ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সের মূল নকশার কপি আসছে বাংলাদেশে

প্রকাশিত: ০০:২৮, ২৬ জুন ২০১৬

জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সের মূল নকশার কপি আসছে বাংলাদেশে

সংসদ রিপোর্টার ॥ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও স্থপতি লুই কানের অমর স্থাপনা জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সের মূল নকশার কপি আসছে বাংলাদেশে। সংসদ ভবন ও তার আশপাশের এলাকার সকল নকশা আনতে ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ার আর্কিটেকচারাল আর্কাইভ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। নকশার কপিগুলো ইতোমধ্যে প্রিন্টিংও শুরু হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যেই জাতীয় সংসদ ভবন ও তার আশেপাশের এলাকার সকল নকশার কপি হাতে পাবে বাংলাদেশ। সরকারের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চূক্তিটি সম্পাদিত হয়। নকশা যাচাই-বাছাইসহ আনুসঙ্গিক বিষয়ে দুই সপ্তাহের বেশি সময় আর্কাইভ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করে প্রতিনিধি দলটি নকশাগুলো সনাক্ত করে দেশে ফিরে এসেছেন। ফলে নকশাগুলো আনা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। দুই মাস পরেই আসছে দেশে আসছে নকশাগুলো। আর নকশা হাতে পেলেই অপ্রয়োজনীয় সকল স্থাপনা অপসারণে পদক্ষেপ নেবে সংসদ সচিবালয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে রবিবার প্রতিনিধি দলের প্রধান জাতীয় সংসদের অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়া সাংবাদিকদের জানান, আমরা নকশাগুলো দেখে এসেছি। ঠিক করে দিয়ে এসেছি। ইতোমধ্যে প্রিন্টিং শুরু হয়ে গেছে। নকশাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে, এখন তা আনতে আর সমস্যা নেই। দ্রুতই সব নকশা আনা সম্ভব হবে। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা বলছেন, নকশার কপি হাতে পেতে আরও দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে। গত ৬ জুন লুই আই কানের নকশা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যান ৫ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে ছিলেন- জাতীয় সংসদের অতিরিক্ত সচিব (আইপিএ) আ ই ম গোলাম কিবরিয়া, স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন শাখা-৯, অধিশাখা) মো. মনিরুজ্জামান, গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব এবং স্থাপত্য অধিদফতরের সহকারি স্থপতি সাইকা বিনতে আলম। প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৬ জুন সকালে দেশে ফিরে এসেছেন। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা পেন্সিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে নকশাগুলো সনাক্ত করেছেন। সনাক্তকৃত নকশাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভ বিভাগ থেকে প্রিন্টিং শুরু হয়ে গেছে। এখন একটি প্রতিনিধি দল কিংবা সরকারের যে কেউ গেলেই নকশাগুলো আনা সম্ভব হবে। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পেন্সিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কাইভে ৮ হাজার নকশা রয়েছে বলে বাংলাদেশের স্থাপত্য অধিদফতরকে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে ৮৫৩টি নকশার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। লুই আই কানের প্রতি নকশার জন্য খরচ হচ্ছে ১৯ ডলার। জাতীয় সংসদ ভবনের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনি নির্মাণ নিয়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে সংসদ ভবনের স্থপতি লুই আই কানের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংসদ ভবনের মূল নকশা আনার নির্দেশ দেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর লুই কানের প্রতিষ্ঠান ডেভিড এ্যান্ড উইজডম এর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে স্থাপত্য অধিদফতর। লুই কানের নকশাগুলো পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কিটেকচারাল আর্কাইভে থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে সেখানেও যোগাযোগ করা হয়। ইতোমধ্যে সংসদ ভবনের অঙ্কিত বর্ণনামূলক তালিকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আসে। সংসদ এলাকায় নকশা বহির্ভূত হিসেবে ইতোমধ্যেই কয়েকটি ভবন নির্মাণ এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরকে মাজারে পরিণত করাসহ বেশ ক’জন রাজনীতিকের কবর রয়েছে। গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেও সংসদ এলাকায় মূল নকশার বাইরে স্পীকার- ডেপুটি স্পীকারের জন্য বাসভবন বানানো হয়। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তখন ভবন দুটি তৈরি হয়। এ সংক্রান্ত একটি মামলা এখনো বিচারাধীন। এখন সেগুলোর ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা মুল নকশা দেশে আসার পরেই সিদ্ধান্ত হবে। উল্লেখ্য, ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের আমলে বর্তমান সংসদ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সে সময় স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে এই ভবনের স্থপতি নিয়োগ করা হয়। তাঁর প্রস্তাবেই লুই আই কান এই প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
×