্নিদগ্ধ মাহমুদুল হাসান (৩৬ ) শনিবার ভোর ৪টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এতে নিহতের সংখ্যা ৭ এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ৬ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেনÑ দক্ষিণখানের বাসিন্দা শেরপুর জেলার মোঃ আনিসুর রহমানের স্ত্রী সালাম আক্তার (৪০), দক্ষিণখানের বাসিন্দা ফরিদপুরের বাচ্চু মিয়ার ছেলে রেজাউল করিম রানা (৩২), উত্তরার বাসিন্দা মুন্সীগঞ্জের দ্বীন মোহাম্মদের মেয়ে লতা আক্তার (৩০), তুরাগ এলাকার বাসিন্দা মাদারীপুরের ওয়াজ মিয়ার ছেলে জসিম উদ্দিন রফিক (৩৫) এবং আলাউদ্দিন টাওয়ারের সিকিউরিটি ইনচার্জ পাবনার খোরশেদ কাজীর ছেলে কাজী মিজানুর রহমান (৫২)। এ ঘটনায় মাহমুদুল হাসানের মেয়ে মেহনাজ হাসান মাইশা (১০) ও ছেলে মোমতাকিন হাসানও (৮ মাস) দগ্ধ হন। বর্তমানে তারা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। এদের অবস্থা আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল বলেন, মাইশার ৫০ শতাংশ ও ছেলে মোমতাকিনের ২৩ শতাংশ পুড়েছে। মাহমুদুল হাসান আলাউদ্দিন মার্কেটের বেজমেন্টে অবস্থিত ট্রপিক্যাল হোমস লিমিটেডের ডিজিএম। তার অফিসের কলিগদের পরিবার নিয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। মাহমুদুল ছেলে এবং মেয়েকে নিয়ে আগেই অফিসে চলে আসেন। স্ত্রী মেহবুবা হাসান উত্তরা ১৩নং সেক্টরের ৩নং রোডের বাসা থেকে আসছিলেন। এর মধ্যেই এ ঘটনা ঘটে। মাইশা মাইলস্টোন স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী। ময়না তদন্ত ॥ এ ঘটনায় নিহত ৬ জনের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ সোহেল মোহাম্মদ নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। তিনি জানান, ৬ জনের মধ্যে দুজন অগ্নিদগ্ধ ও চারজন আঘাত পেয়ে মারা গেছেন। ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত হোসেন জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় ভবনটির লিফট ছিঁড়ে নিচে পড়ে গেলে বেজমেন্টের দেয়াল ভেঙে নিচে চাপা পড়ে তাদের মৃত্যু হয়। লিফট ছিঁড়ে সেখানে আগুনের সূত্রপাত হয়। এর ফলে আহত হন আরও অর্ধশতাধিক। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ সম্পর্কে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমদ খান বলেন, আমরা পুরো মার্কেট ঘুরে দেখতে পারিনি। যতটা দেখেছি তাতে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছে। বেজমেন্টে তিনটি ফ্লোর রয়েছে। তা ফাঁকা থাকার কথা থাকলেও সেখানে মসজিদ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অফিস করা হয়েছে। ভবন নির্মাণের নীতিমালার বিষয়টি বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন। ভবনটি ব্যবহার্য কিনা তা আমাদের বলার এখতিয়ার নেই। এজন্য রাজউক ও বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা আসবেন। তাদের পরিদর্শনের পর দুর্ঘটনার কারণ ও ভবন ঝুঁকিপূর্ণ নাকি ঝুঁকিমুক্ত তা জানা যাবে। ডিসি বিধান ত্রিপুরা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এ নিয়ে মার্কেট কমিটির লোকজনদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। আপাতত মার্কেট বন্ধ থাকছে। এদিকে শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় সেখানে শত শত লোকের ভিড়। তারা ভবনের সামনের গেটে দাঁড়িয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় পুড়ে যাওয়ার এ মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন। এ সময় আলিফ নামের একজন ব্যবসায়ী জানান, সন্ধ্যা ৬টা দশ মিনিটের সময় হঠাৎ বিকট শব্দে কেপে ওঠে আলাউদ্দিন টাওয়ার। তারপর লোকজন দৌড়াদৌড়ি করে বের হয়ে আসতে থাকে। বাইরে এসে দেখেন সিঁড়ির কাছে লিফট ভেঙ্গে চুরমার। পাশের দোকানগুলোর থাই ও কাঁচের দরজা জানালাগুলো ভেঙ্গে পড়ছে। রাস্তার ভরে যায় ভাঙ্গা কাঁচের গুঁড়া। ততক্ষণে ধুয়া আচ্ছন্ন হয়ে যায়। তখন ভবনটির নিচতলায় ট্রপিক্যাল হোমস লিমিটেডের একটি ইফতার মাহফিল চলছিল। ওই অনুষ্ঠানে থাকা ট্রপিক্যাল হোমস লিমিটেডের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসান ও তার দুই ছেলে-মেয়ে দগ্ধ হয়। ছোটাছুটি করে বের হতে গিয়ে আহত হন রাজলক্ষ্মী মার্কেটের বিসমিল্লাহ মিষ্টির কর্মচারী মামুনও (২৮)। এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের জানান, লিফটের রশি ছিঁড়ে ভবনের বেজমেন্টে একটি নামাজের স্থানে পড়ে। এতে নামাজের ঘরের দেয়াল ভেঙ্গে যায়, তাতেই এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। তবে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে হঠাৎ করে ওই ভবনের সামনের ক্যাপসুল লিফটটির তার ছিঁড়ে পড়ে যায়। এ সময় বিকট শব্দে লিফটের গ্লাস ফেটে সড়কে চলে আসে। ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাত ৭টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনে। অগ্নিকা-ের সময় ১৬তলা ভবনটির নিচতলায় ট্রপিক্যাল হোমস লিমিটেডের একটি ইফতার মাহফিল চলছিল। এতে ওই কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের পরিবারের সদস্য ও শিশুদের নিয়ে অংশ নিতে আসছিলেন। সেখানের উপস্থিত ছিলেন ট্রপিক্যাল হোমস লিমিটেডের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসান। আগুনে দগ্ধ হয়েছেন তিনি এবং তার দুই সন্তান। এ ঘটনায় দগ্ধ হয় তার ১০ বছরের মেয়ে মেহনাজ হাসান মায়েশা ও আট মাসের ছেলে মুনতাকিন হাসান। মামুন (২৫) নামে আরও এক তরুণকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান মারা গেলেও বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। ভবনের নিরাপত্তাকর্মী জালাল জানান, তিনি ভবনের সামনে গাড়ি পার্কিংয়ের নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। হঠাৎ ভবনের লিফট ছিঁড়েই নিচে পড়ে যায়। লিফটের নিরাপত্তা বেষ্টনীর গ্লাস ভেঙ্গে সব রাস্তার দিকে আসছিল। আমার মাথায় ও হাতে লেগে কেটে গেছে। এরপর ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় আগুন আর ধোঁয়া দেখতে পাই। এ সময় অনেকে দৌড়ে বের হয়ে আসেন। আবার অনেকেই বের হতে পারেননি। শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে শত শত ব্যবসায়ীকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এ সময় তাদের পুলিশ তালিকা ধরে মার্কেটে প্রবেশ করাতে দেখা যায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনার পর পরই এ সব ব্যবসায়ীরা মার্কেটের প্রথম থেকে ছয়তলা