ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

‘দেশের সাহিত্য বিশ্ব দরবারে পৌঁছাতে অনুবাদ কেন্দ্র চাই’

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৬ জুন ২০১৬

‘দেশের সাহিত্য বিশ্ব দরবারে পৌঁছাতে অনুবাদ কেন্দ্র চাই’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানসমৃদ্ধ অনুবাদের মাধ্যমে দেশের সাহিত্যকে পৌঁছে দিতে হবে বিশ্ব দরবারে। প্রয়োজনে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় অনুবাদ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মনোযোগী হতে হবে ভাল অনুবাদক সৃষ্টিতে। এমন আহ্বান জানানো হলো মুক্তবিশ্বে প্রকাশনা শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এ সেমিনারের শেষ দিন ছিল শনিবার। সমাপনী দিনে ঢাকা ঘোষণায় লেখক ও প্রকাশকদের জন্য মুক্ত প্রকাশনার ক্ষেত্র প্রস্তুতে সবাইকে একজোট হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত প্রকাশক ও লেখকরা বলেন, মুক্তচিন্তা ও স্বাধীন প্রকাশনা সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মুক্তবুদ্ধির চর্চা দিয়ে উগ্রবাদকে প্রতিহত করতে হবে। হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারের সমাপনী দিনের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় সকালে। দেশী প্রকাশনার আন্তর্জাতিকীকরণ শীর্ষক এ অধিবেশনে দেশ-বিদেশের প্রথিতযশা লেখক, সাহিত্যিক ও প্রকাশকরা বলেছেন, অনুবাদ সাহিত্যের বিপুল চাহিদা থাকলেও গুণগতমানের অনুবাদ হচ্ছে না। অনুবাদ সাহিত্যে মূল সাহিত্যের ভাবার্থ ‘বদলে যাচ্ছে’ বলেও অভিযোগ করেন তারা। কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার সভাপতিত্বে সকালে আলোচনায় অংশ নেনÑ কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, আনিসুল হক, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল, নেপালের জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশনা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক লিখাত প্রসাদ পান্ডে, ভারতের কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ইমানুল হক। সভাপতির বক্তব্যে কবি নুরুল হুদা বলেন, দেশীয় প্রকাশনাকে আন্তর্জাতিক বাজারে ছড়িয়ে দিতে গিয়ে প্রকাশকরা নানা বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। আন্তর্জাতিক পরিম-লে ভিন্ন দেশী সাহিত্যের আবেদন যখন বাড়ছে, তখন নীতিনির্ধারকরা নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে বিস্তার বাধাগ্রস্ত করছেন। কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন তার ‘হাঙ্গর নদীর গ্রেনেড’ উপন্যাসটির ‘বেহাল অনুবাদের’ কথা তুলে ধরে বলেন, ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার এক সেমিনারে উপন্যাসটির সারাংশ শুনে মার্কিন প্রকাশক বইটির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু বাংলা উপন্যাসটির ইংরেজী অনুবাদের সংস্করণটি দেখে তিনি হতাশ হয়ে জানান যে, এটি আসলে মার্কিন পাঠকদের উপযোগী নয়। তিনি আরও বলেন, দেশী সাহিত্যকে বিশ্ববাজারে পৌঁছে দিতে সরকারী পর্যায়ে একটি অনুবাদ সেল গঠন করতে হবে। এই সেলের বিশেষজ্ঞ প্যানেলটি ঠিক করে দেবে, আমাদের অনুবাদ সাহিত্যের মান আসলে কেমন হওয়া উচিত এবং ঠিক কোন সাহিত্যগুলো বিশ্ববাজারে পৌঁছে দেয়া হবে। ভারতীয় অধ্যাপক ইমানুল হক বলেন, ভারতে বাংলা ভাষীরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়েছে। ইংরেজী বলতে পারলে জাতে ওঠে। চিবিয়ে ইংরেজী বলতে পারলে জাত আরও উন্নত হয়। বাংলাদেশে পারিবারিক সম্পর্ক বেঁচে রয়েছে। এখানকার সাহিত্যে যৌনতা এখনও প্রধান বিষয় হয়নি। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকেই বাংলা ভাষাকে বাঁচাতে হবে। এদিকে সেমিনারের সমাপনী দিনের শেষ অধিবেশনের আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষে মানুষে সম্পর্ক সৃষ্টিতে প্রকাশকদের আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় মাধ্যম হতে পারে বই। কিন্তু রাজনীতি, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আঞ্চলিক যোগাযোগ সৃষ্টি হলেও প্রকাশনার ক্ষেত্রে কোন আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করা যায়নি। তাই প্রত্যেক ভাষার ভাল বইগুলোকে অনুবাদের মাধ্যমে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। সেমিনারের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, তরুণ লেখক-প্রকাশকদের জন্য এই প্ল্যাটফর্ম কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। গ্লোবাল নেটওয়ার্কের যুগে লেখক-প্রকাশকদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি আয়োজকদের দক্ষিণ এশিয়ান ডাটাবেজ তৈরির আহ্বান জানান। এতে সবার একযোগে কাজ করার নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। সমাপনী আয়োজনে সম্মানিত অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব আক্তারী মমতাজ, এমিরেটাস পাবলিশার্সের মহিউদ্দিন আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি। ঢাকা ঘোষণা পাঠ করেন প্রাবন্ধিক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মোঃ আখতারুজ্জামান। সঞ্চালনায় ছিলেন সমিতির সহসভাপতি মাজহারুল ইসলাম। সেমিনারের শেষ দিনে তিনটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেশনগুলো হলো ‘দেশীয় প্রকাশনার আন্তর্জাতিকীকরণ’, ‘প্রকাশনায় নারী’ ও ‘প্রকাশনার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা’। এতে বিদেশী প্রকাশকদের মধ্যে অংশ নেনÑ ভারতের মন্দিরা সেন ও ইমানুল হক, শ্রীলঙ্কার দীনেশ কুলাতাঙ্গা এবং নেপালের লিখাত পান্ডে। তিন সেশনের সভাপতিত্ব করেন কবি নুরুল হুদা, অধ্যাপক নিয়াজ জামান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।
×