পর্যন্ত নিজ নিজ দোকান ছেড়ে বাইরে বের হয়ে আসেন। শনিবার দুপুরে তাদের নাম ধরে ধরে ভেতরে ঢুকানো হয়। এ সময় তারা চিৎকার করে পুলিশের উদ্দেশে বলতে থাকেনÑ মার্কেট কমিটির লোকজনের সীমাহীন দুর্নীতি ও অরাজকতার দরুন এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কমিটির লোকজন ভাড়া দেযা ব্যবসায়ীদের কাছে নিয়মিত লিফট, জেনারেটর, এক্সেলেটর, সিঁড়ি ও আগুন নির্বাপক যন্ত্রের সার্ভিসের নামে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা নেন। কিন্তু তারা সে কাজ করেননি। সব টাকা আত্মসাত করেন। প্রতিমাসে লিফট সার্ভিস করার শর্ত থাকলেও সেটা করা হয়নি। ফলে দুটো লিফটই অকেজো অবস্থায় ব্যবহার করা হচ্ছিল। সুজন মাহমুদ বলেন, মার্কেটের দোকান মালিকদের সংগঠন আছে। কিন্তু প্রকৃত ব্যবসায়ী যারা দোকান ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছেন, তাদের সবসময়ই মালিক সমিতি ঠকিয়ে আসছে। জোরে কথা বললেই তারা দোকান থেকে বের করে দেয়। ফলে নীরবে এ ধরনের অনিয়ম অরাজকতা মেনে নিতে হচ্ছে। দশ হাজার টাকার দোকান ভাড়ার সঙ্গে সার্ভিস চার্জ দিতে হয় পাঁচ হাজার টাকা। প্রতি স্কয়ার ফুটের সার্ভিস চার্জ হচ্ছে ৪৫ টাকা। এভাবে ২৫০ দোকানের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ আদায় করা হতো। দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ দুজনেই এখন হজে রয়েছেন। তাদের দাপটে কখনোই মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা যেত না কেন লিফট মেরামত করা হয়নি। কেন মার্কেটের কমন স্পেশে জিনিসপত্র দিয়ে ভরে রাখা হয়। এ সব জানতে চাইলেই বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হতো। ভয়ে সব নীরবে সইতে হতো। এ সম্পর্কে গফুর নামের একজন দোকানি বলেন, ষোল তলার ওই ভবনের ৬ তলা পর্যন্ত মার্কেট। তার ওপরের সব তলায় আবাসিক ফ্ল্যাট বাড়ি। ওদের জন্য রয়েছে আলাদা লিফট। আর ব্যবসায়ীদের জন্য মার্কেটের প্রবেশ পথের দুধারে দুটো লিফট ব্যবহার করা হতো। নিচের তিনটা বেজমেন্টের একটাতে গাড়ির পার্ক রয়েছে যা ব্যবহার করতে পারে শুধু আবাসিক লোকজন। কিন্তু মার্কেটের দোকানি বা ক্রেতা দর্শকদের জন্য গাড়ির পার্ক নেই। অথচ রাজউক থেকে ওই ভবনের নক্সা অনুমোদনের সময় তিনটা বেজমেন্টেই পার্কিং হিসেবে ব্যবহার করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এ শত লঙ্ঘন করে পার্র্কিং এরিয়ায় তৈরি করা হয় মসজিদ, হোটেল ও সমিতির অফিস। ফলে মার্কেটের সামনের রাস্তায় ক্রেতা সাধারণের গাড়ি পার্কিং করা হয। এহেন অনিয়ম ও জালিয়াতি রাজউক কখনও দেখেনি। অথচ আগুনের পর এখন রাজউক বলছে অনেক শর্ত লঙ্ঘন করে এই ভবন চলছে। দমকল বাহিনী সূত্র জানায়, মূলত সব হতাহতের ঘটনা ঘটে নিচের বেজমেন্টেই। বিকট শব্দে শর্টসার্কিট কিংবা গ্যাস বিস্ফোরণের দায়ে লিফট ছিঁড়ে পড়েছে বেজমেন্টের মসজিদের ওপর। যেখানে চলছিল ইফতারের প্রস্তুতি। সেখানেই প্রাণহানি ঘটেছে। ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী মিমি নামের একজন দোকান মালিক জনকণ্ঠকে তার বেঁচে যাবার কাহিনী সম্পর্কে বলেন, ওই অভিশপ্ত লিফটে আমি প্রায় ওঠতে গিয়েছিলাম। এমন সময় আমার কর্মচারী জরুরী কথা আছে বলে আমাকে থামিয়ে দেন। আমি আর তাতে ওঠিনি। একটু পরই শুনি বিকট শব্দ। তারপর দৌড়ে নিচে গিয়ে দেখি ধুযা আর ধুয়া। দোকানগুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। নিচতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত শুধুই ধ্বংসযজ্ঞ। এ ঘটনাকে রহস্যময় বলে উল্লেখ করে কজন ব্যবসায়ী বলেন, এটা আগুনের ঘটনা নয়। এটা বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা। কদিন আগে বনানীতে যে ধরনের ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণের দরুন গোটা ভবন ধ্বংস হয়েছিল এটাও ঠিক একই ধরনের। আলাউদ্দিন টাওয়ারের বেজমেন্টে গত ক’দিন ধরে গ্যাস লিক হবার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। ওই গ্যাস লিকেজ থেকেই গ্যাস বিস্ফোরণ হবার দরুন গোটা ভবন কেঁপে ওঠে এবং লিফটের তলা ভেঙ্গে নিচে পড়ে যায় লোকজন। এটাই হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির কারণ। তারা জানান, ২০১২ সালেও একই ভবনের নিচতলায় আগুনের ঘটনা ঘটে। তারপরও কেউ সতর্ক হয়নি। ভবন মালিক আলাউদ্দিন নিজে মাঝে মাঝে এখানে এলেও তিনি কখনোই এ সব বিষয়ে নজর দিতেন না। ঘটনাস্থলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, এটা শর্টসার্কিটের সাধারণ আগুন নয়। আগুনে তো সাধারণ সব পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। এখানে যেটা ঘটেছে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ। যে কারণে লিফট ছিঁড়ে মসজিদের ওপর পড়েছে, পাশের এস্কেলেটর ভেঙ্গে ধুমড়ে-চুমড়ে গেছে, পাশের লিফটও ভেঙ্গে গেছে, কাঁচের সব জানালা-দরজা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে রাস্তায় পড়ে শিলাবৃষ্টির মতো আকার ধারণ করেছে। সাধারণ গ্যাস সিলিন্ডার, জেনারেটর বিস্ফোরণের দরুন এমনটি হয়ে থাকে। এ দুটোই রয়েছে বেজমেন্টে। তদন্ত কমিটি গঠন ॥ শুক্রবার সন্ধ্যার ওই ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক জহুরুল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস পরিচালক মেজর শাকিল আহমদ জানান, এ তদন্তের আগে কিছুই বলা সমীচীন হবে না। শনিবার দুপুরে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার আলী আহমেদ খান জনকণ্ঠকে বলেন, সকালে সেখানে তাদের সব কার্যক্রম শেষ হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে বিশেষজ্ঞের মতামত প্রয়োজন। লিফট দুর্ঘটনার কারণ কী তা সাত দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মার্কেটটির লিফট ছিঁড়ে পড়ার কারণ কী, তা জানতে বুয়েট ও রাজউকের বিশেষজ্ঞ টিম কাজ শুরু করেছে। রাজউক ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছে। এরই মধ্যে মার্কেট পরিদর্শন করেছে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল। আমরা প্রাথমিকভাবে বেশকিছু কারণ ধরে এগুচ্ছি। এক্ষেত্রে বেজমেন্টে বিশাল আগুন কীভাবে ধরল এবং বেজমেন্টে কিছু অনাকাক্সিক্ষত স্থাপনাও দেখতে পেয়েছি। তাই এসব ধরেই আমরা এগুচ্ছি। বুয়েট ও রাজউক দেখছে বিল্ডিংয়ের নক্সায় বা নির্মাণে ত্রুটি রয়েছে কিনা। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসও তদন্ত করছে। এরপরও পুলিশ, ডিএনসিসি ও ফায়ার সার্ভিস একটি সমন্বিত তদন্ত করবে। এরপরই জানা যাবে প্রকৃত কারণ কী।
×